JustPaste.it

আমাদের দেশের চালচিত্র

ফারুক হোসাইন খান

 

খৃষ্টীয় ১৯৯৭ সালের জুলাই মাস। এ মাস শুরু হওয়ার পাঁচ দিন পরে শুরু হয়েছে হিজরী সনের রবিউল আউয়াল মাস। মুসলমানদের নিকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ মাসটি। রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জন্ম ওফাতের স্মৃতি বিজড়িত এ মাসটি আগমনের সাথে সাথে প্রতিবছর নবী জীবনী আলোচনা ও সে অনুযায়ী ব্যক্তি জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের শপথ নেয় মুসলিম উম্মাহ। মুসলিম উম্মাহর অন্যতম অংশ বাংলাদেশও তা থেকে ব্যতিক্রম নয়। রবিউল আউয়ালের আগমনী বার্তা ঘোষিত হওয়ার সাথে সাথে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠান, সভা-সেমিনার, পত্র-পত্রিকায় ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ প্রকাশ প্রভৃতির মাধ্যমে নবী জীবনের বিভিন্ন দিকে আলোকপাত ও সে অনুযায়ী জীবন গড়ার প্রেরণা লাভ করেন।

প্রতি বছরই এ মাসটির আগমনে এদেশের মোহাম্মদী উম্মতের প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি ভালোবাসার বিশেষ প্রকাশ ঘটে থাকে। কিন্তু এ বছর এ বরকতময় মাসটিতে ইসলামদ্রোহী ও নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দুশমনদের বিশেষ তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা এবার যেন রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুসারীদের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোকপাতের পাশাপাশি ইসলাম, ঈমান-আকীদা ও ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে ঠাট্টা-মস্করাসহ বিষাক্ত প্রচারণার ঘটনাও কম ঘটে নি। ইসলামদ্রোহী মহল ইসলামকে হাসি-তামাসা, ঘৃণা-নিন্দা ও সমালোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত করতে যেন এ পবিত্রতম মাসটিকেই এবার বেছে নিয়েছে। মুক্তবুদ্ধি চর্চার নামে দুবৃত্ত চরিত্রের এ মহল এবার পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশনে বাক-স্বাধীনতাকে বেশ ভালো ভাবেই কাজে লাগিয়েছে। তাদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয়েছে যেন বাক-স্বাধীনতা নামক মৌলিক অধিকার শুধু তাদেরই একচেটিয়া সম্পদ।

 

এক

২৭ শে জুন দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার প্রথম পাতায় ব্যানার হেডিংয়ে একটি খবর ছাপা হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি স্বরূপ আইন মন্ত্রনালয়ের একটি নয়া বিধান প্রণয়নের। উক্ত খবরে বলা হয়, ফাঁসির পরিবর্তে প্রকাশ্যে শিরোচ্ছেদ করার প্রস্তাব উক্ত নয়া বিধানের অন্যতম বিষয়। এই শিরোচ্ছেদের খবর শুনে চিহ্নিত মহলের গায়ে যেন আগুন ধরে যায়। আইন মন্ত্রণালয়ের ওপর ভয়ানক ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে তারা। কতিপয় সংগঠন প্রতিবাদ করে উক্ত বিধানের বিরুদ্ধে ফতোয়াবাজীতে মত্ত হয় যা উক্ত পত্রিকায় ১লা জুলাই ভেতরের পাতায় আশ্রয় পায়। তারা শিরোচ্ছেদ-মৃত্যুদণ্ডকে মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন এবং এদেশে এ মধ্যযুগীয় শাস্তি বাস্তবায়ন একান্তই অগ্রহণযোগ্য বলে ফতোয়া দেন। মানবাধিকারের ধ্বজাধারী কতিপয় গুনীজনও ভয়ংকর ভাবে এ বিধানের বিরুদ্ধে ক্ষেপে ওঠেন। পত্র-পত্রিকায় নিবন্ধ,প্রবন্ধ, প্রতিবাদ লিপিতে তাদের তর্জন-গর্জন ধ্বনিত হতে থাকে। এদেরই একজন দৈনিক বাংলা বাজার পত্রিকায় একটি নিবন্ধের মাধ্যমে শিরোচ্ছেদ বিধানকে বর্বর, মধ্যযুগীয় ও তালেবানী কর্মকান্ড হিসেবে প্রমাণ করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালান। আইন মন্ত্রণালয় এমন একটি বিধানের প্রতি আগ্রহ দেখাতোর দরুন তাদের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধারে উক্ত বুদ্ধিজীবী বাংলা ভাষার ভান্ডারকে একেবারে উজাড় করে ফেলেন।

মৃত্যুদন্ড ও শিরোচ্ছেদের বিরুদ্ধে এমন যুদ্ধ ঘোষণার কারণ কি? একমাত্র কারণ এটি ইসলামী দন্ড বিধানের অন্তুর্ভুক্ত বিষয়। ইসলামের সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি বিধান বাস্তবায়িত হতে দেখে তাদের এ গাত্রদাহ অথচ ঈমানদার মুসলমানদের প্রতি আল্লাহ নির্দেশ করেছেন, "হে ঈমানদারগণ! নিহতের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাসের বিধান বিধিবদ্ধ করা হয়েছে।' (সূরা বাকারা-আয়াত ১৭৮)

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কিসাস বাস্তবায়নের পন্থা সম্পর্কে বলেন, 'তরবারী দ্বারাই কিসাস বাস্তবায়ন করতে হবে।' (ইবনে মাজা দিয়াত, বাব ২৫, নং - ২৬৬৭, ২৬৬৮, দারু কুতনী,কিতাবুল হুদুদ ওয়াদ-দিয়াত নং ২০, ২১,২২, ২৩, ৮২, ৮৯)

আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসলমানদের যে নির্দেশ দিয়েছেন উল্লেখিত মহল তাকে বর্বর, মধ্যযুগীয় এবং এদেশের জন্য অগ্রহণযোগ্য বলে ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছে। এ আক্রমণ শুধু ইসলামের একটি বিধানের ওপর নয়, ওরা চাতুর্যের সাথে আল্লাহ ও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওপরও আঘাত হেনেছে। কেননা, আল্লাহ ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশিত কোন বিধানকে বর্বর ও মধ্যযুগীয় আখ্যা দেয়া মানে এ বিধানের নির্দেশদাতাগণ বর্বর ও মধ্যযুগীয়। তাদের বক্তব্য মতে কুরআন হাদীস বর্বরতার ধারক এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহ বর্বর হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। (নাউযুবিল্লাহ)

একটি মুসলিম দেশে বাক-স্বাধীনতার নামে এভাবেই ফ্রি-স্টাইলে আল্লাহ, রাসূল ও ঈমান-আকীদা নিয়ে ঠাট্টা-মস্করা, হাসি-তামাসা চলছে। মুক্তচিন্তার নামে আল্লাহর ঘোষিত বিধানে বর্বরতার গন্ধ আবিষ্কার করে ওরা খোদ আল্লাহর ক্ষমতাকেই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। কেননা, এই মহা বিশ্বের সৃষ্টিকর্তার দেয়া বিধানে কোন অসংগতি উৎঘাটন তার চেয়েও কোন মহাজ্ঞানী সত্ত্বার পক্ষেই কেবল সম্ভব। এ ধরনের দাবী একমাত্র ফেরাউনের উত্তরসূরীদের পক্ষেই মানানসই। মূর্খ রাখাল যার জ্ঞানের পরিধি মেষ চড়াতো পর্যন্ত, তার কাছে মহাকাশ অভিযান তো  এক বিস্ময়কর ব্যাপার। কিন্তু সে যদি মহাকাশ অভিযান বিষয়ে পান্ডিত্য জাহির করে বসে তবে সে পান্ডিত্য কেবল মানব সমাজের জন্য ধ্বংসই ডেকে আনবে, কোন কল্যাণ নয়। এ ধরনের পন্ডিত বা 'বুদ্ধিজীবীর স্থান মানসিক হাসপাতালই উপযুক্ত, কোন সভ্য সমাজে নয়। এই ধরনের জ্ঞান পাপীদের উদ্দেশ্য করেই আল্লাহ পাক বলেছেন, 'ওরা গাধার চেয়েও বড় গর্ধভ।'

 

দুই

৯জুলাই, বুধবার। বাংলাদেশ টেলিভিশনের যুব উন্নয়ন মূলক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিল বর্তমান সময়ের বুদ্ধিজীবিদের (সেই ব্লকের) শিরোমনী কবি শামসুর রহমান। যুবকদের উন্নয়ন মূলক অনুষ্ঠান, আর তিনি 'ব্যক্তিত্ব' হিসেবে আমন্ত্রিত মুরব্বী। অতঃপর এদেশের যুবকদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করলেন, 'যুবকরা এদেশকে একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করুক, বিশেষ করে সমাজের ধর্মান্ধ ও ফতোয়াবাজদের প্রতিহত করে এ দেশকে প্রগতির পথে নিয়ে যাবে। ধর্মান্ধরা দেশকে পেছনের দিকে, অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে যাচ্ছে, সে প্রচেষ্টা রুখে দিয়ে দেশকে আলোর পথে নিয়ে যাবে, তরুণ যুবকদের কাছে এই আমার কামনা।'

বাংলাদেশ টেলিভিশন একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। জাতীয় চিন্তা-চেতনা, নীতি-আদর্শের প্রতিফলন থাকবে এর প্রতিটি কর্মকাণ্ডে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এ প্রতিষ্ঠানটি ইসলাম বিদ্বেষীদের মুখপাত্রে পরিণত হয়েছে। নাটক-সিনেমা প্রভৃতির মাধ্যমে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার ঐতিহ্য তো আছেই এখন ইসলাম বিদ্বেষী ‘বিশেষ ব্যক্তিত্বকে উপস্থিত করে জাতীয় আর্দশ বিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের কর্মকান্ড এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, তারা সংবিধানের স্বীকৃত মৌলিক নীতিকেও পদদলিত করে চলছে। সংবিধানের ৮ (১ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সর্ব শক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস হবে যাবতীয় কার্যাবলীর ভিত্তি।'

অথচ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রতিষ্ঠান থেকে ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার আহবান জানাতো হয়েছে যা সংবিধান স্বীকৃত তো নয়ই বরং সংবিধানের মৌলিক নীতির সাথে ভীষণভাবে সাংঘর্ষিক। আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের সাথে তথাকথিত ধর্ম নিরপেক্ষতার কোন সম্পর্ক নেই। কেননা ধর্ম নিরপেক্ষতার সংজ্ঞা ও অর্থ ধর্মের ব্যাপারে নিরপেক্ষতা বুঝায় অথচ আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করার পর সেই আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়ন করে সে ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকার কোন অবকাশ আমাদের নেই। এছাড়া আধুনিক বিশ্বে ধর্ম নিরপেক্ষতাকে নিজের ধর্ম বিশ্বাসের ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকার কথা (যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে, তাতে হস্তক্ষেপ না করা) বুঝালেও ধর্মকে প্রতিহত করার জন্যই ব্যবহৃত হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ তুরস্ক। ইসলামপন্থী আরবাকান সরকারের পদত্যাগের পর নতুন সরকার   ধর্মনিরপেক্ষতাকে অক্ষুন্ন রাখার কথা বলে শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষা লাভের ‘নিষিদ্ধ সময় পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে আট বছরে উন্নীতকরার অঙ্গীকার করেছে। অর্থাৎ সে দেশের সরকার শিশুদের আট বছরের আগে ধর্ম সম্পর্কে কিছুই জানতে দেবে না। একটি মুসলিম শিশু বাল্যকালে আল্লাহ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে কিছুই জানতে পারবে না, কুরআন হাদিস অধ্যয়ন করতে পারবে না, এসব ধর্মকে প্রতিহত করার প্রয়াস নয় কি?

বাংলাদেশ টেলিভিশনের কল্যাণে কবি শামসুর রহমান ধর্মান্ধ ও ফতোয়াবাজের জুজুর ভয় দেখিয়ে এমনই এক ধর্ম নিরপেক্ষতার পক্ষে ওকালতি করেছেন। যে বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি সংবিধানে ঘোষিত মৌলিক রাষ্ট্রীয় নীতিকেই পদদলিত করেছেন।

 

তিন

বাংলাদেশ টেলিভিশনেরই আরেক উপখ্যান। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অবমাননাকারী দেশী-বিদেশী কুচক্রীদের বিরুদ্ধে আহুত হরতালের দু’দিনের আগের ঘটনা। বিশেষ এক অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হয়ে এই জাতীয় প্রচার মাধ্যমের পর্দায় জাতির সামনে উপস্থিত হলেন কলামিষ্ট বুদ্ধিজীবী আবেদ খান। উদ্দেশ্য হরতাল আহবানকারীদের নেকাব খুলে জনগণকে তাদের চেহারা দেখিয়ে দেয়া। জাতির সামনে হরতাল আহবানকারীদের দেশের উন্নয়ন, প্রগতির বিরুদ্ধ শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা। আধা ঘন্টার এ বিশেষ অনুষ্ঠানের সারমর্ম যা’ উদ্ধার করা গেছে তা হলোঃ

(১) জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে হেবরনে সংঘটিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অবমাননার প্রতিবাদে একটি নিন্দা প্রস্তাব পাশ করার পরও কতিপয় রাজনৈতিক দলের হরতাল ডাকা জাতীয় সংসদের অবমাননা।

(২) এ হরতালের প্রতিপক্ষ কে, কার বিরুদ্ধে এ হরতাল।

(৩) এ হরতাল দেশকে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই।

(৪) অতীতে দেশে বা মুসলিম বিশ্বে কখনো এ ধরনের কর্মসূচী দেয়া হয় নি, অর্থাৎ এ হরতাল নজীরবিহীন।

আবেদ খানের এ বিশেষ অনুষ্ঠান ছিল মিথ্যাচারে ভরপুর। অথচ এ গুরুত্বপূর্ণ প্রচার মাধ্যমের কর্তা ব্যক্তিরা তা' অবলীলায় সম্প্রচার করে গেছে। এর মাধ্যমে যে আবেদ খান নিজের কলুষ চরিত্র জাতির সামনে উপস্থাপন করে চলছে তা হয়তো ইসলামী ইস্যুর প্রতি অতি মাতলামীর কারণে উপলব্ধি করতে পারে নি। আবেদ খান জাতির কাছে হরতাল আহবানকারীদের ঘৃণিত করতে যেয়ে বলেছেন যে, “ইসরাঈলী এক মহিলা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অবমাননা করার প্রতিবাদে এ হরতাল ডাকা হয়েছে। এ হরতালে শুধু এদেশের মানুষেরই কষ্ট-দুভোগ হবে, সে মহিলার কিছুই হবে না।

কিন্তু প্রায় দু’সপ্তাহ আগে ডাকা এ হরতালের প্রধান ইস্যু ছিল রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে সন্ত্রাসী আখ্যাদানকারী এদেশীয় কুচক্রী ডঃ আলী আসগরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, কুদরত-ই খুদার ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিল করে যুগোপোযোগী শিক্ষা নীতি প্রণয়নের দাবী। পরবর্তীতে হেবরনের কুখ্যাত ইহুদী মহিলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অবমাননার ঘটনাটি এর সাথে যুক্ত হয়। অথচ আবেদ খান প্রধান ইস্যুটি অর্থাৎ এদেশীয় নবীর দুশমনের শাস্তির দাবীটি বেমালুম চেপে গেলেন, যাতে এ কুচক্রীর কথা দেশের মানুষ না জানে আবার হরতাল আহবানকারীদের চরিত্র হরণও করা যায়।

আবেদখানের মিথ্যাচারের আর একটি নমুনা হলো ১৫ই জুলাইর হরতালকে নজীরবিহীন বলে আখ্যায়িত করা। অথচ সালমান রুশদীর কুখ্যাত 'স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশিত হওয়ার পর ওআইসির আহবানে সারা মুসলিম বিশ্ব একটি দিন হরতাল পালন করেছিল। ওআইসির আহবানে ১৯৮২ সালেও আল কুদস দিবসে ইসরাঈলের নিন্দা জ্ঞাপন করে একদিন হরতাল পালন করা হয়। একটি আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আবেদ খানদের এমন মিথ্যার বেসাতি কেন? ঐ দিনগুলোর কথা তো আবেদ খানদের ভুলে যাওয়ার কথা নয়।

আবেদখান ও তার দুই সহযোগী এ হরতালের প্রতিপক্ষ বা কার বিরুদ্ধে এ হরতাল ডাকা হয়েছে তা বুঝতে পারেন নি। আবেদ খানদের বালখিল্যতা দেখলে সত্যিই করুণা হয়। অবশ্য যারা একটা আন্তর্জাতিক বিষয়কে এক ডঃ আসগর আলীর ওকালতি করতে গিয়ে চেপে যেতে পারেন তাদের পক্ষেই এ ধরণের বালখিল্যতা শোভা পায়। রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে শুধু একটা নিন্দা প্রস্তাব পাশ করলেই ঈমানী দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? তাছাড়া যে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবমাননাকারী ইহুদী মহিলার বিরুদ্ধে  এতো বাগাড়ম্বর এতো নিন্দা জ্ঞাপন, স্বদেশের সেই রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবমাননাকারীর বেলায় রহস্যজনক নীরবতা পালন করেছে কেন এ সংসদ? আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের এ‘ডাবল স্টান্ডার্ড’ ভূমিকার বিরুদ্ধে যে এ হরতাল তা’ আবেদ খানদের বোধগম্য না হওয়ারই কথা। বিশেষ করে যাদের মেধা ও মননশীলতা ইসলামদ্রোহীদের রক্ষায় এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে নিবেদিত, জাতিকে মিথ্যাচারের শিক্ষা দেওয়া ছাড়া কিইবা আছে তাদের যোগ্যতা?