মাওয়াযে থানুভী রহ. থেকে নির্বাচিত কাহিনী
====================================================================
হযরত হাবীব আজমী ও হযরত হাসান বসরীর ঘটনা
হযরত হাবীব আজমী (রঃ) স্পষ্ঠভাবে আরবী বর্ণমালা উচ্চারণ করতে অপারগ ছিলেন। একবার তিনি তাহাজ্জুদের নামায পড়ছিলেন। ইমাম হাসান বসরীও তাঁর পিছনে শরীক হতে চাইলেন, কিন্তু তার ভুল উচ্চারণের কারণে তিনি ঘরে এসে তাহাজ্জুদের নামায আদায় করেন। অতপর ঘুমিয়ে পড়েন। তিনি স্বপ্নে আল্লাহকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাব্বুল আলামীন! আপনার নিকট কোন আমলটি সবচেয়ে বেশী পছন্দনীয়? আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হাবীবে আজমীর পিছনে নামায পড়া আমার নিকট খুব বেশী পছন্দনীয়।
ফায়দাঃ চিন্তা করে দেখুন, আল্লাহর নিকট তার অকৃত্রিম এক প্রেমিকের ভুল তেলাওয়াতও পছন্দনীয়। বস্তুতঃ আল্লাহ মানুষের অন্তরের হালাত, হৃদয়ের আকুতি পরিমাপ করেন। যদি কেউ চেষ্টা করা সত্ত্বেও বিশুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করতে অপারগ থাকে। তবে তার হৃদয়ের অমলীনতার কারণে কৃত্রিম ভংগিতে সুমিষ্ট তেলাওয়াতকারীর চেয়ে তার মর্যাদা আল্লাহর নিকট অনেক বেশী। কুরআন তেলাওয়াত অত্যন্ত ফজিলত পূর্ণ একটি আমল। অথচ আজকাল লােকদের কুরআন তেলাওয়াতের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী গাফলতি পরিলক্ষিত হয়। এই ফযিলত পূর্ণ আমলে আমাদের আরও আন্তরিক হওয়া উচিত।
এক অন্ধ ও তার স্ত্রীর কাহিনী
ঘটনাটি সর্বজন বিশ্রুত ও প্রসিদ্ধ। একদা এক অন্ধ তার স্ত্রীকে বললাে, আমাকে একটু বাটখারাটি তুলে দাও তাে! স্ত্রী কৃত্রিম বিস্ময় প্রকাশ করে বলাে, ইস্ কী ভারী! আমার দ্বারা কি এতাে ভারী জিনিস তােলা সম্ভব।
বাটখারাটি সে আর তুলে দিলাে না, অন্ধ-স্বামী তার মনের দুঃখ মনেই চেপে গেলাে। তবে সে সেদিনই এক স্বর্ণকারের নিকট গিয়ে পাথরের উপর স্বর্ণের প্রলেপ দিয়ে অলংকার বানিয়ে আনলো। স্ত্রীকে বলাে, আজ তােমার জন্য খুব সুন্দর একখানা অলংকার বানিয়ে এনেছি। স্ত্রীতো অলংকারের নাম শুনেই আনন্দে আটখানা। অলংকার দেখেই আনন্দে তা গলায় পরে নিলাে। এবার স্বামী তাকে আচ্ছাভাবে ধােলাই শুরু করলাে। পিশাচিনী, কুহকিনী, কালতাে একটি বাটখারাও তুলতে পারলি না, তবে এখন কিভাবে পাথরের বােঝা বয়ে ফিরছিস।
ফায়দাঃ অলংকারের প্রতি মেয়েদের এমনি এক অন্ধমােহ রয়েছে। দেখবে, অলংকারের ভারে মেয়েদের কান রক্তাক্ত হয়ে গেছে, তবুও অলংকার খুলতে নারাজ। অলংকারের ভারে কানের ব্যথায় ঘাড় পর্যন্ত নাড়াতে পারবে না, কিন্তু তবুও মেয়েদের আত্মীয় স্বজনকে ঘুরে ফিরে তা দেখাতে ভাল লাগে। মহিলাদের বেলায় এটাই তাে স্বাভাবিক, কান ছিড়ে অলংকার পড়ে যাবে। কিন্তু তবুও খুলতে নারাজ। হিন্দুস্তানে তাে অলংকার ব্যবহারের এক আজব প্রথা রয়েছে। কোন কোন মেয়েদের সারা শরীর অলংকারে জড়িয়ে দেয়া হবে। এটাকেই তারা গৌরব ও মর্যাদার প্রতীক বলে মনে করে।
হযরত গাউসে আজম (রঃ)-এর ধােপীর ঘটনা
হযতর মাওলানা শাহ ফজলুর রহমান সাহেবের মুখে আমি শুনেছিঃ তিনি প্রায়ই বলতেন, হযরত গাউসে আজম (রঃ)-এর নিজস্ব ধােপীকে মৃত্যুর পর যখন কবরে প্রশ্ন করা হলাে “তােমার রব কে আর তােমার ধর্ম কি? তখন সে উত্তরে বললাে, হুজুর! আমিতাে বড়পীর সাহেবের ধােপী। (সে এ উদ্দেশ্যে বলেছে যে, তার যে রব যে ধর্ম ছিলাে আমারও তাই।) ফেরেস্তা তার একাণ্ড দেখে হেসে ফেললাে এবং তাকে ছেড়ে দিলাে।
ফায়দাঃ এ ঘটনা থেকে স্পষ্ট ভাবে বুঝে আসে যে, তাকলীদী ঈমান এবং বিশ্বাসের অনুসরণও গ্রহণীয়। কেননা অনুসারীতে নির্দ্বিধায় বলছে, ইমাম যে নিয়ত করছে আমি তাই করলাম, আর এতে নামাযও শুদ্ধ হয়ে প যায়।
ফেরেশতাদের সাথে, হযরত রাবেয়া বসরীর প্রশ্নোত্তর
হযরত রাবেয়া বসরীর ইনতেকালের পর ফেরেশতারা যখন তাকে প্রশ্ন করলেন, “তােমার রব কে, তোমার ধর্ম কি”? তখন তিনি বললেন, তােমাদের প্রশ্নের উত্তর আমি পরে দিচ্ছি, প্রথমে তােমরা আমার প্রশ্নের উত্তর দাও, তােমরা কোথা থেকে এসেছাে? ফেরেস্তারা বললেন, আসমান থেকে। তিনি প্রশ্ন করলেন, আসমান ও জমীনের মাঝে কতটুকু দূরত্ব? ফেরেস্তারা বললাে, পাঁচশত বছরের দূরত্ব। তিনি প্রশ্ন করলেন, এতদূর আসার কারণে কি তােমরা আল্লাহর কথা ভুলে গেছাে? ফেরেস্তারা বললেন, না আমরা তাে আল্লাহর কথা ভুলি নি! এবার তিনি বললেন, তোমরা যখন এতােদূর এসেও আল্লাহর কথা ভুলনি, তখন রাবেয়া সম্পর্কে তােমাদের কি এই ধারণা যে, সে পৃথিবী থেকে মাত্র চার গজ নিচে এসেই আল্লাহ তা'য়ালার কথা ভুলে যাবে, অথচ পৃথিবীতে সে একটি মুহূর্তও আল্লাহর যিকর থেকে গাফেল. ছিলাে না। ফেরেস্তারা তার একথা শুনে হতবাক হয়ে যায়।
ফায়দাঃ এটা হলাে প্রেম, ভালবাসা ও প্রণয়ের চূড়ান্ত স্তর। ফেরেস্তারাও এ স্তর অতিক্রম করতে অপারগ। তাই এক আল্লাহ প্রেমিক বলেছেন,
অর্থঃ আমি তাে সিকাদা অঞ্চলের এক নগণ্য মানুষ, কিন্তু যখন আমি আল্লাহ প্রেমে উন্মাদ হয়ে যাই তখন আকাশ ও তারকা মণ্ডলের বাদশাহ হয়ে যাই। (চলবে)
═──────────────═