JustPaste.it
User avatar
Ishrak Abid @Ishrak_Abid · Feb 18, 2023

হাদিসের শিক্ষা সমস্ত পর্ব এক সাথে

 

 

#হাদিসের_শিক্ষা (পর্ব: ০১)
 

কারও ঝগড়া-বিবাদে হাততালি দেবেন না। তাহলে দেখবেন, খুব দ্রুতই এটি বুমেরাং হয়ে আপনার কাছে ফিরে আসছে। বরং সাধ্যানুসারে বিবাদ মিটিয়ে দিতে চেষ্টা করুন। বিবাদ মিটিয়ে দেওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ নেক আমলগুলোর অন্যতম।

.

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি কি তোমাদের বলবো না, কোন্ কাজটি (নফল) নামাজ, (নফল) রোজা এবং সাদাকাহর চেয়েও উত্তম?’’ তারা বললেন, ‘নিশ্চয়ই বলুন।’ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘সেটি হলো, মানুষের মধ্যকার বিবাদ মিটিয়ে দেওয়া। আর জেনে রেখো, ঝগড়া-বিবাদ ব্যক্তির ধার্মিকতাকে মুণ্ডিয়ে দেয়।’’ [আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২৭৫০৮; আবু দাউদ, আস-সুনান: ৪৯১৯; হাদিসটি সহিহ]

.

ঝগড়া মেটাতে গিয়ে প্রয়োজনে মিথ্যা বলারও অবকাশ আছে। এ ব্যাপারে সহিহ হাদিস রয়েছে। [তিরমিযি, আস-সুনান: ১৯৩৯; সহিহুল জামি’: ৭৭২৩]

.

ধরুন কবির এবং আবিরের মাঝে ঝামেলা হয়েছে। কেউ কাউকে দেখতে পারে না। এমতাবস্থায় তাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক করার জন্য কবিরের কাছে গিয়ে আবিরের ভালো গুণগুলো কৌশলে তুলে ধরবেন। কিংবা গিয়ে বলবেন, ‘কবির, তোমার সাথে দূরত্ব হওয়ায় আবিরের মন খারাপ হয়ে আছে। কিন্তু সে লজ্জায় বলতে পারছে না। কিংবা বলবেন, আবির মূলত তোমাকে অনেক ভালোবাসে এবং সম্মান করে। তোমার সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় সে মন খারাপ করে থাকে’ ইত্যাদি। অর্থাৎ, যেভাবে আপনি পারেন, একটা পক্ষকে কনভিন্স করবেন। এতে এই ধরনের মিথ্যা বলার সুযোগ আছে। কারণ, এখানে মিথ্যা বলার মাধ্যমে কেউ ভিকটিম হচ্ছে না বা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। তবে, বাড়াবাড়ি যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। আর, এই বিবাদ মেটানোর কাজ সবাই পারে না। আপনি যদি কৌশলী হন এবং আপনার পুরোপুরি আত্মবিশ্বাস থাকে, তবেই ধীরে-সুস্থে চেষ্টা করুন। না হয় সম্পর্কটা আরও জটিল হয়ে যেতে পারে।

.

আল্লাহ্ চাইলে এই সিরিজটি চলবে ইনশাআল্লাহ্। বিভিন্ন হাদিসের আলোকে সংক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা থাকবে, প্রতিটি পর্বে।

.

#Tasbeeh

-----------------------------------

 

হাদিসের শিক্ষা (পর্ব: ০২)

 

উমার (রা.) বলেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাড়িতে প্রবেশ করি। তখন তিনি চাটাইয়ের উপর শুয়ে ছিলেন। তাঁর দেহ ও চাটাইয়ের মাঝখানে কোনো বিছানা ছিলো না। তাঁর শরীরে চাটাইয়ের স্পষ্ট দাগ পড়ে গিয়েছিলো। তাঁর পার্শ্বে ছিলো খেজুর গাছের চোকার বালিশ। তা দেখে উমার (রা.) কেঁদে ফেলেন। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘হে উমার! হঠাৎ কেঁদে উঠলে কেনো?’’ উমার (রা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! পারস্য ও রোমের সম্রাট কত সুখ-বিলাসে বাস করছে। আর আপনি আল্লাহর রাসুল হয়েও এ অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন? আপনি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন, যেন তিনি আপনার উম্মতকে পার্থিব সুখ-সম্পদে সমৃদ্ধ করেন। পারস্য ও রোমের অধিবাসীদের আল্লাহ দুনিয়ার সুখ-সামগ্রী দান করেছেন, অথচ তারা তাঁর ইবাদত করে না!’ এ কথা শুনে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেলান ছেড়ে ওঠে বসলেন এবং বললেন, ‘‘হে উমার! এই ব্যাপারে তুমি এমন কথা বলছো? ওরা হলো এমন জাতি, যাদের সুখ-সম্পদকে এ জগতেই দ্রুত দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তুমি কি চাও না যে, ওদের সুখ ইহকালে আর আমাদের সুখ পরকালে হোক?’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ৫১৯১; মুসলিম, আস-সহিহ: ৩৭৬৮]

এই হাদিসটি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিরাট পরিবর্তন এনে দিতে পারে। দুনিয়া নামক মরীচিকার পেছনে ছুটতে থাকা ব্যক্তিদের থমকে দিতে পারে। কিন্তু আমরা তো ইতোমধ্যে দুনিয়াতে মজে গিয়েছি। তাই, জীবন নিয়ে ভাববার মতো সময়টুকু আমাদের হয়ে ওঠে না।

কাফিররা এত সুখে আছে, মুসলিমরা কত কষ্টে জীবনযাপন করছে, এই দুঃখে যারা অস্থির, তাদের জন্য উপরের হাদিসটিতে উত্তর আছে। আমরা আখিরাতে বিশ্বাসী মুমিন। আমরা আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টি জান্নাতে গিয়ে পরিপূর্ণ আনন্দ উদযাপন করবো ইনশাআল্লাহ্। দুনিয়াতে কাফেরদের চাকচিক্যে আমরা বিভ্রান্ত হবো না। আল্লাহ্ বলেন, ‘‘দেশে দেশে কাফেরদের চাল-চলন যেনো তোমাদের ধোঁকায় না ফেলে!’’ [সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯৬]

এক হাদিসে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘মুমিনের ব্যাপারটি বেশ আশ্চর্যজনক! কেননা, তার সকল কাজই কল্যাণময়। যদি সে কোনো মুসিবতে নিপতিত হয়, তাহলে ধৈর্যধারণ করে, যা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি কোনো নিয়ামতপ্রাপ্ত হয়, তাহলে (আল্লাহর) প্রশংসাসহ কৃতজ্ঞতা আদায় করে, এটিও তার জন্য কল্যাণকর হয়।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ২৯৯৯]

আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেন, “যেদিন কাফিরদের জাহান্নামের সামনে হাজির করা হবে (সেদিন তাদের বলা হবে), তোমরা তোমাদের দুনিয়ার জীবনেই যাবতীয় সুখ-সম্ভোগ নিঃশেষ করে ফেলেছো এবং সেগুলো উপভোগও করেছো। সুতরাং আজ তোমাদের দেওয়া হবে অপমানজনক শাস্তি; কারণ তোমরা জমিনে অন্যায়ভাবে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে এবং পাপাচার করতে।” [সুরা আহকাফ, আয়াত: ২০]

‘‘সুতরাং ধৈর্য ধারণ করো। শুভ পরিণাম মুত্তাকিদের জন্যই।’’ [সুরা হুদ: আয়াত ৪৯]

.

#Tasbeeh

--------------------------------------

 

হাদিসের শিক্ষা (পর্ব : ০৩)

প্রিয় ভাই-বোনেরা, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের ‘প্রিয়’ মানুষদের কাতারে স্থান পাওয়ার জন্য দুনিয়াবি কোনো যোগ্যতারই প্রয়োজন নেই। পুরো পৃথিবীও যদি আপনাকে অবহেলা করে, তবুও আপনার হতাশ হওয়ার কিছু নেই।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমার পরিবারের লোকেরা মনে করে—তারাই আমার সবচেয়ে কাছের। অথচ, আমার অধিক কাছের হলো মুত্তাকি-আল্লাহভীরু লোকেরা; তারা যে-ই হোক, যেখানেই থাকুক।’’ [আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২২০৫২; আলবানি, সহিহুল জামি’: ২০১২; হাদিসটি সহিহ]

মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলাও একই কথা বলেছেন। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক আল্লাহভীরু-মুত্তাকি।’’ [সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১৩]

হতে পারে—আপনার মেধা কম, গায়ের রঙ কালো, মাল-সম্পদ খুবই কম, উল্লেখ করার মতো কোনো পরিচয় নেই, কোনো সামাজিক স্ট্যাটাস (মর্যাদা) নেই; তবুও আপনি আল্লাহর তালিকায় ‘সর্বাধিক সম্মানিত’ হতে পারেন বা আল্লাহর রাসুলের ‘সবচেয়ে কাছের মানুষ’ হতে পারেন। শর্ত একটাই, তা হলো, আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকতে হবে এবং তাঁর নির্দেশিত পথে চলতে হবে। এই যোগ্যতা অর্জনের দিক থেকে আমরা সবাই সমান। অর্থাৎ, আপনি যেই হোন, এই যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন। এই যোগ্যতা অর্জনের জন্যে আপনি কোনো অজুহাত (excuse) দাঁড় করাতে পারবেন না। কারণ আল্লাহ কাউকে পাপী হতে বাধ্য করেননি। সুতরাং, মুত্তাকি হতে না পারলে এটা বলতে পারবেন না যে, ‘হে আল্লাহ! এই এই কারণে আমি মুত্তাকি হতে পারিনি।’

সুতরাং বুঝা গেলো, দুনিয়াবি নিয়ামত ও যোগ্যতায় আল্লাহ আমাদের মাঝে কম-বেশি করলেও আখিরাতে ভালো করার জন্য এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সবাইকে সমান যোগ্যতা দিয়েছেন। সেই যোগ্যতা অনুযায়ী কে কতটুকু আমল করতে পারলাম, সেটাই আসল ব্যাপার। আখিরাতে ভালো করার জন্য কী কী যোগ্যতা দরকার? উত্তর সহজ: শির্ক-কুফর থেকে বেঁচে থাকতে হবে, বেশি বেশি নেক আমল করতে হবে, বান্দার হক নষ্ট করা যাবে না এবং গুনাহ থেকে দূরে থাকতে হবে। এবার বলুন, এই কাজগুলো করার ক্ষেত্রে আমাদের মাঝে তফাৎটা কীসের? উত্তর হলো: মানসিকতার। আমরা যারা দুনিয়াকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি, তারা কি এই অজুহাত দাঁড় করাতে পারবো যে, ‘অমুক অমুক কারণে আমি এসব করতে পারি না?’ সুতরাং আসুন, আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত ও যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের আখিরাতের ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ ও নিরাপদ করি। মহান রব আমাদের কবুল করুন।

#Tasbeeh

---------------------------------------

 

হাদিসের শিক্ষা (পর্ব: ০৪)

চারটি কাজের বিনিময়ে এমন চারটি পুরস্কার রয়েছে, যা দ্বারা ব্যক্তি দুনিয়া এবং আখিরাত সফলকাম হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।

▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো মুমিনের দুঃখ দূর করে দেবে, আল্লাহ্ কিয়ামতের দিন তার দুঃখ দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির বিপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ্ দুনিয়া ও আখিরাতে তার বিপদ দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহ্ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। যে বান্দা নিজ (মুসলিম) ভাইকে সাহায্য করবে, আল্লাহ্ সে বান্দাকে সাহায্য করবেন।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ২৬৯৯]

শির্ক ও কুফর থেকে বেঁচে থাকা একজন ঈমানদারের সম্মান আল্লাহর নিকট পবিত্র কা’বার চেয়েও বেশি [ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৭৮৫; হাদিসটি সহিহ]। আল্লাহ্ তাঁর মুমিন বান্দাদের অনেক বেশি ভালোবাসেন। ফলে, যারা আল্লাহর ভালোবাসার বস্তুকে ভালোবাসে, আল্লাহ্ তাদেরও ভালোবাসেন। এজন্য, যখনই সুযোগ আসে, ঈমানদারদের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করে দিন। তাদের বিপদে পাশে দাঁড়ান। তাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করুন। তাদের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখুন (যদি সেই দোষ-ত্রুটি সে প্রকাশ্যে না করে এবং সমাজ তার দ্বারা কলুষিত না হয়)।

উল্লেখ্য, শুধু ঈমানদার ব্যক্তিকেই নয়, যেকোনো মানুষকে সাহায্য করা যায়। সে প্রসঙ্গে অন্য কোনো পোস্টে আলোচনা করা হবে, ইনশাআল্লাহ।

আমরা প্রতিটি সেকেন্ড আল্লাহর সাহায্যের মুহতাজ (মুখাপেক্ষী)। আর, আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার অন্যতম একটি মাধ্যম হলো, মানুষকে সাহায্য করা। হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘বান্দা যতক্ষণ তার (মুসলিম) ভাইয়ের সাহায্যে থাকবে, আল্লাহ্ তা‘আলা ততক্ষণ তার সাহায্যে থাকবেন।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ২৬৯৯]

সবচেয়ে বড় কথা হলো, মানুষকে সাহায্য করা এবং মানুষের কল্যাণকামী হওয়া এমন একটি গুণ, যা একজন ব্যক্তিকে শুধু আল্লাহর কাছেই নয়, মানুষ এবং সকল সৃষ্টির কাছেই প্রিয় করে তোলে। এ ধরনের লোকদের মন হয় খুবই কোমল, ফলে অন্যদের তুলনায় তাদের মানসিক অশান্তি অনেক কম হয়ে থাকে। এগুলো ইন্সট্যান্ট পুরস্কার। আখিরাতের পুরস্কার তো আছেই।

এ প্রসঙ্গে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট দেওয়া হবে, ইনশাআল্লাহ। যেমন: অহংকারী বা জালিমের সাথে আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত।

#Tasbeeh

----------------------------------

 

হাদিসের শিক্ষা (পর্ব: ০৫)

যে হাদিসের উপর আমরা আমল করি না, অথচ ঈমানের পরিপূর্ণতার জন্য এটি জরুরি:

▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬

আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ (প্রকৃত) মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য সেটাই পছন্দ করবে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ৪৫]

এই হাদিসটি ইসলামি শরিয়াহর অন্যতম মূলনীতি, যার উপর ভিত্তি করে নিত্যনতুন অসংখ্য মাসয়ালার সমাধান বের করেছেন প্রত্যেক যুগের শ্রেষ্ঠ আলিমগণ।

এই হাদিসটির উপর যদি কোনো সমাজের লোকজন আমল করতে শুরু করে, তবে সেই সমাজ বদলে যাবে ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসায়। সাহাবিগণ এই হাদিসের উপর দারুণভাবে আমল করে গেছেন। তাই, কুরআনে এসেছে, ‘‘মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল। তার সাথীরা কা(ফি)রদের প্রতি কঠোর; নিজেদের মাঝে একে অপরের প্রতি করুণাময়।’’ [সুরা ফাতহ, আয়াত: ২৯]

শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু সলিহ আল উসাইমিন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তুমি নিজের জন্য যা পছন্দ করো, তা যদি তোমার ভাইয়ের জন্যও পছন্দ না করো, তবে তুমি বড় গুনাহে লিপ্ত রয়েছো।’ [শারহু বুলুগিল মারাম: ৩/৫৩৬]

ধরুন, আপনি বাজারে যাচ্ছেন তরকারি কিনতে। তো, আপনার দূর সম্পর্কের কোনো আত্মীয় আপনাকে বলে দিলো, ‘আমি একটু বিজি আছি। তুমি আমার জন্যও কিছু তরকারি নিয়ে এসো।’ আপনি নিজের জন্য একটা একটা করে বেছে বেছে টমেটো নিলেন। এরপর দোকানদারকে বললেন, আরো এক কেজি টমেটো দিতে (সেই ব্যক্তির জন্য)। এ পর্যায়ে আপনি আর বাছেননি, বরং দোকানদার ভালো-মন্দ মিলিয়ে যা দিয়েছে, তাই নিয়ে এসেছেন। আপনি হয়ত ভাবতে পারেন, ‘আমি যে তার জন্য এগুলো এনেছি, এটাই বেশি। বেছে বেছে আনতে হবে কেনো?’

আপনার এই ধরনের চিন্তা ও কাজ আপনার ঈমানের দুর্বলতা প্রমাণ করে। কারণ আপনি নিজের জন্য যা পছন্দ করেছেন, অন্যের জন্য তা করেননি। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনার এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা ঈমানের পরিপূর্ণতার জন্য জরুরি।

#Tasbeeh

------------------------------------

 

হাদিসে রশিক্ষা (পর্ব: ০৬)

আপনারা জানেন, আদম (আ.)-এর এক সন্তান অপর সন্তানকে হত্যা করেছিলো। হত্যাকারী ছিলো কাবিল, যে তার ভাই হাবিলকে ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে হত্যা করেছিলো। কাবিলের ব্যাপারে হাদিসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি এসেছে।

আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যেকোনো ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হবে, তার রক্তপাতের (অপরাধের) একটা অংশ আদমের প্রথম সন্তান (কাবিল)-এর উপর বর্তাবে। কেননা, সে-ই সর্বপ্রথম হত্যার রীতি চালু করেছে।” [বুখারি, আস-সহিহ: ৩৩৩৫; মুসলিম, আস-সহিহ: ৪৪৭৩]

সুতরাং, আমাদের মাধ্যমে যেন এমন কোনো খারাপ কাজের সূচনা না হয়, যার জন্য কবরে শুয়েও এর শাস্তি পেতে হয়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ইসলামে ভাল কোনো রীতি চালু করবে, সে তার নিজের এবং সেই সমস্ত লোকের সওয়াব পাবে, যারা তার (মৃত্যুর) পর এটির উপর আমল করবে। তাদের সওয়াবের কিছু পরিমাণও কম করা হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোনো মন্দ রীতির প্রচলন করবে, তার উপর তার নিজের এবং সেই লোকদের গুনাহ বর্তাবে, যারা তার (মৃত্যুর) পর এটির উপর আমল করবে। তাদের গুনাহর কিছু পরিমাণও কম করা হবে না।” [মুসলিম, আস-সহিহ: ২৩৯৮; নাসাঈ, আস-সুনান: ২৫৫৪]

ইমাম গাযালি (রাহ.) বলেন, ‘সুসংবাদ তার জন্য, যার মৃত্যুর সাথে সাথে তার গুনাহগুলোও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। আর দীর্ঘ আফসোস তার জন্য, যে মৃত্যুবরণ করেছে, অথচ তার গুনাহগুলো শত বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে। এ কারণে তাকে কবরে আজাব দেওয়া হয় এবং যতদিন তার এই গুনাহ বিলুপ্ত না হবে, ততদিন তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (গাযালি, ইহয়াউ উলুমিদ্দিন: ২/৭৪)

#Tasbeeh

-----------------------------------------

 

হাদিসের শিক্ষা (পর্ব: ০৭)

রিযিকের প্রশস্ততা এবং হায়াত বৃদ্ধির পথটি আমরা নিজেরাই বন্ধ করে রাখতে চাই।

আনাস ইবনু মালিক (রা.) বলেন, আমি শুনেছি, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এটি পছন্দ করে যে, তার জীবিকা প্রশস্ত (প্রাচুর্যময়) হোক অথবা তার আয়ু বৃদ্ধি হোক, তবে সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখে।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ২০৬৭; মুসলিম, আস-সহিহ: ২৫৫৭]

তাহলে বোঝা গেলো, রিযিকের প্রশস্ততা এবং হায়াত জন্য আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা জরুরি বিষয়। তাছাড়া এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজও। আমরা কী করি? বিশেষ করে, স্বামী তার আত্মীয়দের প্রতি খেয়াল রাখলে এবং টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করলে স্ত্রী মন খারাপ করে, মুখ ভার করে রাখে। আবার স্ত্রী যদি নিজের বাবা-মা, ভাই-বোন বা আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ রাখে এবং তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখে, তবে অনেক সময় স্বামীরা অসন্তুষ্ট হয়। অথচ, এভাবে দুজনই দুজনের ক্ষতি করছে। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী এক আত্মার মতো হয়ে যায়। স্বামীর কষ্টই স্ত্রীর কষ্ট, স্ত্রীর ক্ষতিই স্বামীর ক্ষতি। এটি কি আমরা অনুভব করি? অনুভব করলে অবশ্যই পরস্পরের আত্মীয়তার বন্ধনকে মজবুত করার জন্য একে অপরকে তাগিদ দিতাম।

রিযিকের প্রশস্ততা (বৃদ্ধি) এবং আয়ু বৃদ্ধি বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা নিয়ে আলিমগণ বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার মধ্যে সুন্দর ব্যাখ্যাটি হলো, রিযিক ও আয়ুষ্কাল নির্ধারিত। এর কোনো হেরফের হয় না। তবে, এই হাদিসে রিযিক ও আয়ুতে বরকত হওয়া বুঝানো হয়েছে। কোনো কিছুতে বরকত হলে, সেটি পরিমাণে কম হলেও তাতে সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধি থাকে অনেক বেশি। এটি আল্লাহর অদৃশ্য নিয়ামত।

আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখার গুরুত্ব বুঝতে নিচের দুটো হাদিসটিই যথেষ্ট, ইনশাআল্লাহ।

আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘‘আমিই রহমান (দয়ালু) আর আত্মীয়তার বন্ধন হচ্ছে রাহিম, যা আমি আমার নাম থেকে বের করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক রাখবে, আমি তার সাথে সম্পর্ক রাখবো এবং যে আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ করবে, আমিও তার থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করবো।’’ [আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৬৯৪; হাদিসটি সহিহ]

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “দু’টি গুনাহ্ ছাড়া এমন কোনো গুনাহ্ নেই, যে গুনাহ্‌গারের শাস্তি আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতেই দেবেন এবং তার জন্য আখিরাতের শাস্তি তো আছেই। গুনাহ্ দুটি হলো: অত্যাচার ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা।” [আবু দাউদ, আস-সুনান: ৪৯০২; তিরমিযি, আস-সুনান: ২৫১১; হাদিসটি সহিহ]

.

#Tasbeeh

-----------------------------------------

 

হাদিসের শিক্ষা (পর্ব: ০৮)

বান্দার সফলতার জন্য আল্লাহ কত সহায়!

আবু মুসা (রা.) বলেন, আমি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একবার বা দুইবার নয়, বহুবার বলতে শুনেছি, ‘‘কোনো বান্দা নেক কাজ করলে (অর্থাৎ, সেই নেক কাজটি রেগুলার করলে), পরবর্তিতে কোনো রোগ বা সফর তাকে সে কাজ থেকে বিরত রাখলে, তার আমলনামায় সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় করা নেক আমলের ন্যায় সওয়াব লেখা হবে।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ২৮৩৪; আবু দাউদ, আস-সুনান:৩০৯১]

এজন্য আমাদের উচিত—সুস্থতা, অবসর এবং স্বাভাবিক অবস্থায় অধিক পরিমাণে নেক আমল করা। কারণ, মানুষের জীবনের কোনো গ্যারান্টি নেই। যখন-তখন জীবনের রঙ বদলে যায়। সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থার ইবাদতের মর্যাদা বেশি। একবার এক ব্যক্তি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললো, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কোন্ সাদাকাহর প্রতিদান সবচেয়ে উত্তম?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার সে সময়ের সাদাকাহ, যখন তুমি সুস্থ থাকবে, সম্পদের প্রতি লোভ থাকবে, তুমি দরিদ্রতার ভয় করবে এবং ধন-দৌলতের আশা রাখবে (এ অবস্থার সাদাকাহ প্রতিদানের দিক থেকে সর্বোৎকৃষ্ট)। আর তুমি সাদাকাহ করতে এমন বিলম্ব করো না যে, তোমার মৃত্যু চলে আসবে আর তখন বলবে, ‘অমুকের জন্য এত, অমুকের জন্য এত।’ অথচ তা ইতোমধ্যে অমুকের (অর্থাৎ উত্তরাধিকারীর) হয়ে গেছে।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ১৪১৯; মুসলিম, আস-সহিহ: ১০৩২]

এমন একটা সময় আসবে, যখন অনেক অনেক ইবাদত করতে মন চাবে, কিন্তু বিভিন্ন কারণে তা সম্ভব হবে না। অথচ সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ইবাদতে লেগে থাকলে, অসুস্থ ও কঠিন সময়ে সেসব ইবাদত করতে না পারলেও সমান সওয়াব পাওয়ার সুযোগ থাকতো। ইমাম শাফি'ঈ (রাহ.)-এর একটি কথার সারমর্ম অনেকটা এমন—

এখন তোমার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও নেক কাজ করছো না; কিন্তু এমন সময় (বার্ধক্য বা ব্যস্ততা) আসবে, যখন নেক কাজ করতে চাবে, কিন্তু পারবে না।

এই পোস্টের সবার উপরের হাদিসটি আবার পড়ুন এবং করণীয় নির্ধারণ করুন।

.

#Tasbeeh

-----------------------------------

 

হাদিসের শিক্ষা (পর্ব: ০৯)

জীবনে অনেক মানুষকে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় আপনার ক্ষমা করতেই হবে। সুতরাং ক্ষমা করার সুন্দর পদ্ধতিটি জানা থাকা জরুরি। প্রথমে নিচের হাদিসটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

আয়িশা (রা.) বলেন, ‘নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো মন্দের জবাব মন্দ দিয়ে দিতেন না, বরং ক্ষমা করে দিতেন। পরবর্তীতে তা কখনো আলোচনাও করতেন না।’ [আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২৫৪৫৬; ইবনু হিব্বান, আস-সহিহ: ৬৪৪৩]

এই হাদিসে কাউকে ক্ষমা করার কয়েকটি ধাপ বর্ণিত হয়েছে।

১. মন্দ আচরণের জবাবে মন্দ আচরণ না করা।
২. খারাপ কথার জবাবে খারাপ কিছু না বলা।
৩. মন্দ আচরণটির জবাব উত্তম কোনো উপায়ে দেওয়া।
৪. মন্দ আচরণকারীকে ক্ষমা করে দেওয়া।
৫. ক্ষমার কথাটি কখনো আলোচনাও না করা।

আমরা কী করি? প্রথমে একবার ঝগড়া করি। এরপর হয় বিরক্ত হয়ে, না হয় বাধ্য হয়ে তাকে ক্ষমা করি—তাও ভেতরে ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে রেখে। আবার, তাকে ক্ষমা করার বিষয়টি মাথায় নিয়ে ভাবি—তার প্রতি বিরাট এহসান (অনুগ্রহ) করেছি। কারণে-অকারণে এই ব্যাপারটি নিয়ে কথাও বলি। অথচ নবিজির আচরণ ছিলো সম্পূর্ণ ভিন্ন।

আমাদের হজমশক্তি কম। আমরা সামান্য ভালো কিছু করলেও সেটিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রচার করতে ভালবাসি—ইচ্ছায় হোক বা আনমনে। তবে, এটি ভালো কোনো স্বভাব নয়। ক্ষমাকারীদের ব্যাপারে কুরআন হাদিসে অসাধারণ মর্যাদার কথা এসেছে। সুতরাং আমরা কাউকে ক্ষমা করলে যেন নেকি পাওয়ার উদ্দেশ্যেই করি, এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই যেন আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়। আর সেটি দিয়ে ভবিষ্যতে তাকে যেন ছোট না করি, খোঁটা না দেই। কারণ খোঁটা দেওয়া মুমিনের সিফাত (গুণ) নয়।

আর আপনি যদি কাউকে উপরে উল্লিখিত নববী আদর্শের আলোকে ক্ষমা করতে পারেন, তবে সে যদি আপনার শত্রুও হয়ে থাকে, তবুও সে আপনার বন্ধুতে পরিণত হবে। যেমনটি কুরআনে এসেছে, “ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ ও জুলুমকে উৎকৃষ্ট পন্থায় প্রতিহত করো (জুলুমের পরিবর্তে অনুগ্রহ কর)। এরূপ করলে, যে ব্যক্তি ও তোমার মধ্যে শক্ৰতা আছে, সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে।” [সুরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩৪]

এটিই ছিলো নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ। তাই, জীবনকে সুন্দর করতে উত্তম পদ্ধতিতে ক্ষমা করার প্র্যাকটিস করতে হবে।

.

#Tasbeeh

--------------------------------------------

 

হাদিসের শিক্ষা (পর্ব: ১০)

কখনো কোনো গর্তে প্রস্রাব করা উচিত নয়। এতে কখনও বড় ধরণের ক্ষতি হতে পারে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ যেন কখনো কোনো গর্তে প্রস্রাব না করে।’’ (হাদিসটির অন্যতম বর্ণনাকারী) কাতাদাহ্ (রাহ.)-কে লোকজন জিজ্ঞাসা করলো, ‘গর্তে প্রস্রাব করলে কী সমস্যা?’ তিনি বলেন, ‘বলা হহয়ে থাকে যে,ওটা জ্বিনদের বসবাসের স্থান।’ [নাসাঈ, আস-সুনান: ৩৪; আবু দাউদ, আস-সুনান: ২৯; আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২০৭৭৫; অধিকাংশ মুহাদ্দিস হাদিসটিকে সহিহ/হাসান বলেছেন]

আলিমগণ গর্তে প্রস্রাব করাকে মাকরুহ বলেছেন। তাই, এ থেকে বিরত থাকা উচিত।

বর্ণিত আছে যে, গর্তে প্রস্রাব করার কারণে আনসার সাহাবি সা’দ বিন উবাদাহ্ (রা.)-কে জ্বিনেরা মেরে ফেলে; তাঁর বুক এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়। তাঁর মৃত্যুর পর শূন্যে ঘোষণা আসে, ‘আমরাই খাযরাজ গোত্রের নেতা সা’দ বিন উবাদাহকে হত্যা করেছি।’ ঘোষণাকারীকে দেখা যায়নি, কেবল তার কণ্ঠই শোনা গেছে। [ইবনু আবদিল বার, আল-ইসতি‘আব: ২/৫৯৯]

জ্বীনের ব্যাপারটি ছাড়াও গর্তে প্রস্রাব করা উচিত নয়। কারণ আল্লাহর অনেক দুর্বল সৃষ্টজীব গর্তে বসবাস করে। তাদেরকে কষ্ট দেওয়া উচিত নয়। দুর্বল বিভিন্ন প্রাণীর ঘর কখনও গর্তে হয়ে থাকে। তখন প্রস্রাবের কারণে তাদের বাসস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া, অনেক সময় গর্তে সাপ, বিচ্ছুর মতোতো বিষাক্ত প্রাণীও থাকে। এরাও আক্রমণ করতে পারে।


#Tasbeeh

---------------------------------------

 

হাদিসের শিক্ষা (পর্ব: ১১)

পরকালের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কামাই হলো, কারও হিদায়াতের উসিলা (মাধ্যম) হওয়া।

সাহল ইবনে সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম (খায়বার যুদ্ধের সময়) আলি (রা.)-কে বললেন, “আল্লাহর শপথ! তোমার দ্বারা একটি মানুষকেও যদি আল্লাহ হিদায়াত (সঠিক পথ) নসিব করেন, তবে তা তোমার জন্য (আরবের মহামূল্যবান) লাল উট পাওয়ার চেয়েও উত্তম।” [বুখারি, আস-সহিহ: ৩০০৯; মুসলিম, আস-সহিহ: ৬৩৭৬]

তৎকালীন সময়ে আরবের লাল উটের চাহিদা বর্তমান সময়ের প্রাইভেট কারের চেয়ে কোনো অংশে কম ছিলো না। কারও হিদায়াতের উসিলা (মাধ্যম) হওয়ার মতো সৌভাগ্যের বিষয় আর হতে পারে না। ধরুন, আপনার দাওয়াতে কেউ ইসলামগ্রহণ করেছে কিংবা দ্বিন মানা শুরু করেছে; এরপর সারাজীবন ধরে সে যত নেক আমল করবে এবং নেকি অর্জন করবে, তার সমপরিমাণ আপনি পাবেন, কোনো পরিশ্রম ছাড়াই। কেনো? কারণ, আল্লাহর রহমতে আপনিই তো তার এই পরিবর্তনের সূচনকারী, হিদায়াতের পাইওনিয়ার।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি সৎপথের দিকে আহ্বান জানাবে, (তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে) যারা এ পথ অনুসরণ করবে, তাদের সকলের সমপরিমাণ নেকির অধিকারী সে হবে; তাতে তাদের নেকির কিছুই হ্রাস পাবে না।” [মুসলিম, আস-সহিহ: ৬৯৮০]

এজন্য সাধারণ অমুসলিম ও দ্বীন থেকে দূরে থাকা ব্যক্তিদের সাথে প্রকৃত ঈমানদার ব্যক্তি সবসময় দাওয়াতি সম্পর্ক বজায় রাখবে, তাদের সাথে সদাচরণ করবে এবং কৌশলে সত্য দ্বিন ইসলামের দিকে আহ্বান করবে। প্রয়োজনে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর লেগে থাকবে, তবুও হতাশ হবে না। কারণ, শেষ পর্যন্ত যদি তারা ঈমান না-ও আনে কিংবা দ্বিনের উপর না ওঠে, তবুও তার এই প্রচেষ্টার জন্য সীমাহীন ফজিলত ও মর্যাদা লাভ করবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘তার কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে, যে (মানুষকে) আল্লাহর দিকে ডাকে, নেক কাজ করে এবং বলে যে, নিশ্চয়ই আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত।’’ [সুরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩৩]

সুতরাং, আজ থেকে আমরা মিশনারি জীবনযাপন করবো। যারা ইসলাম থেকে দূরে এবং যারা দ্বিন মানা থেকে দূরে, তাদেরকে দ্বিনের দিকে আহ্বান করবো, ইনশাআল্লাহ।


-----------------------------------

 

#হাদিসের_শিক্ষা (পর্ব: ১২)

 

আমাদের ঈমান হলো মাকড়সার জালের মতো ঠুনকো। বিভিন্ন কারণে ঈমান দুর্বল হয়ে যায়। তখন, ঈমানকে সতেজ করতে দু‘আ করতে হয়।

.

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের দেহের ভেতরে ঈমান পুরাতন হয়ে যায়, যেভাবে পুরাতন হয়ে যায় নতুন কাপড়। সুতরাং তোমরা আল্লাহর নিকট দু‘আ করো, যাতে তিনি তোমাদের হৃদয়ে ঈমানকে নতুন করে দেন।’’ [হাকিম, আল-মুসতাদরাক: ০৫; আলবানি, সহিহুল জামি’: ১৫৯০; হাদিসটি সহিহ]

.

কীভাবে ঈমানের জন্য দু‘আ করবো?

.

উহুদ যুদ্ধের দিনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিচের বাক্যগুলো পাঠ করেছিলেন। তখন সাহাবিগণ তাঁর পেছনে সারিবদ্ধ অবস্থায় ছিলেন।

.

اَللّٰهُمَّ حَبِّبْ إِلَيْنَا الْإِيْمَانَ، وَزَيِّنْهُ فِيْ قُلُوْبِنَا، وَكَرِّهْ إِلَيْنَا الْكُفْرَ وَالْفُسُوْقَ وَالْعِصْيَانَ، وَاجْعَلْنَا مِنَ الرَّاشِدِيْنَ

.

[আল্লা-হুম্মা ‘হাব্বিব ইলাইনাল ঈমান, ওয়া যায়্যিনহু ফী ক্বুলূবিনা, ওয়া কাররিহ ইলাইনাল কুফরা ওয়াল ফুসূক্বা ওয়াল ‘ইসইয়ান, ওয়াজ‘আলনা মিনার রা-শিদী-ন (সঠিক উচ্চারণের জন্য অবশ্যই আরবি দেখে শিখতে হবে।)]

.

অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের নিকট ঈমানকে প্রিয় করে তোলো; আমাদের অন্তরে এটিকে সুশোভিত করে দাও। আর আমাদের সামনে ঘৃণ্য করে তোলো—কুফর, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে। আমাদের সঠিক পথের পথিক বানাও। [বুখারি, আল আদাবুল মুফরাদ: ৬৯৯; হাদিসটি সহিহ]

.

বেশ কিছু কারণে ঈমান দুর্বল হয় এবং এমন কিছু আমল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে ঈমানের দুর্বলতা দূর হয়, ঈমান মজবুত হয় এবং আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস শক্তিশালী হয়। এসব বিষয় নিয়ে আরবের প্রখ্যাত আলিম শায়খ মুহাম্মাদ সলিহ আল মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) অসাধারণ একটি কিতাব লিখেছেন। আর রিহাব পাবলিকেশন সেটির বাংলা অনুবাদ করেছে ‘‘এসো ঈমান মেরামত করি’’ নামে আর রুহামা পাবলিকেশন অনুবাদ করেছে ‘‘ঈমানের দুর্বলতা’’ নামে। সম্ভব হলে অবশ্যই সংগ্রহ করবেন বইটি। বইটি সর্বদা টেবিলে থাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ।

.

#Tasbeeh

--------------------------------------

 

#হাদিসের_শিক্ষা (পর্ব: ১৩)

 

একটি হাদিস থেকে চারটি শিক্ষা:

.

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘ধীর-স্থিরতা আল্লাহর পক্ষ থেকে আর তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ থেকে। আল্লাহর চেয়ে বেশি ওজর (অক্ষমতা ও অপারগতা) কবুল করার কেউ নেই। আল্লাহর কাছে প্রশংসার চেয়ে অধিক প্রিয় আর কিছু নেই।’’ [আলবানি, সহিহুত তারগিব: ১৫৭২; হাদিসটি সহিহ]

.

আমরা এই হাদিস থেকে শিখলাম:

.

(১) যেকোনো কাজে ধীর-স্থিরভাবে করা উত্তম। তবে, আখিরাতের কাজ বা নেকির কাজে ঢিলেমি করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘সব কাজেই ধীর-স্থিরতা করা যায়, অন্য বর্ণনায়, সব কাজেই ধীর-স্থিরতা উত্তম, কিন্তু পরকালের কাজে নয়।’’ [আবু দাউদ, আস-সুনান: ৪৮১০; আলবানি, সহিহুল জামে’: ৩০০৯; হাদিসটি সহিহ]

.

(২) তাড়াহুড়া শয়তানের কাজ। অল্প সময়ে ফলাফল লাভের তাড়না খুব খারাপ। সবর করা শিখতে হবে। যে সবর করে, তাকে আল্লাহ সন্তুষ্ট করে দেন; যদিও সময় একটু বেশি লাগে। বান্দা যতক্ষণ সবর করে, ততক্ষণ সে কল্যাণের উপর থাকে।

.

(৩) আমাদের উপর যদি আল্লাহ দয়া না করেন, তবে আমাদের ধ্বংস অনিবার্য। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের উপর শরিয়ত নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু এটিকে সহজ করে দিয়েছেন। ‘ওযর’ বলতে বুঝায় বিশেষ অবস্থা, যখন ব্যক্তি অপারগ থাকে। ধরুন, ডাক্তার বলেছে, অমুক রোগীর জন্য পানি ব্যবহার নিষিদ্ধ। এমতাবস্থায় যেহেতু সে অপারগ (ওযরগ্রস্ত), তাই তায়াম্মুম করবে।

.

(৪) সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার হলো, আল্লাহর প্রশংসা। কুরআনুল কারিমের প্রথম সুরা আল-ফাতিহা শুরুই হয়েছে আল্লাহর প্রশংসা দিয়ে। সুতরাং, এর গুরুত্ব অনেক বেশি। অধিকাংশ সময় আমরা দু‘আর মধ্যে শুধু চাইতেই থাকি, চাইতেই থাকি। অথচ, এগুলোর সাথে আল্লাহর যথাযথ প্রশংসা যুক্ত হলে সেই দু‘আর মহিমা অনেক গুণ বেড়ে যায়। সুনানে তিরমিযির একটি হাদিস থেকে জানা যায়, আল্লাহর প্রশংসা দিয়ে দু‘আর সূচনা হওয়া উত্তম। এরপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরুদ। নামাজের শেষ বৈঠকে আমরা এই সিকুয়েন্সটা ফলো করি। প্রথমে আত্তাহিয়্যাতু (এটি প্রশংসা) পড়ি, এরপর দরুদ পড়ি, এরপর দু‘আ মাসুরা পড়ি।

.

#Tasbeeh

-------------------------------------

 

#হাদিসের_শিক্ষা (পর্ব: ১৪)

 

নিজেদের ঈমান পরীক্ষা করি!

.

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, তার সন্তান ও সকল মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় হবো।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ১৪]

.

উমার (রা.)-এর মত মহান সাহাবির ঈমানকে নবিজি অপূর্ণাঙ্গ বলেছিলেন, এই একটি কারণে। চলুন, সেই ঘটনাটি জানি।

.

আবদুল্লাহ্ বিন হিশাম (রা.) বলেন, একদিন আমরা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। তখন নবিজি উমারের হাত ধরে ছিলেন। উমার বলে ওঠেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আমার কাছে সবকিছু থেকে প্রিয়, কেবল আমার নিজের জীবন ব্যতীত।’ তখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘না উমার, এতেও হবে না। যে সত্তার হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম! (ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না,) যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে তোমার জীবনের চেয়েও প্রিয় না হই।’’ পরক্ষণেই উমার (রা.) বলেন, ‘হ্যাঁ, এখন তাই হয়েছে; আল্লাহর কসম! (এখন থেকে) আপনি আমার কাছে আমার জীবনের চেয়েও প্রিয়।’ তখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘হে উমার! এখন হয়েছে।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ৬৬৩২]

.

সুতরাং, আমাদের নিজেদের ইমানকে যাচাই করা জরুরি। আমাদের হৃদয়ে কার মুহাব্বাত সবচেয়ে বেশি, তা জানতে হবে। আমার সামনে আমার মা-বাবাকে, আমার নেতাকে, আমার প্রিয় খেলোয়াড়কে বা আমার প্রিয় সেলিব্রেটিকে গালি দিলে অধিক কষ্ট হয়, নাকি আমার নবিজিকে গালি দিলে অধিক কষ্ট হয়, তা দেখতে হবে। আমার নেতার আদর্শ আমার কাছে বেশি ভালো লাগে নাকি আমার রাসুলের আদর্শ। রাসুলের সুন্নাহ অনুসরণ করে অধিক তৃপ্তিবোধ করি নাকি কোনো সেলিব্রেটির লাইফস্টাইল ফলো করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।

.

মানুষ তাকেই বেশি ভালোবাসে, যার ব্যাপারে অধিক জানে। আমরা নবিজি সম্পর্কে কতটুকু জানি? তাঁর জীবনী পড়ে দেখার আগ্রহ হয়েছে কখনও?

.

অন্য কোনো পোস্টে সিরাতের (নবিজীবনের) গ্রন্থ নিয়ে কিছু কথা-বার্তা হবে, ইনশাআল্লাহ।

.

#Tasbeeh

------------------------------------------

 

#হাদিসের_শিক্ষা (পর্ব: ১৫)

 

আপনার হৃদয়কে পরীক্ষা করুন।

.

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একবার প্রশ্ন করা হয়, ‘‘শ্রেষ্ঠ মানুষ কে?’’ তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেক শুদ্ধহৃদয় ও সত্যভাষী ব্যক্তি।’’ লোকেরা বুঝতে পারেনি। তখন নবিজি আরো স্পষ্টভাবে বলেন, ‘‘সে হবে আল্লাহভীরু ও পরিচ্ছন্নহৃদয়—যাতে কোনো পাপ নেই; সত্যদ্রোহিতা নেই; বিদ্বেষ নেই; হিংসা নেই।’’ [ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৪২১৬; আলবানি, সিলসিলা সহিহাহ: ৯৪৮; হাদিসটি সহিহ]

.

একজন সাহাবিকে নবিজি তাঁর জীবদ্দশায় জান্নাতি বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাও সেটি একবার নয়, তিন-তিন বার! সেই সাহাবি সবাইকে ক্ষমা করে দিতেন, কারো প্রতি বিদ্বেষ ধরে রাখতেন না এবং কারও নিয়ামত দেখলে হিংসা করতেন না। শুধু এই কারণে তিনি ঘোষণাপ্রাপ্ত জান্নাতি! এই বিশেষ গুণ বাদে তাঁর বিশেষ কোনো নফল আমল ছিলো না। [আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১২৭২০; হাদিসটি সহিহ]

.

আমাদের মাঝে কারো কারো অন্তর এতটাই সংকীর্ণ যে, সেখানে তার নিজেরও জায়গা থাকে না! অথচ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মুমিন ব্যক্তি নিজেও অন্যকে ভালোবাসে, অন্যরাও তাকে ভালোবাসে। যে কাউকে ভালবাসে না এবং তাকেও কেউ ভালবাসে না, তার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই।’’ [আলবানি, সহিহুল জামি’: ৬৬৬২; হাদিসটি সহিহ]

.

কুরআনুল কারিমে আল্লাহ্ বলেন, ‘‘যারা হৃদয়ের কার্পণ্য হতে মুক্ত, তারাই তো সফলকাম।’’ [সুরা হাশর, আয়াত: ০৯]

.

#Tasbeeh

-----------------------------------

 

#হাদিসের_শিক্ষা (পর্ব: ১৬)

 

একবার নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট কিছু সংখ্যক বন্দী আসে। বন্দীদের মধ্যে একজন নারী ছিলো।... সে বন্দীদের মধ্যে কোনো শিশু পেলে তাকে ধরে কোলে নিতো এবং দুধ পান করাতো। উমার (রা.) বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বললেন, ‘‘তোমরা কি মনে করো, এই নারী তার সন্তানকে আগুনে ফেলে দিতে পারে?’’ আমরা বললাম, ‘না। ফেলার ক্ষমতা রাখলেও সে কখনো ফেলবে না।’ তারপর তিনি বললেন, ‘‘এই নারী তার সন্তানের উপর যতটুকু দয়ালু, আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি তার চেয়েও বেশি দয়ালু।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ৫৯৯৯; মুসলিম, আস-সহিহ: ২৭৫৪]

.

এই হাদিস পড়ে ভুল উপলব্ধির অবকাশ নেই। অনবরত আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত থেকে আল্লাহর কাছে দয়া ও ক্ষমার প্রত্যাশা করা এক ধরনের বিলাসিতা। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি, যে নিজের সমালোচনা করে এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের (সাফল্যের) জন্য আমল করে। আর, অক্ষম সেই ব্যক্তি, যে নিজের নফসের কামনা-বাসনার অনুসরণ করে আর আল্লাহর কাছে অলীক আশা পোষণ করে।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ২৪৫৯; ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৪২৬০]

.

হ্যাঁ, আল্লাহ্ চাইলে যে কাউকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে তিনি কোনো কিছুর পরোয়া করেন না। তাঁর কোনো কাজের জন্য কারও কাছে তিনি জবাব দিতে বাধ্য নন। কোনো নিয়ম তাঁর জন্য প্রযোজ্য নয়, কারণ নিয়মের স্রষ্টা তিনিই। তবে, আল্লাহ তা‘আলা গোটা বিশ্বজগতের নিজামকে একটি নিয়মের মাধ্যমেই পরিচালিত করেন। তাই, স্বাভাবিক নিয়মে আল্লাহর ক্ষমা ও দয়ার উপযুক্ত হওয়ার জন্য আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকা এবং নেক আমল করা জরুরি।

.

আল্লাহ্ তা‘আলা কুরআনুল কারিমে বলেন, ‘আমার বান্দাদের জানিয়ে দাও যে, আমি পরম ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু। আর, আমার শাস্তিও যন্ত্রণাদায়ক।’ [সুরা হিজর, আয়াত: ৪৯-৫০]

.

তবে, কখনই হতাশ হওয়া যাবে না। কারণ আল্লাহর রহমত তাঁর শাস্তির উপর বিজয়ী। অতএব, জরুরি হলো, ঈমানকে বিশুদ্ধ রাখা, গুনাহ হয়ে গেলে তাওবাহ করা ও আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ যেন আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ ব্যতীত মৃত্যুবরণ না করে।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ৫১২৫]

.

#Tasbeeh

--------------------------------

 

#হাদিসের_শিক্ষা (পর্ব: ১৭)

 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেউ যখন এমন ব্যক্তির দিকে তাকায়, যাকে সম্পদ ও দৈহিক গঠনে তার থেকে বেশি শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে, তখন সে যেন এমন ব্যক্তির দিকে তাকায়, যে এ বিষয়ে তার চেয়ে নিচে অবস্থান করছে।” [বুখারি, আস-সহিহ: ৬৪৯০]

.

আপনি যত বড় সমস্যাই ফেইস করেন না কেনো, আপনার চেয়েও বড় সমস্যাগ্রস্ত মানুষের দেখা পাবেন। আপনি যতই দরিদ্র হোন, যতই দুর্বল হোন, আপনার চেয়ে অধিক দুর্বল ও দরিদ্র মানুষের দেখা পাবেন। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন যে, তিনি আপনাকে অনেকের চেয়ে ভালো রেখেছেন।

.

আপনি যখন আপনার চেয়ে নিচের মানুষদের দেখবেন, তখন আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞচিত্ত হয়ে ওঠবেন। পক্ষান্তরে, আপনি যদি আপনার চেয়ে উঁচু শ্রেণির লোকদের দিকে নজর দেন, তাহলে অকৃতজ্ঞ হয়ে ওঠবেন এবং আল্লাহর নিয়ামতকে অবমূল্যায়ন করবেন। হাদিসে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “(দুনিয়ার ধন-দৌলতের দিক দিয়ে) তোমাদের মধ্যে যে নিচে অবস্থান করছে, তার দিকে তাকাও এবং যে তোমাদের উপরে আছে, তার দিকে তাকিয়ো না। এটিই তোমাদের জন্য উত্তম হবে, তাহলে তোমাদের প্রতি যে আল্লাহর নিয়ামত রয়েছে, তা তুচ্ছ মনে করবে না।” [মুসলিম, আস-সহিহ: ৭৬১৯]

.

সুতরাং, আমাদেরকে আল্লাহ যা দিয়েছেন, তাতেই সন্তুষ্ট থাকবো, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবো। আল্লাহ বলেন, ‘‘তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের আরও বাড়িয়ে দেবো। আর যদি তোমরা অস্বীকার করো (অকৃতজ্ঞতা দেখাও) তাহলে (জেনে রাখো) আমার শাস্তি বড়ই কঠিন।’’ [সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ০৭]

.

#Tasbeeh

--------------------------------------

 

#হাদিসের_শিক্ষা (পর্ব: ১৮)

 

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি (আল্লাহর) কোনো বান্দাকে (দুনিয়াতে) সাহায্য করবে, আল্লাহ্ (পরকালের) সেদিন তার অবস্থানকে সুদৃঢ় রাখবেন, যেদিন তারা স্থির থাকতে পারবে না।’’ [আলবানি, সিলসিলা সহিহাহ: ৯০৬]

.

অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক হাদিস এটি। কারণ, সেই কঠিন সময়ে মানুষ বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালের ন্যায় ছোটাছুটি করবে (সুরা ক্বামার, আয়াত: ০৭)। এমন কঠিন সময়ে আল্লাহ সেসব মানুষকে সুদৃঢ় রাখবেন, যারা দুনিয়াতে মানুষকে সাহায্য করে।

.

শুধু আখিরাতেই নয়, দুনিয়াতেও আল্লাহ এ ধরনের লোকদের সাথে থাকেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘বান্দা যতক্ষণ তার (মুসলিম) ভাইয়ের সাহায্যে থাকবে, আল্লাহ্ তা‘আলা ততক্ষণ তার সাহায্যে থাকবেন।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ২৬৯৯]

.

ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রাহ.) তাঁর প্রিয় শিক্ষক ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ্ (রাহ.)-এর ব্যাপারে বলেন, ‘তিনি মানুষের প্রয়োজন পূরণ করতে সাহায্য করার জন্য আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালাতেন; ছুটে চলতেন। কারণ তিনি জানতেন—যদি তিনি কাউকে সাহায্য করেন, আল্লাহও তাকে সাহায্য করবেন।’ [রাওদাতুল মুহিব্বিন: ১/১৬৮]

.

আল্লাহ তা‘আলা প্রকৃতির নিয়ম এমনই করেছেন যে, মানুষ যত বেশি সাহায্য করে, তত বেশি সাহায্য পায়। কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটলেও সাধারণভাবে এমনটিই হয়। সুতরাং, আমরা যেন সদা-সর্বদা আল্লাহর বান্দাদের জন্য উৎসর্গীত থাকি। আমাদের এই কর্মপ্রচেষ্টা বিফলে যাবে না। দুনিয়া ও আখিরাতে এর পূর্ণ বদলা পাবো, ইনশাআল্লাহ।

.

#Tasbeeh

------------------------------------

 

#হাদিসের_শিক্ষা (পর্ব: ১৯)

 

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘এই দুনিয়ার মূল্য যদি আল্লাহর কাছে একটি মশার ডানার সমতুল্যও হতো, তবে কোনো কাফেরকে তিনি এক ঢোক পানি পান করতে দিতেন না।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ২৩২০; ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৪১১০; হাদিসটি সহিহ]

.

আল্লাহর কাছে এই দুনিয়ার জীবনের কোনো মূল্য নেই। এজন্য দেখা যায়, তাঁর প্রিয় বান্দাদের অনেকে না খেয়ে থাকে, বিপদ-আপদে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। অথচ অনেক পাপিষ্ঠ ও জালিম কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়াই প্রাচুর্যের মধ্যে জীবনযাপন করে।

.

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘হে আল্লাহর রাসুল! দুনিয়াতে সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত কে?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘নবিগণ। অতঃপর যারা (বৈশিষ্ট্যে) তাঁদের নিকটবর্তী, অতঃপর যারা তাঁদের নিকটবর্তী। মানুষকে তার দ্বিন অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয়। দ্বিনি অবস্থান পাকাপোক্ত হলে পরীক্ষা কঠিন হয়। দ্বিনি অবস্থান দুর্বল হলে পরীক্ষাও শিথিল হয়। বিপদ-আপদ ঈমানদার ব্যক্তিকে পাপশূন্য করে দেয়। একসময় সে দুনিয়াতে নিষ্পাপ অবস্থায় বিচরণ করতে থাকে।’’ [আলবানি, সহিহুল জামি’: ৯৯২; হাদিসটি সহিহ]

.

আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেন, “যেদিন কাফিরদেরকে জাহান্নামের সামনে হাজির করা হবে (সেদিন তাদের বলা হবে), তোমরা তোমাদের দুনিয়ার জীবনেই যাবতীয় সুখ-সম্ভোগ নিঃশেষ করে ফেলেছো এবং সেগুলো উপভোগও করেছো। সুতরাং আজ তোমাদের দেওয়া হবে অপমানজনক শাস্তি; কারণ তোমরা জমিনে অন্যায়ভাবে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে এবং পাপাচার করতে।” [সুরা আহকাফ, আয়াত: ২০]

.

আল্লাহর কাছে দুনিয়ার মূল্য থাকলে তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে সম্পদের পাহাড় দিতেন, প্রাচুর্যে ডুবিয়ে রাখতেন এবং সকল কষ্ট ও দুঃখ-বেদনা থেকে মুক্ত রাখতেন। কিন্তু আল্লাহ এমনটি করেন না। বরং তাদের প্রতিদান রেখে দেন আখিরাতের জন্য। সুতরাং, ঈমানদার ব্যক্তিদের হতাশ হওয়া উচিত নয়।

.

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, ‘‘সুতরাং, ধৈর্য ধারণ করো। শুভ পরিণাম আল্লাহভীরুদের জন্যই।’’ [সুরা হুদ: আয়াত ৪৯]

.

#Tasbeeh

--------------------------------

 

#হাদিসের_শিক্ষা (পর্ব: ২০)

 

হঠাৎ কোনো গুনাহ হয়ে গেলে সাথে সাথে কোনো নেক আমল করতে হয়। এতে শয়তান রাগান্বিত হয়। অনেক সময় এই নেক আমলটি গুনাহটিকে মুছে দেয়।

.

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তুমি যেখানেই থাকো, আল্লাহকে ভয় করো। মন্দ কাজের পরপরই ভাল কাজ করো; তাতে মন্দ দূরীভূত হয়ে যাবে।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ১৯৮৭; হাদিসটি সহিহ]

.

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই ভালো কাজ মন্দ কাজকে মিটিয়ে দেয়।” [সুরা হুদ, আয়াত: ১১৪]

.

তবে, প্ল্যান করে গুনাহ করে, পরে নেক আমল করা চরম আত্মঘাতি কাজ। এখানে উদ্দেশ্য হলো, সাধ্যমত আল্লাহর আনুগত্যে জীবন কাটানোর মধ্যে হঠাৎ কোনো কারণে গুনাহ সংঘটিত হয়ে গেলে অনুতপ্ত হওয়া এবং গুনাহের কাফফারা হিসেবে কোনো নেক আমলে লেগে যাওয়া। কুরআনুল কারিমে এমনটিই বলেছেন মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা।

.

‘‘তবে যে তাওবাহ করে, ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, আল্লাহ্ তাদের গুনাহগুলো নেকি দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আর আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু।” [সুরা ফুরকান, আয়াত: ৭০]

.

ধরুন, হঠাৎ কোনো গুনাহ হয়ে গেছে। তখন আপনি নিজের নফসকে এর জন্য শাস্তি দিন। সেটি হতে পারে কয়েক রাকাত নফল নামাজ আদায় করা অথবা একটি নফল রোজা রাখা কিংবা কিছু টাকা সাদাকাহ। তাহলে শয়তান উত্তেজিত হয়ে যাবে। এটাই আপনার সফলতা। এ বিষয়ে সালাফদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অন্য কোনো দিন আলাদা একটি পোস্ট করবো, ইনশাআল্লাহ।

.

#Tasbeeh

-------------------------------

 

#হাদিসের_শিক্ষা (পর্ব: ২১)

 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি মূল্যবান পোশাক পরার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিনয়বশত তা পরিহার করলো, আল্লাহ কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষের সাক্ষাতে তাকে ডেকে স্বাধীনতা দেবেন, সে যেন ঈমানের (অর্থাৎ ঈমানদারদের পোশাক) জোড়াসমূহের মধ্য থেকে যে কোনো জোড়া বেছে নিয়ে পরিধান করে।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ২৪৮১; আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১৫২০৪; হাদিসটি হাসান]

.

একবার খলিফা উমার ইবনু আবদিল আযিয (রাহ.)-এর কাছে সংবাদ পৌঁছালো যে, তাঁর ছেলে ১০০০ দিরহাম দিয়ে একটি দামি আংটি কিনেছে।

.

তিনি তখনই ছেলেকে চিঠি লিখলেন—

‘আমার কাছে খবর এসেছে যে, তুমি এক হাজার দিরহাম দিয়ে একটি আংটি কিনেছো। অতএব, তুমি (এই চিঠি পাওয়ার পর) সেটি বিক্রি করে দেবে, এরপর এক হাজার ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে (সেই অর্থ দিয়ে) খাবার খাওয়াবে। অতঃপর *এক* দিরহাম দিয়ে একটি লোহার আংটি কিনবে এবং তার উপর (খোদাই করে) লিখবে—

.

رَحِمَ اللَّهُ امْرَأً عَرَفَ قَدْرَ نَفْسِهِ

.

‘‘আল্লাহ তার উপর রহম করুন, যে নিজের প্রকৃত অবস্থান (মর্যাদা/Status) বুঝতে পারে।’’ [তাফসিরে কুরতুবি]

.

আবার অন্য হাদিসে এসেছে, ‘‘আল্লাহ তাঁর বান্দার মাঝে তাঁর দেওয়া নিয়ামতের আলামত দেখতে পছন্দ করেন।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ২৮১৯; হাদিসটি হাসান সহিহ]

.

আলিমগণ উভয় হাদিসের মাঝে এভাবে সমন্বয় করেছেন যে, যাকে আল্লাহ সামর্থ্য দিয়েছেন, সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ভালো পোশাক পরিধান করবে। তবে, লৌকিকতা, অহংকার ও অপচয় যেন তাকে পেয়ে না বসে, সেদিকে খেয়াল রাখবে। পাশাপাশি, মাঝেমধ্যে সে খুব সাধারণ মানের পোশাকও পরিধান করবে। এটি তার মাঝে ভারসাম্য আনবে।

.

কোনো কোনো আলিম বলেন, সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য উত্তম পোশাক পরিধান করা উত্তম, যদি এটি তাকে আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে না দেয়। অন্যথা তার সাধারণ পোশাক পরা উচিত।

.

#Tasbeeh

-----------------------------

 

#হাদিসের_শিক্ষা (পর্ব: ২২)

 

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি তোমাদের ব্যাপারে যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি ভয় করি, তা হলো ‘শিরকুল আসগার’ বা ছোট শির্ক। সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! ছোট শির্ক কী?’ তিনি বলেন, ‘‘রিয়া (লোক দেখানো বা তাদের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কাজ করা)। যেদিন আল্লাহ তাঁর বান্দাদের আমলের প্রতিদান দেবেন, সেদিন তিনি বলবেন—দুনিয়াতে তোমরা যাদের দেখানোর জন্য কাজ করেছো, আজ তাদের কাছে যাও! দেখো, তাদের কাছে প্রতিদান পাও কীনা।’’ [আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২৩৬৩০; আলবানি, সহিহুত তারগিব: ২৯; হাদিসটি সহিহ]

.

আবুল লাইস সামারকান্দি (রাহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি লোক দেখানো বা সুনামের জন্য ইবাদত-বন্দেগি করে, তার দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির মতো, যে পাথরভরা থলি নিয়ে বাজারে গেলো। লোকজন তাকে দেখে বলে, ‘‘এই লোকের থলিটা কত পরিপূর্ণ!’’ অথচ মানুষের প্রশংসা ছাড়া এই থলিটা তার কোনো উপকার বয়ে আনে না। যদি সে এটা দিয়ে কিছু কিনতে চায়, বিনিময়ে তাকে কিছুই দেওয়া হবে না। অনুরূপ, লোক দেখানো ও সুনাম কামনা করা ব্যক্তির আমল কোনই কাজে আসে না, (বাহ্যিকভাবে) মানুষের প্রশংসা পাওয়া ব্যতীত। আর, আখিরাতে তার জন্য কোনো প্রতিদান থাকে না।’ [সামারকান্দি, তাম্বিহুল গাফিলিন, পৃষ্ঠা: ২৫]

.

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তাদের কেউ যদি আখিরাতের কাজ করে পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে, তবে, আখিরাতে তার কোনো অংশ নেই।’’ [ইবনু হিব্বান, আস-সহিহ: ৪০৫; আলবানি, সহিহুল জামি’: ২৮২৫; হাদিসটি সহিহ]

.

সুতরাং সমাধান একটিই, তা হলো: প্রতিটি আমল কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা শুধু সেই আমল গ্রহণ করেন, যা ইখলাসের সাথে শুধু তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে করা হয়।’’ [নাসায়ি, আস-সুনান: ৩১৪০; হাদিসটি সহিহ]

.

#Tasbeeh

-------------------------------

 

#হাদিসের_শিক্ষা (পর্ব: ২৩)

 

নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে; তা না হলে শীঘ্রই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের উপর শাস্তি পাঠাবেন। অতঃপর তোমরা তাঁর কাছে দু‘আ করবে, কিন্তু তা কবুল করা হবে না।” [তিরমিযি, আস-সুনান: ২১৬৯; আলবানি, সহিহুল জামি’: ৭০৭০; হাদিসটি সহিহ]

.

সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ এত জরুরি যে, এটি বন্ধ থাকলে পুরো সমাজ এর শাস্তি ভোগ করে। আমাদের সমাজের বর্তমান দুরবস্থার অন্যতম কারণ হলো, আমরা সম্মিলিতভাবে এই আমলটি থেকে দূরে সরে গেছি। এমনকি, সমাজের শ্রেষ্ঠাংশ আলিমসমাজেও এ ব্যাপারে স্থবিরতা লক্ষণীয়। সেজন্য ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহ.) বলেছিলেন, ‘যিনি সৎকাজে আদেশ এবং অসৎকাজে নিষেধ করেন না, তিনি দ্বিনের শায়খ হতে পারেন না, অপরের জন্য অনুসরণীয়ও হতে পারেন না।’

.

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল যেন থাকে, যারা কল্যাণের দিকে আহবান করবে, সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর তারাই সফলকাম।’’ [সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৪]

.

জেনে রাখবেন, জিহাদের বিধান ব্যক্তি ও পরিস্থিতি বিবেচনায় বিভিন্ন রকম হতে পারে, কিন্তু সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ সাধ্যানুসারে সর্বাবস্থায় ওয়াজিব। এ ব্যাপারে অবহেলা করলে গুনাহগার হতে হবে।

.

তবে, এই কাজটি অবশ্যই ব্যক্তি, সময় ও পরিবেশ বিবেচনা করে প্রজ্ঞার সাথে আঞ্জাম দিতে হবে। শায়খ আবদুল আযিয ইবনু বায (রাহ.) বলেন, ‘আল্লাহর দিকে আহবানকারী ও উপদেশ দানকারী ব্যক্তি হলো ডাক্তারের মতো—সে উপযুক্ত সময়, উপযুক্ত পরিমাণ ও উপযুক্ত পদ্ধতিতে প্রচেষ্টা চালাবে।’ [ইবনু বায, আল মাজমু‘উ: ৬/৩৫০]

.

#Tasbeeh

-------------------------------------

©Tasbeeh
Page link- https://www.facebook.com/TasbeehZikr/

.

©Nusus
Page link- https://www.facebook.com/FromNusus