"আল ফিরদাউস" পরিবেশিত
জঙ্গিবাদ বিরোধী ফতোয়া এবং প্রতিক্রিয়া
উস্তাদ আবু আনওয়ার আল হিন্দি হাফিজাহুল্লাহ
********************
বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম
ইন্নাল হামদালিল্লাহ ওয়াস সলাতু ওয়াস সালামু ‘আলা রাসূলিল্লাহ ওয়া ‘আলা আলিহি ওয়া আসহাবিহি ওয়া সাল্লাম তাসলিমান কাসীরা।
‘আম্মা বা’আদ।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন –
إِنَّا أَنزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيهَا هُدًى وَنُورٌ ۚ يَحْكُمُ بِهَا النَّبِيُّونَ الَّذِينَ أَسْلَمُوا لِلَّذِينَ هَادُوا وَالرَّبَّانِيُّونَ وَالْأَحْبَارُ بِمَا اسْتُحْفِظُوا مِن كِتَابِ اللَّـهِ وَكَانُوا عَلَيْهِ شُهَدَاءَ ۚ فَلَا تَخْشَوُا النَّاسَ وَاخْشَوْنِ وَلَا تَشْتَرُوا بِآيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلًا ۚ وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّـهُ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ﴿٤٤﴾
“...অতএব, তোমরা মানুষকে ভয় করো না এবং আমাকে ভয় কর এবং আমার আয়াত সমূহের বিনিময়ে স্বল্পমূল্য গ্রহণ করো না, যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফির।“ [আল মায়’ইদা, ৪৪]
فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَـٰذَا مِنْ عِندِ اللَّـهِ لِيَشْتَرُوا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۖ فَوَيْلٌ لَّهُم مِّمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَّهُم مِّمَّا يَكْسِبُونَ ﴿٧٩﴾
“অতএব তাদের জন্যে আফসোস! যারা নিজ হাতে গ্রন্থ লেখে এবং বলে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ-যাতে এর বিনিময়ে সামান্য অর্থ গ্রহণ করতে পারে। অতএব তাদের প্রতি আক্ষেপ, তাদের হাতের লেখার জন্য এবং তাদের প্রতি আক্ষেপ, তাদের উপার্জনের জন্যে।” [আল বাক্বারা, ৭৯]
সাম্প্রতিক সময়ে শাহবাগী আলিম ফরিদউদ্দিন মাসউদের উদ্যোগে জঙ্গিবাদ বিরোধী একটি ফাতওয়া জাতিসঙ্ঘে পাঠানোর খবর অনেকের মনোযোগ কেড়েছে। পত্রিকার ভাষ্য অনুযায়ী এ ফাতওয়াতে সই করেছেন ১ লাখ মুফতি যার মধ্যে আছেন হেফাযতে ইসলামের আমীর ‘আল্লামা শফি, কেন্দ্রীয় মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীসহ প্রায় ১২ জন উচ্চপদস্থ নেতা। ২০ খন্ডের এ ফাতওয়াটি বিশ্ব কুফর মিলনমেলা জাতিসঙ্ঘ ছাড়াও পাঠানো হবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি(যে একজন মুশরিক), ও অন্যান্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে। ফাতওয়ার কপি সংরক্ষনের জন্য দেওয়া হবে জাতীয় গ্রন্থাগারেও।
খবরটি সাম্প্রতিক কিন্তু অন্তর্নিহিত কারণটি পুরনো। যে ব্যাধির উপসর্গ এক লাখ মুফতির এই ফাতওয়া, সে ব্যাধির মোকাবেলা মুওয়াহিদুন এবং মুজাহিদিনকে করতে হচ্ছে অনেক আগে থেকেই। ইতিপূর্বে লুতফর ফরাজী, মতিউর রহমান মাদানী, আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম, আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ মাদানী সহ অনেক শুয়ুখের মধ্যেই এ ব্যাধির উপসর্গ দেখা গেছে। তবে নিঃসন্দেহে এক লাখ মুফতির ফাতওয়া বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাওহীদ ও জিহাদ বিরোধিতায় এক নতুন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে।
এধরনের পরিস্থিতিতে মুওয়াহিদুন, মুজাহিদিন এবং আনসার আল মুজাহিদিনকে (সেসব জিহাদপ্রেমী ভাইবোন যারা মিডিয়াতে, সোশ্যাল মিডিয়াতে এবং সমাজে মুজাহিদিনের সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করেন এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে আল ওয়ালা ওয়াল বারার হক্ব আদায়ের চেষ্টা করেন) এ সমস্ত আলিমদের বিভ্রান্তির অপনোদন ও নিরসনের চেষ্টা করেন তারা দুটি সমস্যার মুখোমখি হন।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় আমাদের ভাইবোনেরা দুটো ভুলের কোন একটি করে বসেন। প্রথম ভুলটি হল, অনেকে সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য বিভ্রান্তি এবং অনেক ক্ষেত্রে কুফর দেখা সত্ত্বেও মুখ বুজে থাকেন, আল্লাহর দ্বীনের প্রতি আনুগত্যের চাইতে নিজের মাযহাব-মাসলাকের প্রতি, নিজের শায়খের প্রতি আনুগত্যকে প্রাধান্য দেন (আমরা এরকম গোমরাহী থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই)। অনেকে সত্য জেনে, উপলব্ধি করেও এধরনের আলিমদের অবস্থানের কারণে দ্বিধাদ্বন্ধে থাকেন, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকেন।
আবার অন্যদিকে দেখা যায় অনেকে ঢালাও ভাবে কোন একটি নির্দিষ্ট মাযহাব-মাসলাককে আক্রমন করে বসেন। যা দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক জিহাদবিরোধীতার ইস্যুকে অজুহাতকে বানিয়ে তারা হয়তো নিজেদের চেপে রাখা বিদ্বেষেরই প্রকাশ ঘটাচ্ছেন (আমরা এরকম যুলুম থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই)। আবার অনেক ইখলাসম্পন্ন ভাই আবেগ, মুজাহিদিন ও আল্লাহর দ্বীনের প্রতি গীরাহবশত প্রয়োজনের চাইতে বেশি বলে ফেলেন, যা অনেক সময়ই না-ইনসাফীতে পৌছে যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় আমাদের ভাইবোনেরা আদাব বিবর্জিত আচরন করেন, বা মূল বিষয় থেকে দূরে অনর্থক আলাপ-আলোচনা, ও গীবাহ-নামীমাহতে চলে যান। আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি বিতাড়িত শয়তানের চক্রান্তসমূহ থেকে।
একারণে প্রয়োজন বিভ্রান্তির অপনোদন ও নিরসনের সময় ঢালাও ভাবে কোন মাসলাক-মাযহাবের বিরোধিতা, অথবা ব্যক্তিগত বিরাগ ও ক্ষোভের প্রকাশ ঘটানোর পিচ্ছিল খাদ থেকে বেঁচে থাকা, সর্বোপরি ইনসাফ করা।
তবে এসকল সমস্যা সত্ত্বেও মুওয়াহিদুন, মুজাহিদিন এবং আনসার আল-মুজাহিদিনের মূল দায়িত্ব পালন অত্যাবশ্যক, আর তা হল প্রকৃত সত্য উপস্থাপন, আল্লাহর দ্বীনের হক্ব পালন এবং সৃষ্ট বিভ্রান্তির নিরসন।
উলামায়ে সু’র ছড়ানো বিভ্রান্তি কতোটা ধ্বংসাত্বক হতে পারে, তার একটি আফগান জিহাদের পর ইয়েমেনে শায়খ উসামার রাহিমাহুল্লাহ তিক্ত অভিজ্ঞতা। আফগান জিহাদে আল্লাহর ইচ্ছায় সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরপর শায়খ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ সর্বপ্রথম ইয়েমেনে একটি জিহাদি বেস তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। যদিও শায়খ উসামার প্রথম আফগান জিহাদ পরবর্তী সুদানের জীবনের কথা আমরা জানি, কিন্তু শায়খের জিহাদি জীবনের এ অধ্যায়টির কথা অনেকেরই অজানা। আফগানিস্তানের পর ইয়েমেনকে নিয়েই ছিল শায়খ উসামার প্রথম সামরিক পরিকল্পনা।[১]
সময়টা ছিল ১৯৮৯। একীভূত ইয়েমেনের সংবিধানকে ঘিরে ইসলামপন্থী এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের বিরোধ মুজাহিদিনের সামনে একটি সুবর্ন সু্যোগ এনে দিয়েছিল ইয়েমেনে একটি জিহাদী আন্দোলনের সূচনার। ভৌগোলিক, সামাজিক, অস্ত্রের সহজলভ্যতা এবং ভূখণ্ডের মানুষের চিন্তাচেতনা ও যোদ্ধা মনোভাব, সব বিবেচনাতেই ইয়েমেনকে মনে হচ্ছিল জিহাদের জন্য একটি উর্বর ভূমি। কিন্তু শায়খ উসামার এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। এই ব্যর্থতার কারণ কৌতুহলউদ্দীপক এবং শিক্ষনীয়।
শায়খ আবু মুস’আব আস-সুরী ফাকাল্লাহু আসরাহর মতে শায়খ উসামার এই ব্যর্থতার পেছনে প্রধান কারণের একটি ছিল ইয়েমেনের তৎকালীন অধিকাংশ সালাফি উলামার ভূমিকা। শায়খ উসামা রাহিমাহুল্লাহ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছেন এই ‘আলিমদের জিহাদের পক্ষে আনার জন্য। কারণ শায়খের বিশ্বাস ছিল ইয়েমেনে যেকোন জিহাদী আন্দোলনের জন্য আলিমদের সমর্থন আবশ্যক। যদিও শায়খ আবু মুস’আব সহ শায়খ উসামার অন্যান্য অনেক সাথী তাকে উৎসাহিত করছিলেন, প্রয়োজনে তাদের ছাড়াই এগিয়ে যাবার।
পরবর্তীতে দেখা যায় ইয়েমেনের সামাজিক নেতৃবৃন্দ, গোত্রীয় নেতৃবৃন্দ, ইখয়ানুল মুসলিমীন এবং অধিকাংশ সালাফি উলামা আলি আব্দুল্লাহ সালিহর (তার উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক) তাগুত সরকারের পক্ষাবলম্বন করেন। এমনকি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগান জিহাদে অংশ নেওয়া শায়খ উসামার সহযোদ্ধা অনেক মুজাহিদও সরকারী পদের বিনিময়ে আলি আব্দুল্লাহ সালিহর ক্যাম্পে ভিড়ে গেলেন।[২]
শায়খ আবু মুস’আব আস-সুরীর মতে তাগুতের বিপক্ষে জিহাদের বিরোধিতায় বিশেষ অগ্রগণ্য ও ধ্বংসাত্মক ভূমিকা রাখেন শায়খ মুক্ববিল ইবন হাদি আল-ওয়াদী’। শায়খ আবু মুস’আবের ভাষায়-
“(আল-ওয়াদী’) একটি বই লিখেছিলেন যেখানে তিনি শায়খ উসামা বিন লাদিনকে ইয়েমেনের সকল দুর্দশার মূল কারণ (রা’স আল-ফিতান) হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি শায়খ উসামার বিরুদ্ধে বক্তব্যের অডিও ক্যাসেট বানিয়ে জুমু’আর পর রাস্তায় রাস্তায় বিক্রির ব্যবস্থা করেছিলেন। তার এসব অডিও বক্তব্য তিনি নির্মম ভাবে শায়খ উসামাকে আক্রমন করতেন। এমনকি তিনি এই মিথ্যা দাবীও করেন যে জিহাদে অংশগ্রহনের জন্য এবং ইয়েমেনে অরাজকতা সৃষ্টির জন্য শায়খ উসামা নাকি তাকে (আল-ওয়াদী’) টাকাও দিয়েছেন...আমার সু্যোগ হয়েছিল এ ব্যাপারে শায়খ উসামার বক্তব্য শোনার। তিনি কিছু অতিথির সাথে এ বিষয়ে কথা বলছিলেন। শায়খ উসামা বলেছিলেন, এ জীবনে যারা যারা তার ক্ষতি করেছে তাদের সবাইকে যদি তিনি ক্ষমা করেও দেন তবুও তিনি কখনো আল-ওয়াদী’-কে ক্ষমা করবেন না।“[৩]
শায়খ আবু মুস’আব আস-সুরীকে সর্বাধিক ক্ষুণ্ণ করেছিল যে বিষয়টা তা হল, তাগুতের বিরুদ্ধে জিহাদের বিপক্ষে অগ্রনী ভূমিকা পালনকারী এই আল-ওয়াদী’কেই কিছু ইয়েমেনী মুজাহিদিন যুবক শায়খ আল-সালাফিয়্যাহ বলে দাবি করছিল।[৪]
যে পরিস্থিতি শায়খ উসামাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে, তার মোকাবেলা করতে হয়েছে প্রায় সকল ভূখণ্ডের মুজাহিদিনকেই। যে বিষয়টি ক্ষুব্ধ করেছে শায়খ আবু মুস’আবকে তা ক্ষুব্ধ করেছে সকল ভূমির মুজাহিদিনকেই। ঠিক যেমন ভূমিকা আল-ওয়াদী’ ইয়েমেনে পালন করেছেন সে ভূমিকাতেই আজ অবতীর্ন হতে যাচ্ছেন কমপক্ষে এক লাখ মুফতি তাদের ফাতওয়ার মাধ্যমে। ইতিপূর্বে ২০০৫-০৬ এ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরও অনুরূপ ভূমিকাতে অবতীর্ন হয়েছিলেন। এমনকি সুলতান সালাহ আদ-দ্বীন আল আইয়্যুবীর রাহিমাহুল্লাহ সময়েও এমন আলিমের সংখ্যায় বেশি ছিল যারা ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার বিপক্ষে ফাতওয়া দিয়েছিলেন। ইতিহাসে দুঃখজনক ভাবে বারবার এই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হয়েছে। সকল হিসাব-নিকাশ, আবেগ-অনুভূতির পর শেষ পর্যন্ত তিক্ত সত্য হল এ সকল আলিমদের এরকম বক্তব্য, ফাতওয়া এবং অবস্থান তাগুতের এবং কুফর শক্তির হাতে এক ধরনের শার’ঈ যৌক্তিকতার (Shar’ee Justification) অস্ত্র তুলে দেয়। আর এই অস্ত্রের মাধ্যমে তাগুত মুওয়াহিদুন ও মুজাহিদিনের বিপক্ষে তার সকল প্রকার যুলুমকে বৈধতা দেয় এবং সাধারণ মানুষের কাছে তাগুত আর মুজাহিদিনের মধ্যে এই সঙ্ঘাতের প্রকৃত রূপ অজানা থেকে যায়।
বাংলাদেশে ইতিপূর্বে আনুগত্যপন্থী সালাফিদের এধরনের অবস্থান নিয়ে অনেক যুক্তিখন্ডন, দালীলিক অপনোদন ও তর্ক-বিতর্ক হলেও, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেওবন্দী উলামায়ে কেরাম ও তালিবুল ‘ইলমদের অবস্থান নিয়ে আলোচনা অতোটা সামনে আসে নি। কিন্তু এই জঙ্গিবাদ বিরোধী ফাতওয়ার কারণে তাদের অবস্থান নিয়েও আলোচনা যুক্তিখন্ডন ও অপনোদন আবশ্যক। কারণ এ ফাতওয়া শেষ পর্যন্ত তাওহীদ ও জিহাদের বিরুদ্ধেই ফাতওয়া, যা ইসলাম ও মুসলিমদের পক্ষে যাবে না, যাবে কুফফার ও তাগুতের পক্ষে, রাষ্ট্রীয় কুফর ও শিরকের পক্ষে, নিয়ে যাবে আল ওয়ালা ওয়াল বারা থেকে ভয়ঙ্কর বিচ্যুতির দিকে। যার প্রমাণ ইতিমধ্যেই সুস্পষ্ট, যখন এ ফাতওয়া পেশ করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক কুফরের মিলনমেলা জাতিসংঘে।
সুতরাং অবশ্যম্ভাবীভাবেই মুওয়াহিদুন, মুজাহিদিন এবং আনসার আল-মুজাহিদিনের জন্য এই ফাতওয়ায় ধারণকৃত চিন্তা চেতনা ও অবস্থানের বুদ্ধিবৃত্তিক ও শার’ঈ অপনোদন করা আবশ্যক দায়িত্ব। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হল, এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব (উলামায়ে সু’র সৃষ্ট বিভ্রান্তির অপনোদন ও নিরসন) পালনের ক্ষেত্রে মূলনীতি কি হওয়া উচিত?
জিহাদের পক্ষে প্রচারনা ও জিহাদী মিডিয়ার মূলনীতির আলোচনায় শায়খ আবু বাকর নাজী রাহিমাহুল্লাহ বলেন –
“আমাদের মিডিয়া স্ট্র্যাটিজির মূল লক্ষ্য হবে দুটি শ্রেণী যার মধ্যে প্রথম শ্রেণীটি হল সাধারণ মুসলিম। আমাদের উদ্দেশ্য হবে তাদের জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করা এবং যারা জিহাদী কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত হওয়া থাকে বিরত থাকে তাদের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মনে নেতিবাচক ধারনা সৃষ্টি করা...”[৫]
তিনি আরো বলেন –
“প্রতিটি পর্যায়ে আমাদের উদ্দেশ্য হবে এমন একটী মিডিয়া/প্রচারনা কৌশলের প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন যা মুজাহিদিনের প্রতিটি অভিযানের শরীয়াহগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক যৌক্তিকতা তুলে ধরবে। বিশেষ ভাবে সাধারণ জনগণের কাছে এ যৌক্তিকতাসমূহ তুলে ধরাই গুরুত্ব পাবে। এমন মিডিয়া কৌশল প্রণয়ন থেকে একশ হাত দূরে থাকতে হবে যার টার্গেট অডিয়েন্স হল অন্যান্য ইসলামী দল বা ব্যক্তিত্ব, যারা ইতিমধ্যে এ ব্যাপারগুলো জানেন”।[৬]
অর্থাৎ শায়খের বক্তব্য হল, আমাদের মূল টার্গেট অডিয়েন্স হল সাধারণ মুসলিম জনগণ। অন্যান্য ইসলামী দল বা ব্যক্তিত্ব (কিংবা হতে পারে ফেসবুক সেলিব্রেটি) আমাদের প্রচারনা বা মিডিয়া প্রকাশনার মূল উদ্দেশ্য হবে না। কারণ তারা ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে কিছু হলেও জানেন (যদিও তারা বিরোধিতা করেন)।
কিন্তু যখন সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় আলিমদের বক্তব্যের কারণে? তখন কার্যপদ্ধতি কি হবে। এ প্রসঙ্গে শায়খ বলেন -
“আমরা স্বীকার করি অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ জনগণের উদ্দেশ্যে তৈরি কোন মিডিয়া প্রকাশনার ক্ষেত্রেও বেশির ভাগ মনোযোগ দিতে হয় অনিষ্টকারী কুটিল শায়খদের সৃষ্ট বিভ্রান্তির জবাব দেয়ার দিকে। নিঃসন্দেহে এটি অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়। তবে আমাদের মূল মনোযোগ থাকতে হবে এমন ভাবে আমাদের বক্তব্য উপস্থাপন করতে যাতে করে তা সাধারণ মানুষের চিন্তাচেতনার সাথে খাপ খায়, ও বোধগম্য হয়। উলামায়ে সু’র কারণে সাধারণ মানুষের মনে সৃষ্ট হওয়া সেইসব বিভ্রান্তি যা মানুষকে জিহাদ থেকে দূড়ে সরিয়ে রাখছে সেগুলোর অপনোদন ও নিরসন সাধারনের ভাষাতেই করতে হবে। এবং তাদের কাছে বিশেষভাবে এ সত্য তুলে ধরতে হবে, এ উলামাদের চিন্তা ও চেতনা আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালাতু ওয়াস সালাম ও আস সালাফ আস-সালেহীনের নীতির সাথে, ও চিন্তাচেতনার সাথে সাংঘর্ষিক।“[৭]
অর্থাৎ উলামায়ে সু কতৃক সৃষ্ট বিভ্রান্তির অপনোদনের সময়েও টার্গেট অডিয়েন্স থাকবে সাধারণ মানুষ। আমাদের বক্তব্য এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যা সাধারণ মানুষের প্রতি আবেদন করবে। এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ উসুলটি সঠিকভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হলে, অনর্থক আলোচনা, গন্তব্যহীন দীর্ঘ কমেন্টবক্স বিতর্ক, কাঁদা ছুড়োছুঁড়ি, আবেগতাড়িত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ, দুর্বোধ্য বা জটিল বক্তব্যসহ ইতিপূর্বে উল্লেখিত অন্যান্য সমস্যা সমূহও এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। এবং যথেষ্ট সংখ্যক মানুষ যদি এ মূলনীতির উপর ধারাবাহিক ভাবে কাজ করতে পারে তবে ইনশা আল্লাহ একটি অভিন্ন বক্তব্য সাধারণ মানুষের কাছে ক্রমান্বয়ে পৌছাবে। আমাদের বারবার নিজেদেরকে মনে করিয়ে দিতে হবে কারো সাথে তর্কে জেতা বা কোন ব্যক্তিকে আমার মতের দিকে নিয়ে আসা আমাদের উদ্দেশ্য না। আমাদের উদ্দেশ্য যতো বেশি সম্ভব মানুষের কাছে আমাদের বক্তব্য পৌছে দেওয়া।
উলামায়ে সু’র ব্যাপারে হাকীম আল-উম্মাহ আইমান আল-যাওয়াহিরি হাফিযাহুল্লাহর বক্তব্য থেকে এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়, যেখানে এ সম্পূর্ণ আলোচনার নির্যাস শায়খ সংক্ষিপ্ত পরিসারে সুস্পষ্ট ভাবে তুলে ধরেছেন। শায়খ বলেন –
"ওলামায়ে সু’ (খারাপ আলেম) দের সাথে আমাদের সংঘাত তাদের দ্বারা সৃষ্ট সংশয় দূর করা এবং তাদের মুনাফিকীর বিরুদ্ধে অকাট্য দলীল জনগনের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাদের সাথে না যুদ্ধে জড়ানো উচিত, না হত্যা করা উচিত যদি না মুসলমান ও মুজাহিদীনদের বিরুদ্ধে তাদের অপরাধ সামরিক হয়।" [৮]
অর্থাৎ আমাদের মূল কাজ দুটি –
১) উলামায়ে সু কতৃক সৃষ্ট সংশয় দূর করা।
২) তাদের মুনাফিকী এবং মুনাফিকীর বিরুদ্ধে অকাট্য দালীল প্রমাণ তুলে ধরা।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের জন্য সহজ করুন। আমাদেরকে আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে অনুধাবন ও পালন করার তাউফীক দান করুন।
সকল প্রশংসা একমাত্র জগতসমূহের অধিকর্তা আল্লাহর। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক রাসূলুল্লাহ মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর, তার ﷺ পরিবারের উপর ও তার ﷺ সাহাবাগনের উপর।
________________________________________________
[১] দাওয়াত আল-মুক্বাওয়ামাহ আল-ইসলামিয়্যাহ আল-‘আলামিয়্যাহ, পৃষ্ঠা ৭৭৫
[২] ঐ, পৃষ্ঠা ৭৭৬
[৩] ঐ, পৃষ্ঠা ৭৭৫-৭৭৬
[৪] ঐ, মুক্ববিল আল-ওয়াদী’র ব্যাপারে আরো আলোচনার জন্য দেখুন এই বইয়ের ১৪তম অধ্যায়।
[৫] “ইদরাত আল তাওয়াহ্*হুশঃ আখতার মারহালা সাতামুর্*রু বিহাল উম্মাহ” পৃষ্ঠা ২১
[৬] ঐ, পৃষ্ঠা ২১
[৭] ঐ, পৃষ্ঠা ২২]
[৮] “জিহাদের সাধারণ দিকনির্দেশনা”, আস-সাহাব মিডিয়া, ১৪৩৪ হিজরী]
****************