JustPaste.it

allahor-voi.jpg

'আল ফিরদাউস' পরিবেশিত

মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ এর তাযকিয়া ক্লাস এর লিখিত সংস্করণ

আত্মশুদ্ধি - ০৫

 

'আল্লাহর আযাবের ভয়

ও রহমতের আশার গুরুত্ব'

 

মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ

 

*************************

 

মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহঃ আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা সাইয়িদিল আম্বিয়া-ই ওয়াল-মুরসালীন, ওয়া আলা আলিহী, ওয়া আসহাবিহী, ওয়ামান তাবিয়াহুম বি ইহসানিন ইলা ইয়াওমিদ্দীন, মিনাল উলামা ওয়াল মুজাহিদীন, ওয়া আম্মাতিল মুসলিমীন। আমীন ইয়া রাব্বাল আ’লামীন। 

আমরা সকলেই প্রথমে দুরূদ শরীফ পড়ে নিই।  

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

আলহামদুলিল্লাহ বেশকিছু সময় পর আবার আমরা আরেকটি তাযকিয়া মজলিসে হাজির হতে পেরেছি, এ জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার শুকরিয়া আদায় করি আলহামদুলিল্লাহ।

সর্বদা আল্লাহর আযাবের ভয় রহমতের আশার মাঝে থাকা

মুহতারাম ভাইয়েরা, আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় হচ্ছে, সর্বদা আল্লাহর আযাবের ভয় ও রহমতের আশার মাঝে থাকা। এই ভাবটাকে আরবিতে আদায় করলে হবে,

الإيمان بين الخوف والرجاء

ঈমান হচ্ছে আশা ও ভয়ের মাঝামাঝি একটি অবস্থা।

দুনিয়ার এ ক্ষণস্থায়ী জীবনে আমাদের ওপর নানা ধরণের বিপদাপদ এসে থাকে। এসব বিপদাপদ আসাটাই স্বাভাবিক। আসবে-ই।

দুনিয়ার জীবনে আমাদের ওপর যে বিভিন্ন ধরণের বিপদাপদ আসবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আগেই তা আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, যেন আগ থেকেই আমরা মানসিকভাবে ওসব বিপদাপদের জন্য প্রস্তুত থাকতে পারি। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,

وَ لَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَیْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَ الْجُوْعِ وَ نَقْصٍ مِّنَ الْاَمْوَالِ وَ الْاَنْفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ،  وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیْنَ، الَّذِیْنَ اِذَاۤ اَصَابَتْهُمْ مُّصِیْبَةٌ،  قَالُوْۤا اِنَّا لِلهِ وَ اِنَّاۤ اِلَیْهِ رٰجِعُوْنَ.

আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করবো সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। (হে নবী) আপনি (ওসব বিপদাপদে) ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ দিন। যাদের ওপর কোনো মসিবত এলে তারা বলে, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’- নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর এবং আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাবো। (সূরা বাকারা (২) : ১৫৫-১৫৬)

এখানে আল্লাহ তা’আলা যে পাঁচটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছেন, যা দ্বারা তিনি আমাদেরকে পরীক্ষা করবেন।

একঃ ভয়-ভীতিঃ হকের ওপর থাকলে গ্রেফতারীর ভয়, রিমান্ডের ভয়, ক্রস ফায়ারের ভয়, ফাঁসির ভয় ইত্যাদি আসতে পারে, এসব ক্ষেত্রে আল্লাহর ভয়কেই বড় মনে করতে হবে। এসব ঝুঁকি আমরা মেনে নিতে প্রস্তুত আছি তো ভাই?

উপস্থিত এক ভাইঃ জি, ইনশাআল্লাহ।

মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহঃ আল্লাহ আমাদের সবাইকে পরীক্ষায় কামিয়াব করুন। আমীন।

আয়াতে আরও যে চারটি বিষয়ে পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা হয়েছে তা হল,

দুইঃ ক্ষুধা, অভাব অনটন।

তিনঃ ধন সম্পদ নষ্ট হয়ে যাওয়া।

চারঃ জীবন চলে যাওয়া। নিজে মৃত্যুবরণ করা। নিজের আত্মীয়স্বজন মৃত্যুবরণ করা।

পাঁচঃ ফসল ও ফল-ফলাদি নষ্ট হওয়া, কমে যাওয়া।

এ আয়াত থেকে বুঝা যাচ্ছে, দুনিয়ার জীবনে আমাদের ওপর বিপদ আসবেই। আয়াতের শেষাংশে বিপদ এলে কী করতে হবে, তাও বলে দেয়া হয়েছে। তা হল, বিপদাপদে সবর করতে হবে। বিপদ এলে অস্থির হওয়া যাবেনা। হায় হুতাশ করা যাবেনা। আল্লাহর ফায়সালার ওপর সন্তুষ্ট থেকে আল্লাহর যা হুকুম তা পালন করে যেতে হবে।

হতাশা আসে কীভাবে?

বিপদ যখন কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তা কেটে যাওয়ার মতো স্বাভাবিক কোনো সম্ভাবনা যখন না থাকে, তখনই আমাদের অন্তরে হাতাশা আঘাত হানে। এই হতাশা কখনো কখনো আমাদেরকে আল্লাহর রহমতের কথা ভুলিয়ে দেয়। আল্লাহর কুদরত থেকে দৃষ্টিকে সরিয়ে দেয়। আল্লাহর সীমাহীন অনুগ্রহ এবং দয়াকে আড়াল করে দেয়। অথচ পবিত্র কুরআনের ভাষ্যমতে, মুমিন কখনোই হতাশ হতে পারে না। কুরআনে বর্ণিত মহান দু’জন নবীর (আলাইহিমুস সালাম) ঘটনাটি সংক্ষেপে একটু বলি।

হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ঘটনা

قَالُواْ لاَ تَوْجَلْ إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلامٍ عَلِيمٍ

তাঁরা (ফেরেশতারা) বললেন, (আমরা আপনার নিয়ে আসা খাবার খাচ্ছি না বলে) আপনি ভয় পাবেন না। আমরা (আল্লাহর পক্ষ থেকে) আপনাকে একজন জ্ঞানবান পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি [সূরা হিজর ১৫:৫৩]

قَالَ أَبَشَّرْتُمُونِي عَلَى أَن مَّسَّنِيَ الْكِبَرُ فَبِمَ تُبَشِّرُونَ

তিনি (ইবরাহীম আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনারা কি আমাকে এমন অবস্থায় সুসংবাদ দিচ্ছেন যখন আমি বার্ধক্যে পৌঁছে গেছি? [সূরা হিজর ১৫:৫৪]

قَالُواْ بَشَّرْنَاكَ بِالْحَقِّ فَلاَ تَكُن مِّنَ الْقَانِطِينَ

তারা বললেন, আমরা আপনাকে সত্য সু-সংবাদ দিচ্ছি! অতএব আপনি নিরাশ হবেন না [সূরা হিজর ১৫:৫৫]

قَالَ وَمَن يَقْنَطُ مِن رَّحْمَةِ رَبِّهِ إِلاَّ الضَّآلُّونَ

তখন তিনি বললেন, পালনকর্তার রহমত থেকে পথভ্রষ্টরা ছাড়া আর কে নিরাশ হতে পারে? [সূরা হিজর ১৫:৫৬]

ব্যাখ্যাঃ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন বার্ধক্যে উপনীত হয়ে যান তখন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একদল ফেরেশতা এসে তাঁকে একজন বুদ্ধিমান পুত্রসন্তানের সুসংবাদ শোনান। তিনি তাঁদের কথা শুনে বিস্ময়ভরা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, “আমাকে তো বার্ধক্য পেয়ে বসেছে, এ অবস্থায় আপনারা আমাকে সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছেন?

তখন ফেরেশতারা বললেন, “আমরা আপনাকে সত্য সুসংবাদই দিচ্ছি। আপনি বার্ধক্যে পৌঁছে গেছেন তাতে কী হয়েছে? এ অবস্থায়ই আপনার সন্তান হবে। আপনি আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হবেন না। তখন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, আল্লাহর রহমত থেকে কে নিরাশ হতে পারে? যারা পথভ্রষ্ট একমাত্র তারাই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে।

হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের ঘটনা

দ্বিতীয় যে ঘটনাটি বলতে চাচ্ছি তা হল, হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের ঘটনা। হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের বার সন্তানের মধ্যে তাঁর কাছে সর্বাধিক প্রিয় ছিলেন হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম। তাঁকে তিনি সবচেয়ে বেশি আদর করতেন। তাঁর ভাইয়েরা বাবার এই আদরকে সহজে মেনে নিতে পারেনি, তাই তারা একদিন কৌশলে তাঁকে বাবার কাছ থেকে নিয়ে গিয়ে বনের এক কূপে ফেলে দেয়। কিন্তু আল্লাহর কী অসীম কুদরত! যাকে তারা কূপ ফেলে দিয়েছিল তিনিই এক সময় মিশরের খাদ্যমন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল হন আর দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে খাদ্যশস্য আনার জন্য তাদেরকে ইউসুফ আলাইহিস সালামের কাছেই গিয়ে হাজির হতে হয়। প্রথমবার তারা হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের সহোদর ভাই বিন ইয়ামীনকে সঙ্গে নেয়নি। দ্বিতীয়বার বিন ইয়ামীনকে সঙ্গে নিয়ে যায়। এ সময় আল্লাহর ইচ্ছায় বিন ইয়ামীন মিশরেই থেকে যান। বিস্তারিত ঘটনা কোরআনে কারীমে এসেছে। ভাইয়েরা তখন অনিচ্ছা স্বত্বেও বিন ইয়ামীনকে মিশরে রেখেই বাবার কাছে ফিরে যায়। হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম পর পর তাঁর সবচেয়ে প্রিয় দুটি ছেলেকে হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু তবুও তিনি একটুও নিরাশ হননি। পরবর্তী বছর যখন তিনি তাঁর ছেলেদেরকে খাদ্যের জন্য পুনরায় মিশরে পাঠাচ্ছিলেন তখন তাদেরকে লক্ষ্য করে যা বললেন তা খুব ভালো ভাবে মনে রাখার মতো কথা। দেখুন তিনি কী বলছেন? তিনি বলছেন,

يَا بَنِيَّ اذْهَبُواْ فَتَحَسَّسُواْ مِن يُوسُفَ وَأَخِيهِ وَلاَ تَيْأَسُواْ مِن رَّوْحِ اللّهِ إِنَّهُ لاَ يَيْأَسُ مِن رَّوْحِ اللّهِ إِلاَّ الْقَوْمُ الْكَافِرُونَ

হে আমার ছেলেরা, তোমরা (মিশর) গিয়ে ইউসুফ এবং তাঁর ভাইকে তালাশ করো। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহর রহমত থেকে কাফের সম্প্রদায় ব্যতীত অন্য কেউ নিরাশ হয় না। [সূরা ইউসুফ ১২:৮৭]

ঘটনা দুটি থেকে শিক্ষা

ঘটনা দুটিতে দু’জন নবীর শেষ কথা - এক আল্লাহকে যারা বিশ্বাস করে, যারা মুমিন, যারা সঠিক পথের অনুসারী, তারা তো কিছুতেই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে না।

দেখুন ভাই, তাঁরা উভয়েই ছিলেন পার্থিব বিপদের শিকার। একজন সন্তানহীন অবস্থায় পুরোটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। জীবনের একদম শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছেন, আরেকজন এক সন্তানের শোকেই যখন পাথর হওয়ার অবস্থা, তখন হারালেন আরেক সন্তান! তবুও তাঁরা আল্লাহর অসীম রহমতের প্রতি আশাবাদী ছিলেন। হতাশা তাদের স্পর্শই করতে পারেনি। পরিশেষে তাঁরা উভয়েই তাঁদের জীবদ্দশাতেই এর ফল ভোগ করে গেছেন। মুমিনের শান এমনই হওয়া উচিত।   

উপস্থিত এক ভাইঃ আমাদের বর্তমান প্রেক্ষাপটেও এ ঘটনা দুটি থেকে উত্তম শিক্ষা পাওয়া যায়।

মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহঃ কথাটি কি একটু খুলে বলবেন ভাই?

উপস্থিত ওই ভাইঃ ঘটনা দুটি থেকে আমি যে শিক্ষাটি পেয়েছি তা হল, বেশ কয়েকদিন ধরে খুব বেশি অস্থিরতার মধ্যে আমার দিনগুলো যাচ্ছে। অনেকের সাথেই এ অস্থিরতা প্রকাশ করেছি। কাশ্মীরের অবস্থা শুরু হওয়ার পর থেকে ভাবছি, এ দূরবস্থা থেকে আমাদের কাশ্মীরী ভাই-বোনদের পরিত্রাণ কীভাবে সম্ভব? কীভাবে তারা চলমান এ বিপদ থেকে মুক্তি পাবেন? কাশ্মীরে আমাদের ভাইদের সামর্থ্যও তো কম। এখন এ ঘটনা দুটি শুনে মনে মনে একটু মিলালাম। এখন একটু ভাল লাগছে।   

উপস্থিত আরেক ভাইঃ পাহাড়ের মতো বিপদের সম্মুখীন হয়েও ধৈর্য্যের পরিচয় দিতে হবে। কোন অবস্থাতেই ধৈর্য্যহারা হওয়া যাবে না। বরং সকল প্রতিকূলতাকে সঙ্গে নিয়েই আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে সামনে অগ্রসর হতে হবে। নিরাশ কোনও ভাবেই হওয়া যাবে না। হয়তো বিজয় নয়তো শাহাদাত।

মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহঃ মাশাআল্লাহ! সব সময় আমাদের কর্তব্য - বিপদ যত বড়ই হোক সবর করা এবং তার আড়ালে আল্লাহ নিশ্চয়ই ভাল কিছু রেখেছেন এই আশা রাখা। পাশাপাশি ওই অবস্থায় আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের ওপর যা হুকুম তা যথাযথ ভাবে পালন করে যাওয়া।

এটাই হল একজন মুমিনের শান। সে যতদিন বেঁচে থাকবে, আল্লাহর রহমতের প্রতি আশাবাদী হয়েই বেঁচে থাকবে। পাশাপাশি নিজের যতটুকু সাধ্য আছে সে অনুযায়ী আল্লাহর হুকুম পালন করে যাবে। নিজের সবটুকু সাধ্য ব্যয় করার পরও বাহ্যত ব্যর্থ হলে নিরাশ হবে না। আবার এগিয়ে যাবে। একজন মুমিন কখনোই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে না।

দেখুন, হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম তাঁর প্রিয় দুটি সন্তানকে হারিয়ে চরম সংকটের মুহূর্তেও ছেলেদেরকে লক্ষ্য করে বলছেন, হে আমার ছেলেরা, তোমরা (মিশর) গিয়ে ইউসুফ এবং তাঁর ভাইকে তালাশ করো। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহর রহমত থেকে কাফের সম্প্রদায় ব্যতীত অন্য কেউ নিরাশ হয় না। তাঁর কথায় স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, তিনি আল্লাহর প্রতি কেমন আশাবাদী ছিলেন। তিনি তাঁর ছেলেদের মনেও আশার সঞ্চার করতে চাচ্ছেন। তাই তো তিনি বলছেন, নিশ্চয় আল্লাহর রহমত থেকে কাফের সম্প্রদায় ব্যতীত অন্য কেউ নিরাশ হয় না।

বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু, যার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হাবরু হাযিহিল উম্মাহ’- সে হল এই উম্মতের বিদ্বান ব্যক্তি। তাঁর একটি কথা মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক নামক হাদিসের এক কিতাবে এসেছে। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ হল, আল্লাহ তাআলার সঙ্গে (কোন কিছুকে) শিরিক করা এবং আল্লাহর পাকড়াও বা আযাব থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া ও আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়া। [মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৯৭০১]

বিপদে পড়লে মানুষ যে কীভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এর কিছু বর্ণনা পবিত্র কুরআনেও এসেছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,  

و اِذَاۤ اَنْعَمْنَا عَلَی الْاِنْسَانِ اَعْرَضَ وَ نَاٰ بِجَانِبِهٖ  وَ اِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ كَانَ یَـُٔوْسًا.

আমি মানুষকে যখন কোনো নিআমত দিই তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও পাশ কাটিয়ে যায় আর যখন কোনো অনিষ্ট তাকে স্পর্শ করে তখন সে সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে পড়ে! –[সূরা বনী ইসরাঈল (১৭ : ৮৩]

 

হতাশার নানা কারণ

বিভিন্ন কারণে মানুষ হতাশাগ্রস্থ হতে পারে। কারো মধ্যে যদি বিপদাপদে সবর করার শক্তি না থাকে তখন দেখা যায়, এমন মানুষ সামান্য বিপদেই একদম ভেঙ্গে পড়ে। কখনো আবার হতাশাগ্রস্থদের সঙ্গে থাকার কারণেও কারো মধ্যে হতাশা চলে আসে। তখন দেখা যায়, সেও হতাশাগ্রস্থ হয়ে যায়। আরবীতে একটি প্রবাদ আছে-

المرأ على دين خليله

মানুষ তার সঙ্গী বা বন্ধুর আদর্শই গ্রহণ করে থাকে

এটাই স্বাভাবিক। কেউ যদি হতাশাগ্রস্থদের সঙ্গে ওঠাবসা করে তাহলে একসময় সেও হতাশাগ্রস্থ হয়ে যাবে।

কখনো আবার কাল্পনিক প্রত্যাশার পাহাড়ও মানুষকে হতাশ করে তোলে। নিজের জীবন নিয়ে কিংবা জীবনের কোনো দিক নিয়ে যখন কেউ নিজের সামর্থ্যের কথা চিন্তা না করে অনেক উঁচু উঁচু স্বপ্ন দেখতে শুরু করে, এর পরিণতিতেও সে হতাশাগ্রস্ত হতে পারে। একের পর এক যখন তার সেই কল্পিত স্বপ্ন ও আশা আকাঙ্ক্ষা ভঙ্গ হতে থাকে তখন সে একদম হতাশ হয়ে পড়ে। আবার কখনো এমনও হয় যে, আকস্মিক কোনো বিপদ কাউকে এতটাই ঝাঁকুনি দেয় যার ফলে সে আর মাথা সোজা করে সামনে এগিয়ে চলার হিম্মতই করতে পারে না। পরিণামে সে হতাশ হয়ে যায়।

আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে সব ধরণের হতাশা থেকে হেফাজত করুন। সর্ব প্রকার গুনাহ থেকে মুক্ত থেকে আমলের লাইনে আরও অগ্রসর হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন। 

মুহতারাম ভাইয়েরা! আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর দ্বীনের জন্য কবুল করুন এবং ইখলাসের সাথে জিহাদ ও শাহাদাতের পথে অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন।

আমরা সকলে মজলিস থেকে উঠার দোয়াটা পড়ে নিই।

سبحانك اللهم وبحمدك، أشهد أن لا إله إلا أنت، أستغفرك وأتوب إليك

وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله واصحابه اجمعين

وآخر دعوانا ان الحمد لله رب العالمين

 

******************

Al Firdaus Logo.n.png