শরীয়ত বিরোধি আইন দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা কুফর। মৌলিকভাবে এর দু’ সূরত হতে পারে-

এক. ইসলামী শরীয়াহ’র উপর প্রতিষ্ঠিত এবং শরীয়াহ্ অনুযায়ী পরিচালিত কোন ইসলামী রাষ্ট্রে কোন এক বা একাধিক আইন ইসলামী আইনের বিপরীত প্রবর্তন করা।
এর তিন সূরত হতে পারে-

ক. শরীয়তের হারামকে বৈধতা দিয়ে দেয়া। যেমন, সুদ বা মদের বৈধতা দেয়া।

খ. শরীয়তের হালালকে অবৈধ করা। যেমন, কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করাকে নিষিদ্ধ করা।

গ. শরয়ী আইনের স্থলে ভিন্ন আইন জারি করা। যেমন, চুরির শাস্তি হাত কাটার পরিবর্তে জেল-জরিমানা নির্ধারণ করা। এখানে চুরিকে বৈধ করা হয়নি তবে তার শাস্তিতে পরিবর্তন করা হয়েছে।




দুই. শাসন ব্যবস্থার ভিত্তি ইসলামী শরীয়াহ’র উপর না হয়ে অন্য কোন মতবাদের উপর হওয়া। যেমন- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদী। যেমন- বর্তমান বিশ্বে আমাদের গণতান্ত্রিক মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের শাসন ব্যবস্থা।


এই সকল সূরতে শরীয়ত বিরোধি উক্ত আইন বা মতবাদ তারা নিজেরাই রচনা করতে পারে কিংবা অন্যের থেকে (যেমন- ইউরোপ, আমেরিকা, রাশিয়া বা ফ্রান্স থেকে) আমদানীও করতে পারে। তদ্রূপ উক্ত কুফরী শাসন বা কুফরী আইনকে পূর্ব থেকে চলে আসা ইসলামী শাসন বা ইসলামী আইন অপসারণ করেও জারি করতে পারে কিংবা পূর্ব থেকেই চলে আসা কুফরী আইন বা কুফরী শাসনকে বহালও রাখতে পারে। এই সকল সূরতই কুফর এবং তাতে লিপ্ত শাসকরা ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত কাফের ও মুরতাদ।




দলীল:
ক. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানার মুশরিকরা হারাম মাসকে হালাল করত এবং হালাল মাসকে হারাম করতো। তবে তারা তা নিজেরা চালু করেনি। তাদের পূর্বপুরুষরা চালু করে গিয়েছিল আর তারা শুধু তা ধরে রেখেছে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাদেরকেও কাফের সাব্যস্ত করেছেন এই আয়াতে-

إِنَّمَا النَّسِيءُ زِيَادَةٌ فِي الْكُفْرِ يُضَلُّ بِهِ الَّذِينَ كَفَرُوا يُحِلُّونَهُ عَامًا وَيُحَرِّمُونَهُ عَامًا لِيُوَاطِئُوا عِدَّةَ مَا حَرَّمَ اللَّهُ فَيُحِلُّوا مَا حَرَّمَ اللَّهُ زُيِّنَ لَهُمْ سُوءُ أَعْمَالِهِمْ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ

[নিশ্চয় কোন মাসকে পিছিয়ে দেয়া (কাফেরদের পূর্ববৎ কুফরের উপর আরোও নতুন) কুফর বৃদ্ধি করে। এর দ্বারা কাফেররা (তাদের পূর্ববৎ পথভ্রষ্টতার উপর আরোও) পথভ্রষ্ট হয়। তারা এ (পিছিয়ে দেয়া মাস) টি এক বছর হালাল করে এবং আরেক বছর হারাম করে, যাতে তারা আল্লাহ যা হারাম করেছেন তার সংখ্যা (অর্থাৎ চার) ঠিক রাখতে পারে। ফলশ্রুতিতে আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা তারা হালাল করে। তাদের মন্দ আমলসমূহ তাদের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে। আল্লাহ কাফের কওমকে হিদায়াত দেন না।] [তাওবা: ৩৭]


কাজেই বুঝা গেল, শরয়ী আইনের পরিবর্তে কুফরী আইন প্রবর্তনই কুফর, যদিও আইন একটাই হয় এবং চাই উক্ত আইন তারা নিজেরাই চালু করুক কি পূর্ব থেকে চলে আসা আইনকে বহাল রাখুক।




খ.
ইয়াহুদীদের পূর্ব পুরুষরা যিনার শাস্তি পরিবর্তন করেছিল। পরের যামানার ইয়াহুদীরা তা অনুসরণ করে চলেছে মাত্র। কিন্তু আল্লাহ তাআলা এদেরকেও কাফের সাব্যস্ত করেছেন।
﴿وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ﴾
‘যারা আল্লাহ তাআলা যে বিধান নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করে না তারাই প্রকৃত কাফের।’ (মায়েদা: ৪৪)

এ আয়াতটি তো মূলত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানার ইয়াহুদীদের কেন্দ্র করেই নাযিল হয়েছে। শরয়ী বিধান অপসারণ করে কুফরী বিধান চালু করার কাজটা পূর্বসূরি ইয়াহুদীরা করেছিল। কিন্তু কাফের শুধু তারাই সাব্যস্ত হয়নি, উত্তরসূরি যারা একে বহাল রেখেছে তারাও কাফের সাব্যস্ত হয়েছে।


উল্লেখ্য যে, ইয়াহুদীরা পূর্ণ শরীয়ত পরিবর্তন করেনি, কিছু আইন পরিবর্তন করেছিল। এতেই তারা কাফের সাব্যস্ত হয়েছে। কাজেই পূর্ণ শরীয়তকেই শাসন ব্যবস্থা থেকে অপসারণ করে দিয়ে শাসন ব্যবস্থার ভিত্তি কোন কুফরী মতবাদের উপর স্থাপন করা তো এর আগেই কুফর এবং অতি জঘন্য কুফর হবে।


গ. কুফরী সংবিধান ইয়াসিক প্রণয়ন করেছিল মূলত চেঙ্গিস খান। পরবর্তী তাতাররা তা অনুসরণ করে চলেছিল। কিন্তু ইবনে কাসীর রহ. এই পরের যামানার তাতারদেরকেই কাফের ফতোয়া দিয়েছেন।