ভারতের ৪৭ হাজার মুসলমানকে বাধ্যতামূলক হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত
-সাব্বির আহমদ শিবলী
==============================================================
ভারত থেকে এক হৃদয়বিদারক সংবাদ আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। রাজস্তানের এক এলাকায় প্রায় অর্ধ লক্ষ মুসলমান হিন্দু ধর্মে দীক্ষা নিয়েছে। এক আল্লাহর সামনে শীর অবনত করার পরিবর্তে আজ তারা অসংখ্য দেবতার সম্মুখে মাথা ঠুকছি। কিছুদিন পূর্বেও সেখানে দূর থেকে দেখা যেত মসজিদের উঁচু উঁচু মিনার আর ভেসে আসতো আযানের সুমধুর আহ্বান। আজ সেখান থেকে শোনা যায় শাঙ্খের ধ্বনি এবং বেদমন্ত্রের আওয়াজ। আর সে সকল মুরতাদ এখন বিবাহ শাদীর পবিত্র জীবন ত্যাগ করে শিব লিঙ্গ পূজায় লিপ্ত।
মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণকারী মৃতদেহগুলোকে সমাধিস্থ করার পরিবর্তে আজ অগ্নীধারা ভষ্ম করা হচ্ছে। কালকেও যে আব্দুল্লাহ, আব্দুর রহমান, নামে নিজের পরিচয় দিতে গর্ববোধ করত! আজ তাকে ডাকা হচ্ছে ভগবান দাস, রামদয়াল, প্রভৃতি নামে।
আজ থেকে ১০ বছর পূর্বের কথা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নামে একটি সংগঠন যেকোনো মূল্যে অন্য ধর্মালম্বী লোকদেরকে হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত করার ঘোষণা দিয়ে এই উদ্দেশ্যে মাঠে নামে এবং এ পর্যন্ত তারা ৪৬ হাজার ৭৭৭ মুসলমান এবং ২ হাজার খিষ্টানকে হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত করতে সক্ষম হয়েছে। এ সংখ্যাটি শুধুমাত্র রাজস্তানের চারটি জেলার। এসব এলাকার পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতেও তাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানা যায়।
উইকলি অফ ইন্ডিয়ান রিপোর্টার জনাব সুখমানে সেই রাজস্তানের ঐ সকল এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং তার স্বচক্ষে দেখা এ রিপোর্টটি পাঠকদের অবগতির জন্যে তুলে ধরা হচ্ছেঃ এ রিপোর্টটি থেকে মুসলিম সমাজের শিক্ষা নেয়া উচিত। বিশেষ করে ঐ সকল ওলামাদের যারা বাতিলের মোকাবেলায় হাতিয়ার রেখে দিয়ে আপসে দ্বন্দ্বে লিপ্ত রয়েছে। রাজস্থানের আকাশ বাতাস চিৎকার করে ফরিয়াদ করছে। হে আম্বিয়ায়ে কেরামগণের উত্তরসূরি উম্মতে মোহাম্মদী পৃথিবীর বুক থেকে ইসলামকে মুছে ফেলার পাঁয়তারা চলছে তোমরা আজ কোথায়!?
রাজস্থানের "পালি" জেলার অন্তর্ভুক্ত "কোলপূরা" বস্তিতে অবস্থিত সাদা ধবধবে একটি মন্দির। হিন্দু ধর্ম গ্রহণকারী সরলমনা নির্বোধ লোকগুলো এ মন্দিরে রক্ষিত মূর্তিকে কৌতুহল ভরে দেখার জন্য দল বেধে আসতে থাকে। আরাওয়ালীর বিশুষ্ক এবং উলঙ্গ পাহাড়ের গা ঘেষে অবস্থিত এলাকাটিতে একটি নতুন মন্দিরের আবির্ভাব সত্যিই আশ্চর্যের বিষয়।
ইতিহাস মতে আজমির, আদীপূরা, পালী, এবং কুলোয়ার জেলার স্থানীয় লোকেরা বিশেষভাবে সহনশীল ও অতিথি পরায়ণ বলে খ্যাত। যুগ যুগ ধরে মুসলমান হিসেবে বসবাস করে আসছিল তারা। মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থ করণ, ইসলামী রীতি অনুযায়ী বিবাহ শাদি ও হালাল খাদ্য ভক্ষণ সহ তারা মূর্তি পূজাকে ঘৃণা করতো। কিন্তু ঈদ ও শবে বরাতের ন্যায় হিন্দুদের হোলি [ফাগুন মাসে অনুষ্ঠিত হিন্দুদের এক বিশেষ অনুষ্ঠান] ও দেয়ালি উৎসবেও তারা অত্যান্ত উৎসাহের সাথে অংশগ্রহণ করতো বটে।
প্রচারণা ও ভীতি প্রদর্শন:
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বিশেষ পতাকাবাহী হলুদ রঙ্গের জীপ এ সকল জেলার বস্তিতে ঘুরে বেড়ায় এবং সন্ধ্যা হলে একটি ক্যাম্পে তারা অবস্থান নেয়। অতঃপর চলে হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত করার অনুষ্ঠান। প্রথমে সরলমনা গ্রাম্য লোকদের দীর্ঘ তিন ঘণ্টাব্যাপী একটি ফিল্ম দেখানো হয়, গানে গানে মুখরিত এই ফিল্মটি কিংবদন্তি বাদশাহ পৃথি রাজের জীবনী নিয়ে রচিত। ফিল্মটি চলাকালে উপস্থিত দর্শকদের এ ধারণা দেয়া হয় যে আমরা ওই বাদশাহর উত্তরসরী যার মৃত দেহকে প্রজ্জ্বলিত অগ্নিতে নৈবেদ্য করা হয়েছিল। এমনি নানা পন্থায় সরলমনা লোকদের আবেগ-অনুভূতিতে ঢেউ তোলার পর শুরু হয় দীক্ষা গ্রহণের প্রথম পাঠ- অগ্নি শপথ অনুষ্ঠান [আগুনে হাত রেখে শপথ নামা পাঠ]।
এভাবে হিন্দু ধর্ম ও দর্শন এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার সর্বপ্রকার চেষ্টা চালানোর পর সবশেষে ধমক দিয়ে বলা হয় যে কাশ্মীর এবং পাঞ্জাবের ন্যায় কোন পরিস্থিতি যদি এখানে সৃষ্টি হয় তাহলে মনে রেখো তোমরা কেউ বাচতে পারবেনা এইরূপ প্রোপাগান্ডা ও ষড়যন্ত্রের বিষ ফলে আজ সেখানে নিরাপত্তা ও শান্তি অনুপস্থিত। সমাজের পূতিগন্ধময় পরিবেশ বিরাজিত। সাম্প্রদায়িক সহমর্মিতা ও সুসম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে। যার ফলে কিছুদিনের ব্যবধানে ইসলামে বিশ্বাসী মুসলিম ঘরের এক যুবতী হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করার পর বলছে যে এখন আমাদের প্রভুর আদেশ মতে ঈদ উৎসব পালন করা পাপের কাজ। এ বাদামি দেবী রামপুরার ৫টি বস্তির ২ হাজার মানুষের একজন। এদেরকে ১৯৭৩ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এক অনুষ্ঠানে ইসলাম থেকে হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত করেছিল। ২৮ বছরের এক যুবকে পরেশ হাকিম সিংও তাদের একজন। সে এখন বলছে মেয়েদের কোনো ধর্ম কাজ নেই। তার মুসলমানি নাম ছিল হাকিম এবং পিতার নাম হোসেন কিন্তু সেই হাকিম আজ কোন মুসলমানের ঘরে পানিটুকু পান করতেও নারাজ।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কর্মকর্তাদের জন্য এটা নিঃসন্দেহে সীমাহীন খুশীর বিষয় যে ভারতকে পরিপূর্ণরূপে একটি হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত করার লক্ষ্যে তারা যথেষ্ট পরিমাণে সফলতার সাথে অগ্রসরমান। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সাধারণ কর্মীদের পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত আর এস এস এর প্রচারক উমা শঙ্করশর্মা আনন্দ ও খুশির অভিশয্যে বলেন প্রথম প্রথম যখন আমরা এ সকল এলাকায় প্রবেশ করি তখন এলাকার লোকেরা বলতো তোমরা গাধাকে গোসল করায়ে খোদা বানিয়ে ফেলো কিভাবে!? তোমরা আবার আমাদেরকে হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত করতে চাচ্ছ! কিন্তু এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ গর্ব ও আনন্দ প্রকাশ শর্মা মহাশয়দের জন্য বেশি কিছু নয়, কেননা শুধু দশ বছরে ৪৬ হাজার ৭৭৭ মুসলমানকে হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া তারা এলাকার প্রায় আরো ২ হাজার খ্রিস্টানকে হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত করেছে।
ষড়যন্ত্রের জাল:
কোন অঞ্চলের লোকের ধর্মীয় পরিবর্তন সাধন একদিনে সম্ভব হয় না বরং মাসের পর মাস বছরের পর বছর ধরে চলে এর পিছনে ষড়যন্ত্র। এছাড়া মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করা হয় এর পেছনে। যা দেয়া হয় ধর্মান্তরিত লোকদের হাতে তাদের ছোট্ট একটি অনুষ্ঠানের পেছনেও ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে এবং এদের জন্য প্রতিটি মন্দির নির্মাণে ব্যয় হয় ১৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রত্যেক কর্মীর জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা তো রয়েছেই।
সরলমনা গ্রামবাসীর চিন্তা ধারা ও মস্তিষ্ক ধোলাই করার জন্য এ পরিষদ স্থানে স্থানে তৈরি করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তম্মধ্যে হাসপাতাল এবং শিশুসদন কেন্দ্র বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ সকল প্রতিষ্ঠানে শুধু হিন্দু ধর্মের শিক্ষা দেয়া হয়। এছাড়া অল্পবয়স্ক যুবকদের জন্য হোস্টেল তৈরি করা হয়েছে। সেখানে তাদেরকে হিন্দু ধর্মের কাহিনী তো শোনানো হয়ই সাথে সাথে রয়েছে যৌন ক্ষুধা নিবারণের উপাদানও।
আজমীর থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে বেওয়ার নামক একটি শিল্প নগরী আছে। সেখানেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের একটি অফিস রয়েছে। সে অফিসে এমন একটি ডায়েরি আছে যে ডাইরিতে হিন্দু ধর্ম গ্রহণকারী সকল লোকের বিস্তারিত রিপোর্ট লিপিবদ্ধ করা হয়। যারা হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ভাষায় তাদেরকে বলা হয় তারা গৃহে পিরে এসেছে।
ধর্মান্তরিত করার নিয়ম:
হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত করার কাজ খুব দ্রুততার সাথে চলছে। এবং ধর্মান্তরের ছোট কোনো অনুষ্ঠানেও হিন্দু সংগঠনগুলোর ১ হাজার টাকার ব্যয় করে। হিন্দু ধর্মে দীক্ষা গ্রহণের পূর্বে তাদের নিকট থেকে প্রথমে একটি ফরমে স্বাক্ষর নেয়া হয়। এবং তাকে স্বীকার করতে হয় যে আজ থেকে সে ইসলামী সকল আচার-অনুষ্ঠান বর্জন করবে। এর কিছুদিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মান্তরের এক বিশেষ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়। তাদের এ প্রোগ্রাম সাধারণত রাতে খুবই সাবধানতার সাথে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
ইসলাম ত্যাগ করে হিন্দু ধর্ম গ্রহণকারী সকলেই অগ্নিতে হাত রেখে নিম্নোক্ত অঙ্গীকারনামা পাঠ করে থাকে। "আমি ঈশ্বরের নামে শপথ করছি যে আমার বংশে এ পর্যন্ত যে সকল কূপ্রথা প্রচলিত ছিল, ইসলামী নিয়মে বিবাহ করা, মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থ করা, ইত্যাদি এসকল কিছু পরিত্যাগ করব! এবং আজ থেকে পরিপূর্ণরূপে হিন্দু প্রথা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করব। (নাউজুবিল্লাহ্)।
এরপর তাদের বাহুতে সুতা বেঁধে দেয়া হয় এবং কপালে তিলক চিহ্ন দেয়া হয়। আর পান করানো হয় গঙ্গার জল এবং মুসলমানি নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় হিন্দু নাম। এমনিভাবে সমাপ্ত হয় তাদের ধর্মান্তরিতকরণ অনুষ্ঠান। এক অনুষ্ঠানে একইসাথে থেকে দেড় থেকে দু'শত লোক হিন্দুধর্মের প্রবিষ্ট হয়।
অবশ্য বিশ্ব হিন্দু পরিষদ তাদের এই ঘৃণ্য প্রচারণার প্রত্যেক অভিযানে স্বাভাবিক ভাবে সফল হতে পারছে না। কখনো কখনো তাদেরকে বাধার সম্মুখীনও হতে হয়। এর দূরবর্তী পাহাড়ি এলাকার বস্তিগুলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। এ এলাকায় ১৯৮৫ সালে মন্দিরের ভিত্তি স্থাপন করা হলে স্থানীয় মুসলমান যুবকেরা বোমা মেরে মন্দির উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। যার ফলে তৎক্ষণাৎ আরএসএস এর ৩ শত সশস্ত্র জোয়ান এসে উপস্থিত হয়। এবং পরবর্তীতে অস্ত্রের মহড়ার মাধ্যমে সে মন্দিরের ভিত্তি স্থাপন করা হয়। পাহাড়ের উপর অবস্থিত সেই মন্দিরের চূড়া টি আজ বহুদূর থেকে দৃষ্টিগোচর হয়। সেই মন্দিরের পদদেশে রয়েছে একটি মাদ্রাসা। এলাকার শুভ্রকেশ ওয়ালা এক বৃদ্ধ সাপ্তাহে একদিন এলাকার মহিলাদেরকে হিন্দুয়ানী পূজা পাঠ শিক্ষা দিত। এবং ঝাড়-ফুঁকের মাধ্যমে গরিব লোকদের কে চিকিৎসা করে আসছিল। তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে পূর্বের তুলনায় আজকের পরিস্থিতিতে এক মহা পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। পূর্বে এলাকার কেউ মন্দিরে আসতে সাহস পেত না। কিন্তু আজ এখানের মৌলভী সাহেবরা মাদ্রাসার ছেড়ে পালিয়েছে। যে মাদ্রাসায় একসময় ৩০ অথবা ৪০ জন মুসলিম ছেলে পড়ালেখা করতো। এখন সেখানে একজন ছাত্র ও নেই। আছে শুধু স্মৃতি হিসেবে মাদ্রাসার ধ্বংসাবশেষের কিছু অংশ।
গৃহযুদ্ধ:
কোন একটি জনগোষ্ঠীকে ধর্মান্তরিত করা হয়তো সহজ। কিন্তু তারপর? তারপর তাদের সামনে উপস্থিত হয় অসংখ্য বিপদ। এ ধরনের ধর্মান্তরিত লোকদের সামাজিক অবস্থান নিয়ে দেখা দেয় সবচেয়ে বড় সমস্যা। এহেন পরিস্থিতিতে নতুন ধর্ম গ্রহণকারী প্রায় সকলেই সমাজে অপরিচিত ব্যক্তি হিসেবে বসবাস করতে হয়। এ বিষয়ে এক বৃদ্ধের মুখে শুনুন! "ধর্মান্তরিত হওয়ার পর আমার এবং আত্মীয়-স্বজন এর মাঝে এক দূরত্বের প্রচীর সৃষ্টি হয়েছে। বিবাহ শাদির সুদৃঢ় বন্ধনে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। আরো বহু শ্রমিক ধর্মান্তরিত হবার পর এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে বলে জানায়। সে বলেছে স্বীয় ধর্মত্যাগ আমার থেকে আমার দাম্পত্য জীবনে এক বিষম প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। সে অত্যন্ত হতাশা ও ব্যথার সুরে বলেছে যখন আমি স্বীয় ধর্ম ত্যাগ করেছিলাম তখন আমার স্ত্রী সরাসরি তা অস্বীকার করে চলে যায়! এবং এখনো সে স্বীয় অবস্থার ওপর বহাল রয়েছে"।
তিন বছরের এক শিশুর কথা: যার স্নেহময়ী চেহারা থেকে এখনও মুসলমানিত্বের নিশানা মুছেনি, বিভিন্ন সমস্যায় আজ সে জর্জরিত সহপাঠী মুসলিম ছেলেদের সাথে তার সর্বদা ঝগড়া হচ্ছে।
পালী নামক গ্রামের নয়াবাড়ির তিনটি পরিবার হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথ বেছে নিয়েছে। ৮৯ বছর বয়স্ক এক ব্যক্তি যার গ্রীবাদেশে লটকানো হিন্দুয়ানী মালা সে স্বীয় ধর্ম ত্যাগের পর কতিপয় তিক্ত ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন যে ধর্ম ত্যাগের পর বস্তির মুসলমানরা আমাকে বাড়ীর উপর দিয়ে হাঁটাচলা করা এবং কূপ থেকে পানি নেয়ার ব্যাপারে এক নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছে। হোলি উৎসবের সময় এক রক্তক্ষয়ী খুনাখুনি হল সেখানে তাতে আমার ভাতিজা নিহত হয় এবং আমি নিজেও মারাত্মকভাবে আহত হই।
শত সমস্যার মধ্য দিয়ে এক বছর পর এই তিনটি পরিবারের লোকেরা নিজ ভীটা বাড়ি ছেড়ে অন্য এলাকায় গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এরপর বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সশস্ত্র কর্মীরা সেখানে এসে বিরান হয়ে যাওয়া বস্তিগুলোকে দ্বিতীয়বার আবার শুরু করে এবং গ্রামবাসী মুসলমানদেরকে এই বলে হুঁশিয়ার করে দেয় যে হিন্দু ধর্ম গ্রহণকারী পরিবারের উপর যারা হাত উঠাবে তাদের রক্ষা নেই! সেখানকার আইনজীবীরা এসব লোকের পক্ষ নেয় এবং তারা স্থানীয় আদালতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে এরপর হিন্দু ধর্ম গ্রহণকারীদের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধার দিকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বিশেষভাবে লক্ষ্য দেয়। এমনকি তাদের জন্য আলাদা কূপ খনন করে দেয়া হয়। বলুন কোন সমাজ কি এভাবে টিকতে পারে!?
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এক আবেগপ্রবণ উদ্যমী কর্মী রামসিং বলেন যে আমাদের ক্ষমতা প্রকাশিত হবার পর এখন মুসলমানরা বুঝে নিয়েছে যে তারা হিন্দু ধর্ম গ্রহণকারীদের সাথে যেরূপ আচরণ করবে তাদের সাথেও ঠিক সেরূপ আচরণ করা হবে। বৃদ্ধ কবির সিং বলেন আমার ভাতিজার মৃত্যুর পর তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় এত পরিমান হিন্দু উপস্থিত হয় যে আমি শঙ্কিত হয়ে পড়ই যে সহমর্মিতার নামে এবার আমাকেও নাকি হত্যা করে বসে। তাদের জঙ্গি ভাব দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই।
এমন একটি এলাকায় আজ এসব কিছু হচ্ছে, যেখানে সর্বদা সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক ও হিন্দু-মুসলমান আপসে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে বসবাস করছিল। আজমীরের ন্যায় এসব এলাকার মুসলমানরাও স্বীয় ইমান-আকিদা নিয়ে নিরাপদে ছিল। আজমির থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে পেশকার হিন্দু নেতাদের কেন্দ্র অবস্থিত। অথচ আজমির মুসলমানদের কেন্দ্র হওয়া সত্ত্বেও সেখানে শান্তি ও নিরাপত্তা বিরাজমান। একজন সরকারি অফিসার পিয়ারমুহিন তরপাট বলেন পুরো অযোধ্যায় দাঙ্গা-হাঙ্গামার আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে অথচ এখানে [আজমীর] আজ পর্যন্ত এমন কোনো লক্ষণই পরিলক্ষিত হয়নি।
আলেম সমাজের নিরবতা:
কট্টর মুসলিম বিদ্বেষী হিন্দুদের কর্তৃক এত কিছু হওয়া সত্ত্বেও রাজস্থানের আলেমগণ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয় বরং বিপুল সংখ্যক মুসলমান হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার বাস্তবতা উনারা স্বীকারই করেছেন না। আজমীর শরীফের মুসলিম নেতা সাইয়েদ নবী হোসাইনের সাথে এ ব্যাপারে সাক্ষাৎ করে তিনি বলেন শুধু নামেমাত্র মুসলমান যারা তারা এ স্বীয় ধর্ম পরিত্যাগ করেছে। তারা জানেইনা ইসলাম কি জিনিস! কেননা গ্রাম অঞ্চলে ইসলামের না কোন শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে! না তাবলীগের ব্যবস্থা রয়েছে! বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ফোরাম হিন্দুস্থানকে আয়ত্তে আনতে চাচ্ছে সত্য! কিন্তু সফল হতে পারবে না! এটা কি কোন বিজ্ঞোচিত কথা!?
অপরদিকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কর্মীরা বলছে যে উত্তর প্রদেশ ও বিহারের ঐসব মোল্লা মৌলভী যারা আরব রাষ্ট্রগুলো থেকে অর্থ পাচ্ছে এবং গ্রামের দিকে আসার চেষ্টা করছে তাদের প্রচারণা থেকে এলাকার লোকদের কে মুসলমান হওয়ার থেকে বাঁচানোর মানসে, প্রয়োজনে ঐসব মোল্লাদেরকে হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত করা হবে! তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী খুব দ্রুত কাজ চলছে। এছাড়া মহারাষ্ট্র এবং ইউপিতে বহুলোক এমনিতেই নাকি ইসলাম ছেড়ে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছে।
যারা হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে তাদেরকে হিন্দুয়ানী প্রথা, প্রচলন, আচার, অনুষ্ঠান, ইত্যাদি পালনের ব্যাপারে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়। হিন্দু পরিষদ এ সকল লোকদের সম্মান প্রদর্শনার্থে এমন এমন সব উৎসব তারা উদযাপন করেছে যা ইতিপূর্বে কখনো দেখা বা শোনা যায়নি। এ ব্যাপারে পরিষদের লিডার শর্মার ভাষ্য "এ ব্যাপারে কিছু সময় তো অবশ্যই নেবেই! নতুবা এসকল প্রদেশগুলোতে হিন্দু প্রথা প্রচলন পালনের জন্য লোকদেরকে অবশ্যই বাধ্য করা হবে"!
চিন্তার বিষয় হল এই যে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কর্মকর্তাগণ বিগত ক্ষমতাসীন কংগ্রেস নেতাদের খুব প্রশংসা করতো! কেননা তাদের এই সকল কর্মকান্ডে তখনকার ক্ষমতাসীনরা যথেষ্ট মদদ করতো! বিশেষ করে সাবেক কংগ্রেস নেতা হরদেব জোষী তাদেরকে সর্ব প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করেছে। বর্তমান প্রাদেশিক বিজেপি সরকারের আছেই। তবে পেশকার ওয়ার্ডের মুসলমান অ্যাসেম্বলি মেম্বার মুসলিম প্রতিনিধি রমজান খানের প্রতি চরম অসন্তুষ্টি! কেননা তিনি তাদের এ কর্মকাণ্ডের চরম বিরোধী।
এ ব্যাপারে শঙ্করশর্মার মতামত হলো আমরা আমাদের এই পরিকল্পনা কোন রাজনৈতিক দলের সাহায্য নিতে চাই না। এজন্য যে এক দলের সাহায্য নিতে গেলে অন্য দল এ পরিকল্পনাকে দলীয়করণ করতে চেষ্টা করবে।
মোটকথা এটা স্পষ্ট যে সত্য সুন্দর শান্তির ধর্ম ইসলাম পরিত্যাগ করে, যারা হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করছে, তারা বহু রকম প্রবঞ্চনা ও প্রলোবনের শিকার, ষড়যন্ত্রের শিকার থেকে এদের রক্ষা করার দায়িত্ব কাদের!? আমার এই জিজ্ঞাসার জবাব দেবেন মুসলিম নেতৃবৃন্দগণ।
-বেদার ডাইজেস্টের সৌজন্যে