JustPaste.it
User avatar
setu @setu · Apr 24, 2020

ইমাম শা'বী একটি চমকপ্রদ ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ঘটনাটি নিম্নরূপঃ-


একবার হযরত উমর রা. কোথাও সফরে যাচ্ছিলেন। পথে একটি কাফেলার সাথে তার সাক্ষাৎ হয়। সংগীদেরকে তিনি কাফেলার পরিচয় জিজ্ঞাসা করতে বললেন। একজন কাফেলার দিকে লক্ষ্য করে উচ্চস্বরে বললেন যে, তোমরা কারা? পরিচয় দাও। ঐ কাফেলায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হেজায অভিমুখে সফর করে আসছিলেন। তিনি এক সাথীকে বললেন যে, জবাব দাও اقبلنا من الفرج العميق 'আমরা সুদূর দূরান্তের মুসাফির।' হযরত উমর রা. বললেন, জিজ্ঞেস কর তারা কোথায় চলেছে? হযরত ইবনে মাসউদ রা. জবাব দিতে বললেন, إلى البيت العتيق 'আমাদের গতি প্রাচীন গৃহের দিকে।' হযরত উমর রা. পুনরায় জিজ্ঞেস করতে বললেন, কুরআনের সবচেয়ে মহিমাপূর্ণ আয়াত কোনটি? হযরত ইবনে মাসউদ রা. বললেন, উচ্চস্বরে আয়াতুল কুরসি পাঠ করে শুনিয়ে দাও।
হযরত উমর রা. পুনর্বার বললেন, জিজ্ঞেস কর যে, কুরআনের সে আয়াতটি কি যার প্রতিটি অংশের অনুসরণ অপরিহার্য? হযরত ইবনে মাসউদ রা. বললেন, জবাব দাও,
إِنَّ ٱللَّهَ يَأْمُرُ بِٱلْعَدْلِ وَٱلْإِحْسَٰنِ وَإِيتَآئِ ذِى ٱلْقُرْبَىٰ وَيَنْهَىٰ عَنِ ٱلْفَحْشَآءِ وَٱلْمُنكَرِ وَٱلْبَغْىِۚ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্নীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।
(আন-নাহ্‌ল ১৬:৯০)
হযরত উমর রা. বললেন, এবারে জিজ্ঞেস কর যে, কুরআনের সবচেয়ে ব্যাপক অর্থবহ আয়াত কোনটি?
হযরত ইবনে মাসউদ রা. জবাব দিতে বললেন,
فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُۥ
وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُۥ
অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে।
এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।
(আয-যিলযাল ৯৯:৭-৮)

হযরত উমর রা. বললেন, জিজ্ঞাসা কর যে, কুরআন পাকের লোমহর্ষক আয়াত কোনটি?
তদুত্তরে হযরত ইবনে মাসউদ রা. বললেন, শুনিয়ে দাও,
﴿لَّیۡسَ بِأَمَانِیِّكُمۡ وَلَاۤ أَمَانِیِّ أَهۡلِ ٱلۡكِتَـٰبِۗ مَن یَعۡمَلۡ سُوۤءࣰا یُجۡزَ بِهِۦ وَلَا یَجِدۡ لَهُۥ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلِیࣰّا وَلَا نَصِیرࣰا﴾ [النساء ١٢٣]
তোমাদের আশার উপর ও ভিত্তি নয় এবং আহলে-কিতাবদের আশার উপরও না। যে কেউ মন্দ কাজ করবে, সে তার শাস্তি পাবে এবং সে আল্লাহ ছাড়া নিজের কোন সমর্থক বা সাহায্যকারী পাবে না।
(আন নিসা ৪:১২৩)

হযরত উমর রা. পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন যে, কুরআনে কারীমের সবচেয়ে আশাপ্রদ আয়াত কোনটি?
হযরত ইবনে মাসউদ রা. জবাব দিতে বললেন যে,
قُلۡ یَـٰعِبَادِیَ ٱلَّذِینَ أَسۡرَفُوا۟ عَلَىٰۤ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُوا۟ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ یَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِیعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِیمُ﴾ [الزمر ٥٣]
বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(আয-যুমার ৩৯:৫৩)
এসব উত্তর শুনে হযরত উমর রা. বুঝে ফেললেন যে, ঐ কাফেলায় অবশ্যই আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. রয়েছেন। তিনি ছাড়া আর কারোরই আল-কুরআনের এতোটা গভীর উপলব্ধি নেই। তাই অবশেষে খলীফাতুল মুসলিমীন দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে বললেন, জিজ্ঞেস করে দেখ ঐ কাফেলায় অবশ্যই ইবনে মাসউদ রয়েছে। নির্দেশ অনুসারে একজন চিৎকার করে বলল, তোমাদের কাফেলায় কি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আছেন? উত্তর এলো হ্যা, তিনি এখানে উপস্থিত রয়েছেন।

 

-হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. ও তার ফিকহ, পৃষ্ঠা, ৭৫-৭৬, মূল- ড: হানাফী রাযী, অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত, প্রকাশকাল- জুলাই ১৯৮৮ ইং

img_20200413_200601.jpg