JustPaste.it

সত্যের সন্ধানে

 

ঈসাবেলা

মাওলানা আব্দুল হালীম শরর লখনবী

অনুবাদঃ মাওলানা আব্দুর রাযযাক

 

(পর্ব প্রকাশিতের পর)

দুর্যোগের আভাষ

                শায়খ যিয়াদ ইবনে ওমরের নুরানী মজলিস থেকে বিদায় গ্রহণ করে ইসাবেলা বের হয়ে আসল এবং নিজ গৃহে পৌঁছার জন্য ঐ সড়কটির উপর উঠল, যা কর্ডোভার বিখ্যাত রাজপ্রাসাদ “কছরুশ শুহাদা” হ'তে বহির্গত হয়ে সোজা ‘সুকুল আছাফীরে'র দিকে গিয়েছে। 'সুকুল আছাফীর' থেকে কয়েক পা অগ্রসর হলেই ইসাবেলার পিতা প্রধান পাদ্রী সাহেবের বাসভবন। উক্ত মহান মজলিসের প্রকৃত জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় অদ্য ঈসাবেলা যে অমূল্য ধারণা ও বিশ্বাস লাভ করল, তজ্জন্য সে আনন্দে আত্মহারা। আজ এ বিশ্বের অন্য কোন সম্পদের প্রতিই তার ভ্রুক্ষেপ নেই। এক ভাবগম্ভির অবস্থায় নীবর নিস্তব্ধভাবে সে পথ চলছে। অর্ধঘন্টার মধ্যে সে গৃহে পৌঁছে গেল। ঈসাবেলার অপেক্ষায় অধীর মা তাকে দেখামাত্র পরিচারিকাকে খাবার পরিবেশনের আদেশ দিয়ে তার বিলম্বে গৃহে পৌঁছার কারণ জিজ্ঞাসা করল। ঈসাবেলা মজলিসে যোগদানের পূর্বে সাক্ষাৎপ্রাপ্তা এক সহচরীর নাম উল্লেখ করে বললো, তার সাথে সাক্ষাৎ না হলে হয়ত অনেক পূর্বেই ঘরে পৌঁছতে পারতাম। অল্প কথায় মার দুর্ভাবনা দূর করে সে খেতে বসল। খাওয়া শেষ হলে তার পিতা প্রধান পাদ্রী সাহেবও ঘরে পৌঁছলেন। রাত্রি মঙ্গলমতই কাটল।

                 প্রভাতের সোনালী আভা পূর্বাকাশে উকিঝুঁকি দিচ্ছে। কর্ডোভার মসজিদ সমূহ থেকে মুয়াজ্জিনের আযানের ধ্বনি শান্তির বাণী বহন করে দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ছে। কেমন শান্ত স্নিগ্ধ নীরব সময়ে কিরূপ মাধুর্যপূর্ণ আওয়াযে বিশ্বজাহানের স্রষ্টার বড়ত্ব ঘোষণা করা হচ্ছে। কেমন অভিনব ধারায় গাফেল, অলস, বেখবর বান্দাদের সকল সাফল্য প্রদাতা আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য হুঁশিয়ার করা হচ্ছে। সুবহানাল্লাহ, কিরূপ চিত্তাকর্ষক-বাণী আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর! (বিশ্বজাহানের কিছুই বড় নহে, শুধু) আল্লাহ বড়, আল্লাহ্‌ বড়! ঐ তো, গির্জার ঘন্টাধ্বনিও এই সুমধুর সময়ে শুরু হয়েছে। কিন্তু কেমন বিদঘুটে ও অর্থহীন আওয়াজ। কোথায় আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবরের হৃদয়স্পর্শীবাণী আর কোথায় টন টন, ঢন ঢন আওয়াজ। এ এক জ্বলন্ত সত্য যে, প্রত্যেক ধর্মের আভ্যন্তরিণ অবস্থা তার আনুসঙ্গিক ক্রিয়াকর্মের দ্বারাই বোধগম্য হয়। নামাযী নামায সমাপনান্তে মসজিদ থেকে বের হচ্ছে, কৃষক, শ্রমিক ব্যবসায়িগণ নিজ কর্মক্ষেত্রের দিকে ছুটে যাচ্ছে, বিহঙ্গমদের কলকাকলী অনেকটা শান্ত হয়ে এসেছে।

                   আযানের আওয়াজ শুনে ঈসাবেলা বিছানা ছেড়ে উঠল। প্রাতঃ কৃত্যাদি শেষ করে অনুশীলন রুমে প্রবেশ করে কয়েকখানা পুস্তক তুলে নিয়ে পড়তে বসল। অল্পক্ষণ পরেই মহামান্য পিটার্স ও অধ্যাপক মীখাইল প্রবেশ করলেন। ঈসাবেলা তাদের দেখে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানাল এবং তাদের সঙ্গে নিয়ে এক বৃহৎ কক্ষে গেল, যে কক্ষ অতিথিদের জন্য নির্ধারিত। কিছুক্ষণ পর ঈসাবেলার পিতাজীও তথায় এসে বসলেন এবং তার আম্মীকেও ডেকে আনলেন। অকস্মাৎ এইরূপ অভাবনীয় ও আশ্চর্য সম্মেলন দেখে ঈসাবেলা বিহ্বল হয়ে পড়ল। সে ধারণা করল, সম্ভবতঃ শুধু আমাকে উপলক্ষ্য করেই এই মহারথীদের আহ্বান করা হয়েছে এবং হয়ত ইসলামের সাথে আমার গোপন সম্পর্কের বিষয়ও এরা জেনে ফেলেছে। অজানা এক আশংকায় ইসাবেলার চেহারা ফ্যাকাশে দেখাচ্ছিল। হৃদপিণ্ডের স্পন্দন অত্যধিক দ্রুত ও তার আওয়াজ যেন টেলিগ্রাফের শব্দের ন্যায় সমবেত মহারথীদের কর্ণকুহরে প্রবিষ্ট হয়ে ইসাবেলার সকল গুপ্ত রহস্য প্রকাশ করে দিচ্ছিল। তার মস্তিষ্ক অসাড় হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু সে অত্যাধিক চেষ্টায় হুঁশ বজায় রেখে ধৈর্য ও সংযমের সাথে কর্তব্য স্থির করে নিল। সর্বপ্রথম সে পানি পান করার ভান করে ঐ স্থান থেকে উঠে অপর কামরায় চলে গেল।

                প্রধান পাদ্রী সাহেব ইসাবেলার মাতা, পিটার্স ও মীখাইলকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ ইসাবেলা যে আমাকে বে-ইজ্জত ও লাঞ্ছিত করার উদ্দেশ্যে কোন ষড়যন্ত্রে মেতেছ, তা আনপারা জানেন কি?

               বিষয়ে চিন্তা করার উদ্দেশ্যে আমি আপনাদেরকে এই অসময়ে এখানে আসার জন্য কষ্ট দিতে বাধ্য হয়েছি।

              পিটার্সঃ মঙ্গল হোক! একি কথা বলছেন আপনি! প্রধান পাদ্রীঃ শুধু মঙ্গলই মঙ্গল। কিছুদিন যাবত শুনে আসছি ঈসাবেলা নাকি খ্রিষ্টধর্ম পরিত্যাগ করে গোপনে মুসলমান হয়ে গেছে।

              হেলেনাঃ (ঈসাবেলার জননী) তওবা তওবা! তুমি একি বলছ? খোদাওন্দ যীশু যেন কখনও এমন না করেন। বলত, আসল ব্যাপার কি, আজ তুমি এত ক্রুদ্ধ হচ্ছো কেন, আমার কন্যাটিকে তুমি কারণ ছাড়া মুসলমান বলে ফেললে!

             প্রঃ পাদ্রীঃ আমি যা কিছু বলছি সম্পূর্ণ সত্য। কিছু দিনের মধ্যেই 'সব কিছু জানতে পাবে।

             পিটার্সঃ পবিত্র পিতঃ! আপনি ত এক ভয়াভহ কথা শুনালেন; ঈসাবেলা অত্যন্ত সৎ প্রকৃতির মেয়ে, যীশুর খোদায়িত্ব সম্বন্ধে সে উচ্চশিক্ষা লাভ করেছে। সে কি মুর্খ মেয়ে যে, ইসলামের মত একটি খুনী যুদ্ধবাজ ধর্মকে গ্রহণ করবে?

            হেলেনাঃ বেশ, আমি মেয়েকেই ডেকে আনছি। জানি না তার কোন্‌ কথায় তোমার এরূপ সন্দেহ জাগ্রত হলো।

            অতঃপর হেলেনা ঐ কামরার দিকে গেলেন যে স্থানে বসে ইসাবেলা তার জীবনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তটির জন্য অপেক্ষা করছিল। হেলেনা দ্রুত গিয়ে ঈসাবেলার বাহু ধরে বললেন, একটু উঠ মাম্মী! তোমার পিতাজী তোমাকে ডাকছেন। ইসাবেলা বিষয়ের জটিলতা গভীরভাবে উপলব্ধি করছিলো। সে জননীর সাথে এসে বড় কামরায় পৌঁছল। তাকে প্রধান পাদ্রী সাহেবের সামনে বসান হলো। প্রধান পাদ্রী সাহেবের ইঙ্গিতে অধ্যাপক মীখাইল ঈসাবেলার সাথে আলাপ আরাম্ভ করলেন।

              মীখাইলঃ বেটি! আমরা জানতে পারলাম, তুমি নাকি খ্রিষ্টধর্মের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছ। তা কি সত্য? যদি তোমার বিরুদ্ধে কেউ এই মিথ্যা গুজব রটিয়ে থাকে, তবে এর প্রতিবাদ করা তোমার কর্তব্য৷

               এ কথা শুনে ঈসাবেলা নীরবে দৃষ্টি নত করে আপন গোলাপী ওষ্ঠযুগলে উষ্ণ অশ্রুধারা প্রবাহিত করছিল।

           হেলেনাঃ দেখুন আমি বলি নাই যে, আমার দুলালীর নামে কেউ মিথ্যা দুর্নাম রটিয়েছে! বেচারী এর কি প্রতিবাদ করবে? তার অশ্রুবিন্দুসমূহই এর প্রতিবাদ করছে আর বলছে যে, খ্রিষ্টধর্মের প্রতি তার বীতশ্রদ্ধ হওয়ার দুর্নাম সম্পূর্ণ মিথ্যা।

            প্রঃ পাদ্রীঃ হেলেনা! তুমি একটু নীরব হও। স্বয়ং ঈসাবেলাকে উত্তর দিতে দাও। বল ঈসাবেলা, তোমার সম্বন্ধে এই সংবাদ সমূহের স্বরূপ কি?

    ইসাবেলা একইভাবে, মাথা ঝুঁকিয়ে বসে শুধু কাঁদছে। পরিশেষে পিটার্স ও মীখাইলের পিড়াপিড়ীর ফলে সে তার অবরুদ্ধ ওষ্ঠযুগল সঞ্চালন করল।

             ঈসাবেলাঃ আমি ইসলাম গ্রহণ করিনি। আমি আমার প্রকৃত ধর্মের উপর স্থির আছি।

             মীখাইলঃ যদি এখন পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ না করে থাক, তবে ভবিষ্যতে ইচ্ছা আছে কি?

            ইসাবেলাঃ আপনি আমার ভবিষ্যত সম্পর্কে প্রশ্ন কেন করছেন? এরূপ প্রশ্ন ত আমিও আপনার সম্পর্কে করতে পারি।

           মীখাইলঃ বেশ, তবে বল ইসলামকে তুমি কিরূপ ধর্ম মনে কর?

           ইসাবেলাঃ আমি ইসলামকে অন্যান্যদের ন্যায় ভাল বা মন্দ কিছুই বলার পক্ষপাতী নই। কেননা মুসলমানদের কেতাবে হযরত ঈসার প্রশংসা করা হয়েছে এবং মুসলমানগণ যীশুর নাম সম্মানের সাথে উচচ্চারণ করে।

          মীখাইলঃ অর্থাৎ ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে তোমার মহব্বত আছে।

          ইসাবেলাঃ এখন আপনি এর নাম মহব্বত বা প্রেম যা ইচ্ছা রাখতে পারেন। সে যা হোক, আমি কৃতঘ্ন নই। যদি মুসলমানগণ আমাদের যীশুর সম্মান করতে পারে, তবে তাদের নবী এবং তাদের কেতাবের সম্মান করা আমি আমার কর্তব্য মনে করি।

          পিটার্সঃ বুঝা গিয়েছে যে, নিশ্চয়ই তুমি ভিতরে ভিতরে মুসলমান হয়ে গিয়েছো। নতুবা তুমি ইসলাম ও মুসলমানদের এইরূপ প্রশংসা করতে না। আচ্ছা বলতো, এ যাবত তুমি যে ধর্ম পালন করে আসছো অর্থাৎ খ্রিষ্টধর্ম সম্বন্ধে তোমার ধারণা কি?

         ঈসাবেলাঃ পবিত্র ইঞ্জিল সহ সকল আসমানী কেতাবের উপরই আমি বিশ্বাসী। হযরত ঈসার উপরও আমার ঈমান আছে। অবশ্য কতক ভ্রান্তিমূলক কথার আমি অবিশ্বাসী, যা পরবর্তিকালে খ্রিষ্টধর্মে প্রক্ষিপ্ত হয়েছে।

          প্রঃ পাদ্রীঃ আশা করি আপনারা সকলেই এখন এর আভ্যন্তরিক অবস্থা সন্বন্ধে অবগত হতে সক্ষম হয়েছেন। এখন এই ব্যাধীর একমাত্র চিকিৎসা ‘তরবারী’।

         পিটার্সঃ আপনি আমাদের একটু সুযোগ দিন, আমরা তাকে সঠিক ধারণা প্রদান করতে নিশ্চয়ই সক্ষম হব। তার ভ্রান্তি বিদূরিত হয়ে সে সম্পূর্ণ ঠিক হয়ে যাবে। খোদাওন্দ যীশুর খোদায়িত্বের দর্শনে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেছে যে মেয়ে, সে মুসলমান হয়ে যাবে তা অসম্ভব!

           প্রঃ পাদ্রীঃ উত্তম, আপনারা চেষ্টা করে দেখুন নতুবা আমি যে ব্যবস্থা প্রদান করব তা অন্যরূপ হবে।

          অদ্যকার আলোচনা এখানেই সমাপ্ত হল। অন্য খ্রিষ্টিয় আউলিয়াগণের তাবাররুকাত (অস্থি-কঙ্কাল ইত্যাদি) এবং স্বয়ং প্রধান পাদ্রী সাহেবের চেহারা দর্শন করে সৌভাগ্য লাভ, করার নির্ধারিত শুভদিন। তদুপলক্ষ্যে সমগ্র প্রার্থী খ্রিষ্টানগণের ভীড়ে ক্যাথিড্রেল ভরপুর। এই অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য এবং হাজার হাজার খ্রিষ্টানের ভাগ্য সুপ্রসন্ন করার উদ্দেশ্যে প্রধান পাদ্রীসাহেব পিটার্স ও মীখাইলকে সঙ্গে নিয়ে কর্ডোভার সর্ব প্রধান গির্জা ক্যাথিড্রেলে যাত্রা করলেন।

             ইসাবেলা উঠে গিয়ে আপন শয়ন কক্ষে প্রবেশ করল। সে পুনরায় নীরব নিস্তব্ধ, আপন ভবিষ্যত চিন্তায় বিভোর। সে স্পষ্ট বুঝতে পারল যে, বিপদের মহাঝঞ্চা তার জন্য অপেক্ষ্যমান। জীবনের কঠিন পরীক্ষা তার সম্মুখে সমাগত। কিন্তু সে এখন ঈমানের বলে বলিয়ান, পরীক্ষা যত কঠিনই হোক, তাকে উত্তীর্ণ হতেই হবে। ভয় ভাবনা তার হৃদয়ে বিন্দুমাত্র নেই। যে কোন বিপদের আঘাত বরদাশত করবার জন্য সে প্রস্তুত।

              ইসাবেলা টেবিল থেকে একখণ্ড কাগজ নিয়ে তার সহচরী মীরানোর নামে একখানা চিঠি লিখলঃ

         বোন মীরানো!

            গতরাত্রি নয় ঘটিকায় আমি ওলামায়ে ইসলামের মজলিসে যোগদান করেছিলাম, তথায় আমার আধ্যাত্মিক পিতা ওমর লাহমী এবং আরও কতিপর বিশিষ্ট আলিম উপস্থিত ছিলেন। সে মজলিসের গুরুত্ব বর্ণনা করা আমার সাধ্যাতিত। তা ছিল স্বর্গিয় আলোকরশ্মীতে ভরপুর, অমান্ত আত্মার তৃপ্তিদায়ক এক আশ্চর্য মজলিস। তাতে শরীক হওয়ার সুযোগ ঘটায় আমার ঈমানের বল অনেক বৃদ্ধি পেয়েছ। কতই উত্তম হত যদি সেখানে তোমাকেও আমার সঙ্গে পেতাম। আমি কিন্তু আমার ‘রূহানী রাহবার শায়খ যিয়াদ ইবনে ওমরের সমীপে ওয়াদা করে এসেছি যে, আগামীকাল অথবা পরশু তোমাকেও সঙ্গে নিয়ে পুনরায় সেখানে হাজির হব।

            অদ্য এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে, মনে হচ্ছে শীঘ্রই আমাকে এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। দোয়া করো যেন খোদা আমাকে সর্বদা সত্যের উপর দৃঢ়পদ রাখেন। ঘটনা হলো, পিতাজীর নিকট আমার ইসলাম গ্রহণের গোপন খবর পৌঁছে গেছে। তাই তিনি তোমার পিতা এবং পিটার্সকে ডাকিয়ে এনেছিলেন। তারা সকলেই আমাকে বিভিন্ন প্রকার প্রশ্ন করেছেন। চিন্তা করে দেখ, একদিকে পিতাজী অপর দিকে পিটার্স ও মীখাইল, আমি কিরূপ সঙ্কটে পতিত হয়েছিলাম। কিন্তু আমিও তাদেরকে সমুচিৎ জবাব দিতে দ্বিধা করিনি। পরে পিটার্স পিতাজীর নিকট ওয়াদা করে গেছেনঃ “ইসাবেলাকে আমরা বুঝিয়ে পথে এনেই ছাড়ব”। যদি সুযোগ হয় তোমরা চারজনেই উক্ত মহান মজলিসে যোগদান করবে। অন্যান্য জরুরী কথা ইনশাআল্লাহ সাক্ষাতে আলোচনা করব।

ইতি-

তোমাদের বোন

ইসাবেলা!

 

              চিঠি সমাপ্ত করে ঈসাবেলা পরিচারিকাকে ডেকে বলবো, মীরানোর নিকট যেয়ে একখানা পুস্তক নিয়ে এসো। আর তার একখানা চিঠি আমার নিকট রয়ে গেছে, সে চিঠিখানাও তাকে দিয়ে এসো। পরিচারিকা চিঠি নিয়ে অধ্যাপক মীখাইলের গৃহাভিমুখে চললো। সেখানে পৌঁছে চিঠিখানা মীরানোর হাতে দিল সে তা তৎক্ষনাৎ পাঠ করল এবং পরিচারিকাকে বলে দিল যে, আমি সন্ধ্যায় পুস্তক নিয়ে নিজেই ঈসাবেলার সাথে সাক্ষাৎ করব।

              সন্ধ্যায় ইসাবেলা, মীরানো ও অপর তিন সহচরী কর্ডোভার সেই উদ্যানে সম্মিলিত হল, যেখানে ওমর লাহমী প্রমুখের সাথে তাদের প্রথম সাক্ষাৎ ঘটেছিল। ঈসাবেলা সহচারীদের নিকট আদি-অন্ত বৃত্তান্ত বর্ণনা করে উপস্থিত কর্তব্য সন্ধন্ধে জরুরী পরামর্শ করল। আর এও সাব্যস্ত হল যে, আগামীকল্য সন্ধ্যায় যিয়াদ ইবনে ওমরের মজলিসে তাদের সকলেরই যোগদান করতে হবে এবং ইসাবেলার ঘরের অবস্থা সম্পর্কে সেখানে আলোচনা করতে হবে। উদ্যানে প্রমোদ ভ্রমণ ও ব্যক্তিগত সংলাপ সমাপনান্তে তারা সকলে নিজ নিজ গৃহাভিমুখে যাত্রা করিল।

(অসমাপ্ত)