JustPaste.it

---সমকালীন প্রসংগ--- 

=============================

প্লেগঃ সীমালংঘনকারী ব্যক্তি দেশ ও জাতির প্রতি আল্লাহর অভিশাপ
প্রিন্সিপাল এ, এফ, সাইয়েদ আহমদ খালেদ

---------------------------------------------------------


 মানুষ যখন তার স্বীয় কর্মের বাহাদুরীতে অসংগত কথামালার আবেগ প্রকাশে এবং নির্লজ্জ ক্ষয়িষ্ণু শক্তির দম্ভে ‘আল্লাহ্ নেই' অথবা তার সমকক্ষতা দাবী করে বসেছে-কেমন তাঁর রং তা জানার ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছে,তখনই মহাবিশ্বের একমাত্র সত্য মালিক আল্লাহর তীব্র আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে অত্যন্ত নির্মম ভাবে পৃথিবীর অপরিণামদর্শী বহু অবাধ্য জাতির ও শাসকগােষ্ঠির প্রতি। এর ফলে সুন্দর ধরনীর নানা জাতি বা সম্প্রদায় যুগে যুগে হয় আংশিক, নয় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছে, অভিশপ্ত জনপদ বিরাণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে বেপরােয়া ও উন্নাসিক মানব জীবনে দেখা দিয়েছে অকল্পনীয় অশান্তি। খােদাদ্রোহী বিভ্রান্ত বিবেক দ্বারা পরিচালিত বিশ্ব-সমাজ দেহে পচন ধরেছে তখনই। তাদের অভিশাপ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হয়নি কোন কালেই। তা হলে কিসের দম্ভ, কিসের বড়াই-তৌহিদবাদী কর্ম ও নিশানা সমূহের উপর অন্যায় হস্তক্ষেপ করার দুঃসাহস?
 একটি দেশ ও ব্যক্তির থেকে জাতির অবস্থান কোথায় তা সহজেই প্রতিভাত হয়ে উঠে তার কর্মে এবং পুরস্কার ও তিরস্কার সে প্রেক্ষিতেই ঘটে; বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। যে কোন রাষ্ট্রের শাসকগােষ্ঠির বৈষম্য মূলক আচরণ, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, বর্ণবিদ্বেষী মনােভাব, নাগরিক অধিকার হরণ ও ঘােলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টির দ্বারা প্রতিহিংসার আলােকে এবং আগ্রাসী মনােভাবে সম্প্রদায় বিশেষকে দেশ ত্যাগে বাধ্যকরন, সাম্যের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করা ইত্যাদি নানারকম অমানবিক ও একচোখা নীতির কারণে শাসিত জনজীবনে দেখা দিয়েছে চরম দুর্গতি- খােদায়ী অভিশাপ ও মহামারী আকারে বিভিন্ন রােগের মারাত্মক ছােবল । তথাপি বিশ্বের সকল শাসক শ্রেনীর এবং মতাদর্শের দলীয় নেতা-নেত্রীদের শিক্ষা হয় কি? হয়কি ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিক বুঝ? স্পর্ধার দাপটে সব কিছুর সমাধান করা যায় না, পারে নি কেউ কোন কালে। সর্বকালেই দাম্ভিক ও অহংবােধ আচরণের ধারকরা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বড় করুণ অবস্থায়। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে কি?
  ইহ-পরকালের চরম ধিকৃত আবু লাহাব ওরফে আব্দুল ওজ্জাও করেছিল  জ্ঞানগরিমা , অর্থ-সম্পদ এবং নেতৃত্বের উদ্ভট ও নগ্ন বড়াই; রেহাই পেয়েছিল কি অদৃশ্য শাস্তির হাত থেকে? ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের,-যারাই আবু লাহাবী জ্ঞান-বিবেক ও কর্মের পরিচয় দান করেছে, পৃথিবীতে তারাই ভয়ংকররূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ঝরে গেছে তারা নিদারুন অসহায়ভাবে। আল্লাহর প্রিয় হাবিবের প্রতি সীমাহীন বেয়াদবী প্রদর্শনের নিমিত্ত মক্কার উদ্ধত কোরাইশ নেতা আবু লাহাবকে অত্যন্ত বেদনাবহ ও নির্মম শাস্তি পেতে হয়েছিল। এই অহংকারী ইসলাম বৈরী দুরাত্মা কোরাইশ নেতাকে যন্ত্রণাদায়ক ও দুর্গন্ধময় ‘প্লেগের ফোঁড়ায় আক্রান্ত হয়ে, আপনজনদের লাঠির খোঁচায় পুরস্কৃত হয়ে নির্জন প্রান্তরে নীত ও অবস্থান গ্রহণ এবং যত্ন-সেবা বিমুখ অবস্থায় অবজ্ঞা ভরে একাকী মরণ বরণ করতে হয়েছিল। এ করুণ এবং তৎপূর্ব সর্ব যুগের খােদায়ী বিধি-বিধানের অবমাননা ও অমানবিক নৃশংস কর্মকান্ডের আরাে করুণ পরিণতি সম্পর্কে জানতে হলে, জ্ঞান-বিবেকের সঠিক উৎস ও নির্ভুল আলােক ধারার পূর্ণ বিকিরণ, উভয় জগতের কল্যাণবহ মহাসম্পদ আল-কোরআনের শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। সৃষ্টির আবর্তন ও বিবর্তনে স্রষ্টার আদেশ লঙ্ঘন ও পালনের ফলে পর্যায়ক্রমিক কল্যাণ ও অকল্যাণ যা ঘটেছে এবং হওয়া বা ঘটার প্রতিশ্রুতি রয়েছে, সে সব সম্পর্কে সম্যক ও সবিস্তার জ্ঞাত হওয়া একমাত্র ইসলামী ব্যবস্থাপত্র আল কোরআনের পাতায় চোখ বুলানাের দ্বারাই সম্ভব। চিৎকার করে লাভ নেই; মানব রচিত কোন কিছুই সঠিক সন্ধান দানে পারঙ্গম নয়।
 ভারতের বুকে প্লেগ দেখা দিয়েছে; সারা দেশে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। গুজরাট অঞ্চলে প্লেগের শিকারে পতিত হয়ে প্রচুর লােক মারা গেছে, এর ঝাপটা লেগেছে সংশ্লিষ্ট দেশের অভ্যন্তরে অন্যান্য স্থানেও। রােগাক্রান্ত ব্যক্তিদের সেবা-যত্নে দেখা দিয়েছে ভয়াবহতা; স্বজনদের পলায়নপর মনােভাব বিশ্ব-সাহায্যের হাত ও সহানুভূতির হৃদয় সংকুচিত। এই অভিশাপজনিত ভয়ংকর সংক্রামক ব্যধির নিরাময়কল্পে মানবিক সাহায্য তৎপরতার কোন বাস্তব ঘন্টা ধ্বনি কেউ-ই বাজাতে সাহস পাচ্ছে না বা পায় নি। সব কোণ থেকেই কি যেন একটা দূরছাই মনােভাব। কখন, কোথায় এবং কোন কারণে প্লেগের প্রাদুর্ভাব ঘটে, তার সবিস্তার আলােকপাতে অগ্রসর না হয়ে আলােচ্য নিবন্ধে কেবলমাত্র সদ্য প্লেগাক্রান্ত ভারত সম্পর্কে কিছু বলার প্রয়ােজন বােধ করছি। সংশয়হীন বিতর্কের ঊর্ধ্বে  দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যায়, প্লেগ আল্লাহর গজব এবং সকল কর্মে সীমা অতিক্রমকারী দেশ, জাতি ও ব্যক্তির ভাগ্যেই এটা পরিদৃষ্ট হয়? এ দৃষ্টিকোন থেকেই বলতে চাই,নব্যভারত গােটা বিশ্বের বুকে সীমালংঘনকারী অন্যায় ও অকল্যাণের অন্যতম প্রধান রূপে একটি চিহ্নিত দেশ। একের পর এক মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয় অনুভূতিতে বেপরােয়া আঘাত, মসজিদ অপবিত্রকরণ ও ধ্বংস সাধন, সংখ্যালঘু সংঘাত ও অহেতুক নরহত্যা সংঘটন, ইজ্জত ও সম্ভ্রমের হৃদয় বিদারক অবমাননা ইত্যাকার বিবেক বর্জিত সমস্ত কর্মকান্ডই ভারতকে খােদায়ী গজবের ভারে বিহ্বল করে তুলেছে। সকল অত্যাচারিত দুর্বলের আর্তনাদ ও ক্ষতিগ্রস্ত বাবরী মসজিদের পবিত্র ইটের ক্রন্দন ভূমিকম্প ও প্লেগে পরিণত হয়ে ভারতবর্ষের যথাযথস্থানে আঘাত হানতে শুরু করেছে। প্লেগ মারাত্মক পচনজনিত, ঘৃণিত ও অপ্রতিরােধ্য রােগ তাে বটেই, তবে দূর অতীতে খােদাদ্রোহী বহুত্ববাদের উপাসক আল্লাহর অভিশপ্ত আবু লাহাবের কেন এ রােগ দেখা দিয়েছিল,তারই উত্তরসুরী ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারতকেও বেহুশের ঘাের কাটিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে, কোন্ পাপের কারণে প্লেগের আকারে গজব নিপতিত “এই ভারতের মহামানবের সাগর তীরে" আবার। যথা ধর্ম, তথা জয়’- এ পরম সত্য বাণীর পূর্ণ অবর্তমানটাই নয় কি সংশ্লিষ্ট  রাষ্ট্রের নরাধম মানুষের পৈশাচিক কর্মের পুরস্কার স্বরূপ তাদের সর্বাঙ্গে পচনরূপী নির্ঘাত মৃত্যুর চিহ্ন প্লেগের ফোঁড়ার সমাহার? এমন যাতনাময় ভয়াল শাস্তি কেন এবং কার তরফ থেকে আসে-কাদের প্রতি,এ উপলব্ধির বিবেক উন্মােচিত হবে না কি? সামগ্রীকভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী গুন্ডাদের দ্বারা লােমহর্ষক দৃশ্যাবলী সৃষ্টিতে নির্বাক দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ শক্তিশালী শাসকচক্রের ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা এবং উগ্রবাদী সংগঠন সমূহের উস্কানীর পরিণতি এই আপতিত গজবেও ভারত সরকারের চৈতন্য উদয় হবে না? আদ, সামুদ ও ফেরাউন-নমরূদের ন্যায় বিশ্বের বহুজাতি ও গর্বিত নরপতির স্পর্ধা সমুলে খতমকারী মহাশক্তিধর আল্লাহর হাতে প্লেগ ও ভূমিকম্প অপেক্ষা আরও বহু অকল্পনীয় শাস্তি রয়েছে। ভারতকে অচিরেই সাবধান হতে হবে-হতে হবে দুনিয়ার সকল দাম্ভিক জাতিকে। তিনি রহমান ও রহিম-ই নন-তিনি কাহ্হারও বটে।
 চিরঞ্জীব আল্লাহ; তিনি রব, তিনিই বিধান দাতা ও পালনকর্তা। স্বপ্নে ঘেরা সমস্ত রঙ্গীন আশার বাস্তবায়ন ও শেষ রক্ষা করা একক সত্ত্বার বিরােধিতা করে তুচ্ছ দুনিয়ার দুর্বল মানুষের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। ইসলাম অতুলনীয় একত্ববাদী ধর্ম, এর ব্যাপ্তি বিশ্বময়। এ মহাসত্যের জয়গান ঘােষণায় মুসলমানগণ বৈষম্যহীন চিত্তে সবাই সমবেত হয় প্রতিদিন ও বিশেষ বিশেষ মুহুর্তে মসজিদ নামক পবিত্র ঘর বা আবেষ্টনির ভিতর। তাই পবিত্রতা ও মর্যাদার দিক দিয়ে জগতের সকল মসজিদ ও তার চত্বর সমূহের গুরুত্ব খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। বাবরী মসজিদ এ ধারনার বাইরে নয়। এর অবমাননায় এবং বিলুপ্তির নেশায় মাতালদের শায়েস্তায় বিশ্ব-মুসলিম স্বভাবতই জিহাদী চেতনায় উদ্ধুদ্ধ  হৰে এটা ঈমানী দায়িত্ব। এ দায়িত্বে ফাটল সৃষ্টি হলে কোন কারণে মহাশক্তির মহান কুদরতী ইঙ্গিতে, শুধু মসজিদই নয়, ইসলামের অবমাননাকারীদের উপর অৱক্ষনীয় বিপদ, মহামারী ইত্যাদি পতিত হয়। প্লেগ এরই রূপ।
 মসজিদের সীমানায় রাম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জিঘাংসায় উদ্বেলিত মধ্যযুগের দস্যু-বৃত্তিমনা নেতার অনুসারী ক্রুসেডী খেয়াল-প্রসূত মহারাষ্ট্রীয় খােদাদ্রোহীদের সাথে একাত্বতা ঘােষণার বাসনায় এবং নন্দন কাননে বসবাস লাভের সার্টিফিকেট সংগ্রহের অভিপ্রায়ে ভারতবর্ষের অন্তর্গত সুরাট ও আশপাশের জনগণ মুসলিমপ্রাণ-সদৃশ্য ইসলামের পবিত্র নিশানা বাবরী মসজিদ ধ্বংসের দুঃসাহসিক অভিযানে শরীক হয়েছিল। হায় রে বর্বরতা! হায় রে দুর্মতি!! কি সে আঘাত !! শেষ পর্যন্ত মসজিদ ভেঙ্গেছে এবং মসজিদের অব্যক্ত বেদনা খােদার আরশ নিশ্চয় কাঁপিয়ে তুলেছিল। প্রথম দল অচিরেই ভাঙ্গার পারিশ্রমিক পেয়ে গেছে। গুজরাটী বা মারাঠী দলের পারিশ্রমিক গ্রহণের পালা শুরু হয়ে গেছে। হ্যাঁ, ভারতের অসহায় সংখ্যালঘু মুসলমান আল্লাহর ঘরের এতবড় ক্ষতি সাধনে সরকার ও সরকারী কর্মচারীদের পরােক্ষ এবং ক্ষেত্র বিশেষে প্রত্যক্ষ মদদ দানের ভূমিকা ও প্রতিকারে রাষ্ট্র সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ছল ছল চক্ষে এবং ব্যথাভরা হৃদয়ে অবলােকন করেছে মাত্র। দুর্বলের ধর্মই পালন করেছে সে দেশের মুসলমানগণ। সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ কি দুর্বল?
 আল্লাহ ধৈর্যশীল ঠিকই; কিন্তু সরকারের প্রশ্রয়পুট বহুত্ববাদের উপাসক সুরাটী বাহাদুরদের সীমা অতিক্রম, বাড়াবাড়ি ও নৃসংশতা মহাবিশ্বের একমাত্র মালিক আল্লাহ আর যেন বরদাশত করতে চাইলেন না। রুদ্রের ভূমিকায় জালিমদেরও উপযুক্ত প্রাপ্য দিতে শুরু করলেন বা করেন। তাঁর কাহ্হার নামের দৃষ্টান্ত স্থাপনের নজীর হিসাবে অপরিণামদর্শী গুজরাটী বা সুরাটী জনগণের মধ্যে তাই নির্ঘাত মৃত্যু-প্লেগের ভয়ার্ত আক্রমণ ঘটিয়েছেন। অস্বাভাবিক যন্ত্রণাদায়ক প্লেগের - ফোঁড়া হয়েছে আক্রান্ত ব্যক্তিদের, প্রাথমিক পর্যায়ে কণ্ঠমালা (আবু লাহাবী চিহ্ন)-দেখতে দেখতে সর্বাঙ্গে কথিত রােগের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে এবং পড়ে এই সংক্রামক ব্যধির ভয়ে অনাক্রান্ত অতি আপনজনরা সেবার বদলে পালাতে শুরু করেছে। দুর্গন্ধময় পচন শুরু হয়েছে এবং এটাই অভিশাপের লক্ষণ। মরছে অনেক-মৃত্যুর প্রহর গুনছে আরাে কত শত। সত্যিই রামের ভক্তদের প্রতি দেবতা রামের কি পরিহাস! এটা কি সত্যিই রােগ না ভারতীয় সুজনদের যুগ সঞ্চিত সমস্ত অপকর্মের ফল? চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশ্লেষণ কি বলে সেটা শােনার প্রয়ােজন নেই; গভীর দুরদর্শী চিন্তার আলােকেই, সংশয়হীনভাবে বলা যায়, এটা ব্যধির আকারে আল্লাহর অভিশাপ-কৃত কর্মের অপ্রতিরােধ্য শাস্তি। এরূপ দুঃখজনক পরিণতির জন্য দায়ী নির্বাক ধরনীর ন্যায় ধর্ম ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি উগ্রবাদী হিন্দুদের লােমহর্ষক ও হৃদয় বিদারক আঘাত ও ক্ষতি সাধনে ভারতীয় প্রশাসন যন্ত্রের পক্ষপাত মূলক নীরবতা পালন।
  বেদনাপ্লুত স্বরে বলতে হয়, আল্লাহর খাস চিহ্নিত একটি অভিশপ্ত জাতি ইসলামের কট্টর দুশমন ইহুদীরাও প্যালেস্টাইনের আল-আকসা মসজিদ ধ্বংসের বা তার পবিত্র ঘরে সামান্যতমও দাগ বসানাের দুঃসাহস এখনও পর্যন্ত দেখায় নি—ইচ্ছা করলে হয়তাে তারা করতে পারে। ইসলাম বৈরী ভারত তােমার এত প্রতিহিংসা, তােমার প্রবঞ্চনা ও প্রতারণা মূলক কুৎসিত কর্মধারা অতীতেও তােমাকে এ মহামারীর কবলে নিপতিত করেছিল- করেছিল অভিশাপগ্রস্ত বহু জনপদ, তথাপি শিক্ষা হয় না? শয়তানী খেয়াল পরিহার করে সুবুদ্ধির উদয় ঘটিয়ে সুজন হওয়া যায় না? মসজিদ ও মুসলিম জাতি এবং ইসলামী চেতনা তােমার কাছে এত গাত্রদাহের কারণ কেন? এ জাতির উদারতা, হাতের মুঠায় পেয়েও শত্রুর প্রতি ক্ষমার নজীর, আশ্রিতের প্রতি মমত্ববােধ প্রদর্শন ইত্যাদি মানবিক গুণাবলী এবং ইসলামের অন্যতম প্রধান আদর্শ সহিষ্ণুতা ছড়িয়ে আছে বিশ্বময়। চোখ মেলে দেখ। বৌদ্ধ-নীপিড়নের ইতিহাস সৃষ্টি করেছ, ভারতবর্ষ ত্যাগে বাধ্য করেই; কুখ্যাতির ইতিহাস সৃষ্টি করেছে তােমার পূর্বসূরীরা। নব্য ভারত! তুমি লেগেছ মুসলিম দমন ও বিতাড়নের প্রক্রিয়া হিসাবে মসজিদ ধ্বংসে ? মনে করেছ, শার্দুলের জাত দৌড়ে পালাবে? সে ধারণা মিছে। পূর্ব যুগীয় ভারতের ন্যায়, সুখ্যাতির নয়- কু-খ্যাতির ইতিহাস প্রনয়ণই তোমার দ্বারা সম্ভব হবে।
  আল্লাহর মনােনীত ধর্ম ইসলাম।  এর অনুসারীগণ মুসলমান নামে অভিহিত। দেড় হাজার বছর ধরে চেষ্টায় পৌত্তলিক, ক্রুশ ইত্যাদি শক্রতা ইসলাম ও মুসলমানদের অবলুপ্তি ঘটাতে পেরেছে? অহেতুক উত্যক্ত ও বাড়াবাড়ি এবং অবিমৃশ্যকারিতার পরিণতি দেখেছ ভারতের রাষ্ট্রনায়কগণ? আবু জাহেলের উত্তরসূরী নব্য ভারত! তােমার প্রভুসম রাশিয়া-আমেরিকা-বৃটেন; এদের শত বড়াই কত অসম্মানজনকভাবে ভুলুণ্ঠিত হচ্ছে বিশ্বের অতি ক্ষুদ্রদের কাছে? জাহেলী যুগের হিন্দা রমণীর ন্যায় হিংসাপরায়ন ধর্ম-শত্রুদের সারা অঙ্গে এবং জনপদে বিভীষিকাময় অভিশাপের দাগ পড়েছে ও পড়তে শুরু হয়েছে, এ কোন প্রভুর দান? যদি বল, এমন দুর্গতি প্রাকৃতিক নিয়মের প্রতিফলন, তাহলে বলব, প্রকৃতির নিয়ন্ত্রক নিরাকার প্রভু, না সাকার তেত্রিশ কোটী দেবতা এবং  নিয়মের লাগাম কার হাতে? তাকে কি পারমানবিক অন্ত্রের তেজোস্ক্রিয়তা দ্বারা প্রতিহত করা যায় না? তা প্লেগের মােকাবেলায় ব্যবহার করলে ক্ষতি কি? হে দুর্মতির ধারক,নিন্দিত হিন্দুস্তান! হে নির্বোধ, একত্ববাদ বিদ্রোহী ও অস্বীকারকারী ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারত! সংযত বিবেকের পরিচয় দানে শুধু প্লেগই নয়, সত্য-বিধি প্রদত্ত নানা রকম শাস্তির হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার সুপথ ধর, হয়তাে মুক্তি আসবে। জোয়ার যেখানে প্রবাহমান, ভাটার টান সেখানে অবশ্যম্ভাবী-এমন বাস্তবকে অস্বীকার করা মানেই জাতীয় জীবনে দুর্ভোগ দুর্গতি ডেকে আনা হয়। সৎকর্ম, উদ্দেশ্য ও উপলব্ধি, মুছিবৎ নিরসনের এবং আল্লাহর করুণালাভের একমাত্র উপায়-এর বিকল্প চিন্তা ধারায় কেবল প্লেগ নয়, আরো অপূরণীয় ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দেওয়া বিচিত্র কিছু নয়।
 মানুষ যখন পাপের পথ ধরে-ধর্মীয় মূল্যবােধের তােয়াক্কা করে না, শুনতে চায় না কোন সঠিক উপদেশ, এবং নির্লজ্জতার শেষ ধাপে পৌঁছে যায়, তখনই চিরন্তন শক্তি আল্লাহর গজব নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, মহামারী রৌদ্র বা খরার তীব্রতা, বন্যার ভয়াবহতা, অতি বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি,ভূমিকম্প, প্রলয়, ঘুর্নিঝড় ইত্যাদির মাধ্যমে।অত্যাচার, অবিচার ও পাপের প্রবণতা যে দেশ ও জাতির মধ্যে যখনই প্রবল হয়েছে, তখনই এগুলির যে কোনটি নিদারুন মুছিবত আকারে দেখা দিয়েছে; সকল যুগের বড়াই চিকিৎসা বিজ্ঞান ও অর্থ-সম্পদ এ জাতীয় অভিশাপের গতি রােধে ব্যর্থ হয়েছে। আল কোরআন নির্ভুল তথ্যে ভরা জগত কল্যাণের মহাসম্পদ, কুৎসিত-গরল ও গর্হিত কর্মের পরিণতিও এতে বিধৃত। বৈচিত্রময় ও অশান্ত অতীতের ঘটনা বহুল দৃষ্টান্ত অতি চমৎকারভাবে কোরআন মাজিদে সন্নিবেশিত হয়েছে। সর্তকতা ও সাবধানতার দিকনির্দেশনা হিসাবে অবতীর্ণ এই কিতাব সমস্যা, মুছিবত, রােগের আক্রমণ রােধে ও নিরাময়ে এবং মানব জীবনে সমুহ অমঙ্গল ও বিপদ ত্রাণের সর্বোৎকৃষ্ট উৎস, সাবধানীদের জ্ঞান আহরণের সর্বোত্তম ও প্রজ্জ্বল ভান্ডার। আধুনিক যুগের বর্বরীয় চেতনায় উজ্জীবিত ভারতবর্ষ এবং এমন সব দেশ ও জাতিসমুহের এই ঐশী গ্রন্থের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিৎ এবং সেই পরিপূরক শিক্ষার আলােকে সাবধান হয়ে চললেই বর্তমান ও ভবিষ্যত জীবন ও পৃথিবী মঙ্গলময় হয়ে উঠবে। কারাে ধর্মেই আঘাত হানার স্পৃহা আর থাকবে না- অভিশাপও বর্ষিত হবে না। প্লেগ এমনই একটি ঘৃণিত অভিশাপ বা শাস্তি যার সম্পর্কে পাক কোরআনে উল্লেখ রয়েছে। সুরা ফিলের মাধ্যমে আল্লাহর প্রেরীত আবাবিল পাখির ঘটনা কম বেশী সবার জানা আছে বৈ কি। কিন্তু এর সঙ্গে আর একটি অতি বাস্তব বেদনাবহ বিশেষ ঘটনা যে বিজড়িত রয়েছে, সে বিষয় সচরাচর উপমায় ও উদাহরণে তেমন প্রতিভাত হয় না বলেই সম্ভবতঃ অশালীন, বেশরিয়তী ও খােদাদ্রোহী কথাবার্তা ও কর্মকান্ডের অনুশােচনায় আমাদের খেয়াল কম-ধরা পড়লে "দোয়ায়ে খাজেগান" পড়ার হিড়িক পড়ে যায়। অন্ততঃপক্ষে বে-খেয়ালী মুসলমানদের এরূপ অবস্থা বেশ পরিদৃষ্ট হয়। যাহােক ইসলামী ঐতিহ্য ও মুসলিম বিনাসে চন্ডালী নীতির তান্ডব সৃষ্টিকারী উপমহাদেশের ভারতীয় জ্ঞান-পাপীদের উদ্দেশ্যে সুরা ফিলের নেপথ্য ঘটনাটি অতিসংক্ষিপ্তাকারে এ প্রবন্ধে বর্ণনা করছি। যদি সুবুদ্ধির উদয়ে নৃশংসতা বন্ধ ও তিরােহিত হয়-ভারতের জনগণ ও শাসক চক্রের ঐশীভীতি পয়দা হয় এই আশায়। হ্যাঁ, জগতের মুসলিম জ্ঞান-বিদগ্ধ পন্ডিতগণ এবং ঈমানদার গবেষক ও তফসিরকারকগন অনেকে জানেন, যে সম্পর্কে বলছি তাও জানেন সুতরাং আমার বর্ণনার ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখে উদ্দেশ্য ও ইঙ্গিতের দিকে লক্ষ্য করার জন্যই আবেদন রাখছি।
 ইয়ামেনের খােদাদ্রোহী উদ্ধত বাদশাহ আবরাহার আদেশে তার সুসজ্জিত হস্তী বাহিনী (৪০ হাজার সৈন্য) আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবা ধ্বংসের অভিপ্রায়ে রওয়ানা হয়ে মক্কার মুজদালেফার একটি অংশে শিবির স্থাপন করে। স্থানটি ছিল কাবা গৃহ থেকে প্রায় ছয় মাইল দূরে।কাবা ধ্বংসে অভিযানী বাহিনীর মধ্যে দ্বিমত দেখা দেয়। অগ্রগামী বাহিনীর ইচ্ছা, সরাসরি কাবা বায়তুল্লাহ চত্বরে যেয়ে উদ্দেশ্য সাধন করবে এবং পশ্চাদ বাহিনী মুজদালেফার ছাউনী হতে, তৎকালীন সামরিক বিধি-ব্যবস্থা মােতাবেক কর্ম সম্পাদনের পক্ষপাতী। যা হােক, সর্ব নিয়ন্তা ও সমস্ত কিছু অবলােকনকারী আল্লাহ্ সীমার বাইরে এহেন স্পর্ধা ও বাড়াবাড়ী আর সহ্য করা মূহুর্তের জন্য পছন্দ করলেন না। পাঠিয়ে ছিলেন আবরাহার বাহিনীর মােকাবেলায় ক্ষুদ্র আবাবীল পাখি যার ঠোঁটে ও দু'পায়ে দু'টি, মােট তিনটি বােমা অপেক্ষা তেজোষ্ক্রিয় শক্তির কংকর' সংযােজন ছিল। অগ্রগামী বাহিনীর প্রতি কুদরতী ইঙ্গিতে আবাবিল পাখি যথাযথ কংকর নিক্ষেপের ফলে হাতী সহ সকল সৈন্য গযবী মৃত্যুর অভিশপ্ত পেয়ালা পান করে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। পক্ষান্তরে, পশ্চাদভাগের সমর সদস্যগণ পবিত্র ঘরের আঙ্গিনায় যেয়ে কিছু করার পক্ষপাতী ছিল না বিধায় এবং এতটুকু মর্যাদা দানের ফলে, অসীম রহমানুর রহিম তাৎক্ষণিকভাবে তাদের ধ্বংস করলেন না। কেননা যার কর্ম যে রূপ, তার পুরস্কার আল্লাহ তদ্রুপই দেন! রাজা বাদশাহ নয়, তিনিই ন্যায় বিচারক । যাহােক, উদ্দেশ্যের বাস্তবায়ন ঘটে কর্মে। তাই ইচ্ছা ও কর্ম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। কর্ম সম্পাদনে কৃতকার্য না হলেও বা ভুল বুঝে সরে গেলেও, উদ্দেশ্য বা ইচ্ছার গুরত্বটাকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। কুখ্যাত আবরাহার প্রেরীত পশ্চাত বাহিনী তাৎক্ষনিক ভাবে কর্তব্য সম্পাদনে বিবেক প্রসুত যাই করুক কেন, আল্লাহর ঘরের অস্তিত্ব বিলােপে ইয়েমেন থেকে তাে রওয়ানা হয়ে এসেছে এবং এটাই উদ্দেশ্য। এরূপ চরম ধৃষ্টতা রব্বুল ইজ্জত বরদাশত করেন নি। উদ্দেশ্যের বা ইচ্ছার পাওনা এ পক্ষকে নিতে হয়েছে। আর সে পাওনার মূল্যায়ন ছিল অতি করুণ। আলােচ্য পক্ষের সকল সৈন্যের ভাগ্যে নিরাকার শক্তির নির্মম শাস্তির মারাত্মক ছাপ অচিরেই প্রতিভাত হলাে। সকলেই চলত শক্তি রহিত তীব্র সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হলাে;কয়েকদিনের মধ্যে তাদের কন্ঠে যন্ত্রণাদায়ক প্লেগের ফোঁড়ার প্রকাশ ঘটে, সঙ্গে সঙ্গে সারা অঙ্গে। আর্তনাদ ও আহাজারীর মধ্যে সাহায্য বিহীন অতি অবজ্ঞাত অবস্থায়, দুর্গন্ধময়, অভিশাপী প্লেগে আক্রান্ত সবাইকে খােদায়ী অভিশাপের বােঝা মাথায় করে নিকৃষ্ট শয্যার আশায়, ক্ষণস্থায়ী মায়াময় দুনিয়ার সকল বন্ধন ছিন্ন করে অসহায় বেশে চলে যেতে হলাে। একটি প্রাণীও ফিরে যেতে পারে নি । মরুর লু হাওয়া প্লেগের আক্রমণজনিত পচনে দুর্গন্ধময় হয়ে গিয়েছিল । কোন শক্তি ইয়েমেনী গর্বের নির্মূল সাধন করেছিল সেদিন, আজকের ভারত তথা দুনিয়ার দাম্ভিক নরপতিকুলের ক্ষণেক তরেও সেকথা ভাববার ফুরসত হয় না কি? প্লেগ কি এবং কাদের প্রতি কেন নাজিল হয় এ বাস্তব ঘটনার আলােকে পারমাণবিক অস্ত্র ধারী হস্তী-মুখ-যুদ্ধংদেহী পন্ডিতগণ মাথা ঘামান কি? বাবরী মসজিদ কার ঘর? এটা কি কাবার প্রতিচ্ছবি মুসলমানদের পবিত্র উপাসনালয় নয়? আবরাহার ভক্তদের ন্যায়, নরসীমা রাও-ভক্ত গুজরাটী বা সুরাটীদের ভাগ্যে প্লেগ-আক্রমণ জনিত ব্যথা বিধুর পরিণতি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু কি? হ্যাঁ, মুজদালেফার যে অংশে অপরিণামদর্শী আবরাহার সৈন্যগণ অবস্থান গ্রহণ করে উল্লেখিত শাস্তির কবলে পতিত হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল, অনন্তকালের জন্য সেই অংশ বা স্থানটুকু খােদাদ্রোহী পাপীদের শয্যা স্থান হিসাবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। পূন্য পথের পথিক বা হাজী-সাহেবগণ ঘৃণাভরে এড়িয়ে চলেন এই অভিশপ্ত জায়গাটুকু । পরিচ্ছন্ন চিন্তায় দৃঢ়ভাবেই বলা যায়, প্লেগ রােগ নয়-রােগের আকারে চিরঞ্জীব আল্লাহর নাফরমানীর অভিশাপ? যুগে যুগে অবাধ্যদের প্রতি প্লেগসহ আরাে গজব নিপতিত হবে। পরিত্রাণের উপায় উপরে বর্ণিত হয়েছে। প্রতিকারে হিন্দুত্ববাদী ভারতবর্ষকে মুসলিম নিধন, মসজিদ সমূহের বিনাস সাধন হরিজন—এক কথায় দুর্বল উৎপীড়নের পরিকল্পনা ত্যাগ করতে হবে, অন্যপক্ষে ক্ষতিপূরণ ও ক্ষমা ভিক্ষা দ্বারা হয়তাে করুণাময়ের করুণা লাভ করা যেতে পারে। অন্যথায়, সুরাটী প্লেগের ব্যাপ্তি ঘটতে পারে সমগ্র ভারতে-এদের পাপের বােঝা নির্দোষদেরও বইতে হবে। অন্যায়, অবিচার এবং দুষ্কর্মের উগ্র প্রবণতা, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ইত্যাদি..........
(বাকি পৃষ্ঠা নেই)   ✔✔✔✔১৫ নং পৃষ্ঠার টেক্সটঃ 
---------------------------★ 
প্রভাবে প্রতিটি মিথ্যা-কুসংস্কারের পূজারী জাতির নিকট এমনি একটা করে সংকেত পৌঁছে গিয়েছিল, যার বিবরণ ইতিহাসের পাতায় সংরক্ষিত আছে। আগুনের মধ্যে মানুষের কল্যাণ করার কোন ক্ষমতা নেই এবং অগ্নি পূজারীরা যে মিথ্যা কুসংস্কারের বেদীতে পূজা করছে তার প্রমাণ অগ্নি নিভে যাওয়ার পরবর্তি ইতিহাস। আগুন নিভে যাওয়ার অর্থ ছিল আল্লাহর সতর্ক সংকেত, সত্য সমাগত মিথ্যা হল অপসারিত। পারসিকরা এরপরও মঙ্গলের জন্য হাজারাে অগ্নিশিখা জ্বালিয়ে পূজো করেছে। শক্তির ভিক্ষা করেছে, কিন্তু কোনটাই তারা পায় নি। জাগতিক হিসেবে বহুগুণে সামরিক ও রাজনৈতিক বলে বলিয়ান হয়েও সত্যের বার্তাবাহক মুসলমানদের সাথে টক্করে টিকে থাকতে পারেনি বরং মিথ্যাকে আঁকড়ে ধরার দরুণই ধ্বংস হয়ে গেছে তারা।
 এছাড়া ইসলামী দর্শন অনুযায়ী আল্লাহ এই বিশ্ব ভ্রহ্মান্ডের সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। তিনি সবাইকে লালন-পালন করেন, ভাল মন্দের বা কল্যাণ সাধনের ক্ষমতা তাঁরই হাতে । তার কোন সৃষ্টি অন্য কোন সৃষ্টির কল্যাণ সাধন করতে পারে না, ক্ষমতা নেই। আগুনও আল্লাহর সৃষ্টি, তার মানুষের কল্যাণ সাধন করার নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই। আল্লাহ আগুনের মধ্যে যে ক্ষমতা প্রদান করেছেন তা ব্যবহার করে মানুষ উপকার বা সাহায্য পেতে পারে মাত্র। ইসলামের এই মৌলিক বিষয়ে বিশ্বাস রাখা মুসলমান হওয়ার অন্যতম শর্ত। এর বাইরে, অর্থাৎ আল্লাহর কোন সৃষ্টি অন্য কোন সৃষ্ট জীবের কল্যাণ সাধনের নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে বলে বিশ্বাস রাখা মুসলমানিত্বের আকিদা পরিপন্থী, শিরকের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া ইসলাম একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ধর্মমত । জীবনের সকল ক্ষেত্রেই এর রয়েছে সুনির্দিষ্ট বিধান, সীমা-পরিসীমা। দৈনন্দিন কার্যাবলী-হােক, তা সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সংক্রান্ত তার বৈধতা, অবৈধতা নির্ণয়ের একটা মাপকাঠি রয়েছে। একজন মুসলমান কখনও তা লংঘন করতে পারে না। যে কাজে মানুষের কোন কল্যাণ হয় না, অর্থের অপচয় হয়, অথবা অমুসলমানদের কোন নিরর্থক ও কুসংস্কারমূলক তৎপরতার সাথে সামঞ্জস্য দেখা যায় সে ধরণের কাজ পরিহার করার জন্য মুসলমানদের প্রতি রয়েছে ইসলামের সুস্পষ্ট নির্দেশ ।
 পূর্বেই বলা হয়েছে, আগুনের নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই। তাই তা মানুষের আধ্যাত্মিক কোন শক্তি যােগাতে পারে না । জড় পদার্থ-যার কোন প্রাণ নেই, নিজের ভালমন্দের ফয়সালা করার কোন ক্ষমতা নেই তা আবার সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের চেতনার ধারক, বাহক হয় কি করে? আমরা জানি, যার প্রাণ আছে তারই চেতনা আছে। আবার ভাল মন্দের বিবেচনা করার চেতনা তাদেরই আছে আল্লাহ যাদের ক্ষমতা দিয়েছেন। সুতরাং সকল চেতনার উৎস হলেন আল্লাহ। তিনি যাকে খুশি তাকে এ ক্ষমতা দেয়ার অধিকারী। মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করে তিনিই তার মধ্যে ভাল-মন্দের পার্থক্য করার ক্ষমতা প্রদান করেছেন। এটা মানুষের নিজস্ব কোন ক্ষমতা নয় বা অন্য কোন সৃষ্টি বস্তু বা প্রাণী তাকে দান বা ধার দেয় নি। আল্লাহর এই সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে আমাদের সামনে সুস্পষ্ট ধারণা থাকার পরও যদি সৃষ্টিকে স্রষ্টার আসনে বসাই তবে তা কেমন হাস্যকর হওয়া উচিত। আসলে আমরা আধুনিকতার নামে জড়ের পেছনে এত ছােটাছুটি করছি যে, সবকিছুকে জড়বাদী জ্ঞানের নিক্তিতে ওজন করছি। জড়ের পেছনে ছুটতে গিয়ে আমাদের আধ্যাত্মিক জ্ঞানের ভাণ্ডার যে উজাড় হয়ে যাচ্ছে সে দিকে কোন ভ্রক্ষেপ নেই। তাই একটা জাতির মর্যাদা তথা স্বাধীনতা রক্ষার চেতনা,যিনি আমাদের এত মর্যাদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন তারই 'দান; তা ভুলে গিয়ে এর প্রাপ্য আগুনকে দিয়ে দিয়েছি আর আগুনের শিখার বেদীতে অমুসলিম কায়দায় ফুল-চন্দন দিয়ে তাকে সেই 'চেতনার প্রতীক রূপে গণ্য করে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। ইসলামের অনুশাসন নির্ভেজালভাবে পালনের চেয়ে তার সাথে ইসলাম বহির্ভূত কর্মকাণ্ড সংমিশ্রণ ঘটাতে আমরা সিদ্ধহস্ত বলেই বােধ হয় সকালে মুনাজাতের মাধ্যমে একটি পবিত্র দিন শুরু করছি। আবার কিছুক্ষণ বাদে অমুসলিম আচরণের মহড়া দেখিয়ে তার পবিত্রতাকে দলিত মথিত করে ফেলছি। জানি না জাতি বিধ্বংসী এ প্রবণতা, এ সয়লাবের গতি রুদ্ধ হবে কবে বা আদৌ হবে কিনা? এ জমিনে এমন কোন সাহসী পুরুষের আগমন ঘটবে কিনা যিনি এই উন্মত্ত ধ্বংস তান্ডবের গতি দেখতে সক্ষম হবেন! জানি না এমন কোন নকীব ইস্রাফিলের শিঙ্গা ধ্বনি  করে এ হতভাগা জাতির উদ্দেশ্যে কোন দিন এ ঘোষণা দেবেন কিনা, "ভাইসব !মুসলমান-মুমিনের ইজ্জত, আজাদী রক্ষার চেতনা যােগায় তার আল্লাহর প্রতি অবিচলিত ঈমান,রাসূল (সাঃ)-এর আদর্শ। যে মুসলমান আল্লাহকে সর্ব শক্তিমান বিশ্বাস করে, তার সাহায্যের ওপর নির্ভর করে, যে মুসলমান রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরে, যে মুসলমান জিহাদ করাকে নিজের সকল পছন্দ-অপছন্দের ওপর স্থান দেয় তাদের স্বাধীনতা, মর্যাদা রক্ষার জন্য কোন প্রতীকের পূজা করার প্রয়োজন হয় না, কোন জড় পদার্থকে সর্বদা চোখের সামনে স্থান দেয়ার প্রয়ােজন হয় না যা দেখলেই মনের মধ্যে স্বাধীনতা রক্ষার চেতনা সঞ্চার হবে বলে কল্পনা করা হয় । ঈমানদার মুসলমানের মনে সর্বদা যে ঈমানের দুন্দবি বাজে তাই তার চেতনার প্রতীক। তার দায়িত্ববােধ তার ঈমানই সর্বদা তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।দেশরক্ষা, জাতির স্বাধীনতা, ইজ্জত রক্ষা তার ফরজ অর্থাৎ অবশ্য কর্তব্যসমূহের অন্যতম, এটা জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। আর এই মহান দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় সে যদি প্রাণ বিসর্জন দিতে পারে তবে সে আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম বান্দা হিসেবে বিবেচিত হবেন, তার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবেন । মানুষের এই ঈমানকে শাণিত রাখতে পারলেই দেশ ও স্বাধীনতা রক্ষার চেতনা প্রতিটি নাগরিকের মনে বিদ্যমান থাকবে। আর এটা না করে যদি একটা নয় হাজারো অনির্বান শিখা জ্বালিয়ে রাখা হয় তবুও স্বাধীনতা রক্ষার চেতনা সমুন্নত রাখা সম্ভব হবে না। দেশে অনির্বান শিখা জ্বালিয়ে রাখার পরও কতিপয় মহল দেশদ্রোহীমূলক তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে, তারা সামান্য ব্যক্তি স্বার্থের বিনিময়ে দেশের স্বাধীনতা বিদেশী শক্তির হাতে তুলে দিতে কুণ্ঠিত নয় । দিন দিন এ কুচক্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরও জটিল আরও কূটিল, এবং শাণিত হচ্ছে তাদের ষড়যন্ত্রের কলাকৌশল । শিখা অনির্বাণের কোন ক্ষমতা নেই তাদের মধ্যে দেশত্ববােধের কোন চেতনা সঞ্চার করার। তাদের ঈমানী শক্তি ব্যক্তি স্বার্থের প্রলােভনে বিদূরিত হয়েছে বলেই তাদের এ দশা। তাদের ঈমানী শক্তিকে শাণিত করার প্রচেষ্টার মাধ্যমেই একমাত্র দেশপ্রেমের পথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, কোন চেতনার প্রতীক কল্পনা করে তাকে শ্রদ্ধা জানালেই তার প্রতিষ্ঠা ও প্রসার ঘটে না, ঘটতে পারে না । জীবনে এর চর্চা এবং এই চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া থাকতে হয়। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ ইসলাম।প্রাথমিক যুগের মুসলমানরা নিজ জীবনে ইসলামের ব্যাপক চর্চা ও অন্যকে এ শান্তির ধর্ম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন বলেই ইসলাম বিশ্ব ব্যাপী প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। তারা মুজাহিদদের জিহাদে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, কোন প্রতীক দাঁড় করিয়ে তার নিকট থেকে জিহাদের চেতনা ধার নেয়ার স্থূল কাণ্ড-কারখানায় মেতে থাকেন নি।

  প্রতিটি মুজাহিদ ময়দানে জিহাদরত থেকে শহীদের পবিত্র রক্ত দর্শন ও ছুঁয়ে বজ্র শপথের মাধ্যমে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করার চেতনা আহরণ করতেন, জিহাদের পথে শহীদ বা শাহাদাতের কোন কাল্পনিক দৃশ্য রূপায়ন করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন বা ফুল -চন্দন দিয়ে শহীদী চেতনা আহরণ করতেন না। অতএব, জেগে ওঠো,সত্যকে পদাঘাত করার অভ্যাস ত্যাগ করে সত্যের বুকে আশ্রয় নিয়ে শান্তি অন্বেষন কর, যার নিজের কাছেই শান্তি নেই তার কাছে শান্তির আকাঙ্ক্ষা করে কৌতুকের খােরাক হয়ো না "কবে শুনবো,কতদিন পরে দেখতে পাবো, সেই সােনালী দিনের রোদের আলোকচ্ছটা?"