সম্পাদকীয়
সকল বাধা তুচ্ছ করে এগিয়ে চলার দৃপ্ত শপথ
======================================================================
ভয় শুধু আল্লাহর। ভরসাও কেবল তারই উপর। আশা-আকাংখা শুধু তাঁকে ঘিরেই। এ বিশ্বাস, চেতনা ও মনােভাব নিয়ে ক'বছর আগে যাত্রা শুরু করে মাসিক জাগাে মুজাহিদ। বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা দরিদ্র ও অসহায় অথচ সবচেয়ে বেশী সাহসী, ত্যাগী, স্পষ্টভাষী, সােচ্চার ও ক্ষুরধার কাগজ হিসাবে এর চলার পথ কখনোই পেলব-কোমল ছিলনা। তা ছাড়া এটি কোন গতানুগতিক পত্রিকাও নয়। এর প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার সাথে জড়িত প্রথম দু’জন ব্যক্তি আল্লাহর রাহে জিহাদরত অবস্থায় কাফেরদের হাতে শহীদ হয়েছেন। শাহাদাতের রক্তে যে পত্রিকার ভিত্তিমূল নিষিক্ত, যে পত্রিকার সম্পাদক, প্রতিবেদক, লেখক, সাংবাদিক ও কর্মি আল্লাহর রাস্তায় নিজের প্রিয় জীবনটি উৎসর্গ করার নিটোল ও নির্ভুল একটি উপায় সারাক্ষণ খুঁজে বেড়ায়, সে পত্রিকার বিরুদ্ধে কেস-মামলা বা পুলিশী হয়রানি; এ হলাে বাঙ্গালকে হাইকোর্ট দেখানাের শামিল। লাঠি, দা, বল্লম,পিস্তল আর ভােতা-কামান নিয়ে জাগাে মুজাহিদের অগ্রযাত্রা রােধের বালখিল্য প্রয়াসকে কেবল হাতিকে কোন ছােট শিশুর সদ্য গজানাে দাঁত দেখিয়ে গর্ব করার সাথেই তুলনা করা চলে। এসব প্রয়াস তরবারির ছায়ায় বেড়ে ওঠা মুজাহিদকে পেন্সিলকাটা চাক দেখিয়ে ভয় দেখানাের মত হাস্যকরও বটে।
বংলাদেশের বেসরকারী সংস্থা বা এনজিও জগতের রাঘব-বােয়াল 'ব্র্যাক' জাগাে মুজাহিদ সম্পাদকের নামে মামলা করেছে। গত মাসে তার নামে সমন জারি হয়। বাংলাদেশে কতিপয় এনজিওর ইসলাম, মানবতা ও রাষ্ট্র বিরােধী কর্মতৎপরতার সমান ও সূত্রময় প্রতিবেদন ছাপার দরুন জাগাে মুজাহিদ পরিবারকে নানা ধরনের হুমকি ও চোখরাঙানীর শিকার হতে হচ্ছে। সবার আগে মামলা করে দিয়েছে অতিসচেতন এনজিও ব্র্যাক। ব্র্যাকের এমডি ফজলে হাসান আবেদ-এর হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন ব্র্যাকের গন সংযােগ কর্মকর্তা শামসুল হক চৌধুরী। মামলাটির তত্ত্বাবধানে রয়েছেন আন্তর্জাতিক ভাবে খ্যাত আইনজীবি ডঃ কামাল হােসেন ও তার অ্যাসােসিয়েটস। ডঃ কামাল ব্র্যাকের ঠিকা আইনবিদ।
একদিকে অনেক বড় একটি সংস্থা তার চেয়েও বড় এর উকিল-মােক্তারের বহর। অপরদিকে একটি মাসিক পত্রিকা যা একদল আত্মত্যাগী যুবা-তরুন, পেটে পাথর বেধে- খেয়ে না খেয়ে-সমস্যা সংকট আর অভাবের যাতনায় তিলে তিলে ক্ষয়ে ক্ষয়ে-প্রকাশ করে যাচ্ছে। আল্লাহর অভাবনীয় করুণা, শহীদ সহকর্মীদের রক্তের জ্বালানীতে প্রজ্জ্বলিত প্রেরণার দ্বীপশিখা আর অগণিত পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীর নিখাদ ভালােবাসাকে পাথেয় করে যে পত্রিকাটি অত্যন্ত সহজ, খুবই উচ্চকন্ঠে, নিতান্ত নির্ভীকভাবে এবং হৃদয়ের রং মিশিয়ে জাতির ঘুমন্ত সন্তানদের জাগিয়ে তােলার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ পত্রিকার জন্য এ যেন এক অসম যুদ্ধ। বাহ্যতঃ বিরাট বপু এক প্রাগৈতিহাসিক ডাইনােসারের সাথে ছিমছাম, একহারা, একটি চিতাবাঘের টক্কর। তবে আশার বিষয় এই যে, বিশালকায় এ ডাইনােসারটি কাগজের তৈরী। আর চিতাটি ঈমানী শক্তিতে উদ্দীপিত, বিশ্বাসের চেতনায় শাণিত, তাগুতের সাথে পাঞ্জা লড়ার অঙ্গনে পরীক্ষিত, সর্বোপরি আত্মদানের নেশায় তার হৃদয়-মন উন্মুখ। ইসলামী সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি, বীরকেশরী সাহাবী, হযরত খালিদ ইবনুল ওলীদ (রাজিঃ)-এর নিকট যেমন রােমান সৈন্যদের বিপুল সংখ্যাকে কাগুজে বাঘ বলে মনে হতাে। হাজার হাজার শবদেহের বিরুদ্ধে একজন মর্দে মুমিনের সপ্রান উপস্থিতি যেমন অর্থপূর্ণ বস্তু ও ভােগ বাদীদের সামনেও এ চিতার অস্তিত্ব ঠিক তেমনি ইস্পাতকঠিন। বাংলাদেশের গণমানুষের ঈমান-আকীদা, ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবােধ, দেশীয় সামাজিকতার ঐতিহ্যিক অবকাঠামাে, শিক্ষা সাহিত্য, সংস্কৃতি তথা জীবন সাধনার সকল অঙ্গনে সাম্রাজ্যবাদের বিষবাষ্প ছড়িয়ে এ দেশকে একটি দীর্ঘসূত্র গােলামীর দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে পশ্চিমা দাতাগােষ্ঠীর এ দেশীয় এজেন্টরা যে অপতৎপরতায় মেতে উঠেছে মাসিক জাগাে মুজাহিদ তার সর্বশক্তি নিয়ােগ করে হলেও এ ঝড়ের মােকাবেলা করেই যাবে, ইনশাআল্লাহ। ইসলাম ও মুসলমানের প্রয়ােজনে, দেশ ও জাতির স্বার্থে জাগাে মুজাহিদের প্রতিটি কর্মী- পুরুষ জীবনবাজি রেখে দায়িত্ব পালন করে যাবে। জেল-জুলুম, হয়রানি ও রক্তচক্ষু এর গতিকে রুদ্ধ করতে পারবেনা। সন্ত্রাস, অপপ্রচার, অত্যাচার ও উৎপীড়ন এর কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে পারবে না!
জাগাে মুজাহিদ সম্পাদককে যদি কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে বন্দীও করা হয়। এর সম্পাদনা, প্রকাশনা ও প্রচারের সাথে জড়িত সকল কর্মীর উপর যদি অর্থ বিত্ত ও প্রতিষ্ঠার বদৌলতে উৎপীড়নের পাগলাঘােড়াও দাবড়িয়ে দেয়া হয়। যদি এর ঠিকানাটি তছনছ করে জাগাে মুজাহিদের নাম নিশানাও মুছে দেয়া হয়। এর সংগ্রামী পাঠক ও বিপ্লবী ভক্তদের উপরও নেমে আসে কোন অভাবিত আপদ। তবুও এ পত্রিকার প্রকাশনা স্বাচ্ছন্দে্য অব্যাহত থাকবে। অবশ্য কলম-কাগজ-প্রেস-প্রিন্টার্সের বাধাধরা নিয়মে নয়। তখন জাগাে মুজাহিদ হয়ে উঠবে একটি জীবন্ত পত্রিকা। তাওহীদী জনতার প্রিয়স্বদেশ, সবুজবাংলার ছায়াঘন বুক হবে এর সুবিস্তীর্ন কাগজ আর বাংলাদেশের দামাল ছেলেদের ঈমানদীপ্ত হৃদপিন্ডের তাজাখুন হবে এর অনপনেয় কালি। একটি জাতির জন্য মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপনে এ কাগজ-কালির চেয়ে উৎকৃষ্ট আর কিছু হতে পারে না। বর্তমান জাগাে মুজাহিদের অকাল মৃত্যু বা এর কর্মীদের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার বিনিময়েও যদি জাতি ইসলামের উপর কায়েম থেকে মুক্ত স্বাধীন মাতৃভুমিতে সাহসের নিঃশ্বাস নিতে পারে, তাহলেই জাগাে মুজাহিদের স্বার্থকতা সুনিশ্চিত হবে। খাক ও খুনের সংমিশ্রনে, ইসলামের বিজয় নিশানের ছায়াতলে রচিত সে প্রানপূর্ণ সম্পাদকীয়র অপেক্ষায় মুজাহিদদের হয়তঃ আর বেশীদিন বসে থাকতে হবেনা। চারিদিকে এখন প্রানচাঞ্চল্য ও তৎপরতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে কানে বাজছে নতুন করে জেগে ওঠার ঝংকৃত আহবান।
═──────────────═