JustPaste.it

"তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় অপছন্দনীয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর..."


মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ। তিনি তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং এমন জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে। এবং এটাই মহাসাফল্য।। এবং আরও একটি অনুগ্রহ দিবেন, যা তোমরা পছন্দ কর। (তা হল) আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং আসন্ন বিজয়। মুমিনদেরকে এর সুসংবাদ দান করুন। [সূরা আস সাফ, ১০-১৩ ]


মুসলিম উম্মাহ আজ অন্ধকার এক সময় অতিক্রম করছে । আমাদের নিজেদের ভূখণ্ডগুলোর শাসন ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে কিছু লুটেরার দল যাদের ইসলাম নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যাথা নেই এবং যারা শুধু আরো সম্পদ, আরো ক্ষমতা অর্জন করা আর কিছু বোঝে না। এরা সবাই পশ্চিমাদের প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য দালাল যারা মুসলিম উম্মাহ এবং ইসলাম-কে ডলার পাউন্ড আর পশ্চিমা সমর্থনের বিনিময়ে বিকিয়ে দিয়েছে। আমাদের ভূখণ্ডগুলোতে ক্রমাগত কাফিররা আক্রমন করছে। তারা আল্লাহ-র রাসূল ﷺ কে ভয়াবহ ভাবে আক্রমন করছে। এবং আমাদের সমাজগুলো ভেঙ্গে যাবার উপক্রম হয়েছে। আমাদের তরুণরা ক্রমান্বয়ে পশ্চিমা সমাজের অনুসরণের মাধ্যমে নিজেদের শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে, যার ফলশ্রুতিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি নৈতিকতার চরম অবক্ষয় আমাদের সমাজে এবং দৈনন্দিন জীবনে। আমাদের চারপাশে পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোগুলো ভেঙ্গে পড়ছে। সত্য, ন্যায়, নীতি, শালীনতা, মানবতা এবং ইনসাফের যে ছিটেফোঁটাটুকু সমাজ, রাষ্ট্রে ও বিশ্বে ছিল তা বিলুপ্তপ্রায় হয়ে পড়েছে। মানুষ আজ ব্যক্তি থেকে পরিবর্তিত হয়ে আত্বকেন্দ্রিক এবং বস্তুবাদী ভোক্তায় পরিনত হয়েছে। প্রকৃত পরিবর্তন যে আদৌ সম্ভব, এ বিশ্বাস সমাজ থেকে উঠে যাচ্ছে। এবং চলমান অবস্থাকে অপরিবর্তনীয় হিসেবে ধরে নিয়েই অধিকাংশ মানুষ জীবন কাঁটিয়ে দিচ্ছে।    

এই সমস্যাগুলোর অন্তর্নিহিত কারন কি? এই সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায়ই বা কি? এই প্রশ্নগুলোর জবাব দেওয়ার আগে উমার [রাঃ] এর খিলফাতকালীন সময়ের একটা ঘটনার কথা বলি -

উমার ইবন আল-খাত্তাব (রাদি.) এর খিলাফাতের সময় তিনি শুনলেন যে, সাহাবীগণ জর্ডানে গণীমত হতে প্রাপ্ত উর্বর জমিতে কৃষিকাজে ব্যস্ত হয়ে পরেছেন। শস্য ঘরে তোলার ভরা মৌসুম পর্যন্ত উমার [রাঃ] অপেক্ষা করলেন, তারপর সমস্ত ক্ষেত-খামার আগুনে পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন। সাহাবা [রাঃ] গণ যখন অভিযোগ করতে আসলে তিনি বললেন, “এ ধরনের কাজ আহলে কিতাবগণেরর জন্য, তোমাদের কাজ হল আল্লাহর পথে জিহাদ করা এবং তাঁর দ্বীনকে প্রচার করা। ক্ষেত-খামার ও কৃষিকার্য আহলে কিতাবগণের উপর ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যাও; ওরা কৃষিকার্য করে তোমাদের খাওয়াবে; তারা তোমাদের জিযিয়া ও খারাজ কর প্রদান করবে।“

 কোন সমস্যার জন্য ইসলাম কি সমাধান দেয় সেটা খোজার আগে আমাদের নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমাদের কিছুটা চিন্তা করা উচিত। বিশেষত ইসলাম-কে কোন লেন্স দিয়ে আমরা দেখবো ব্যাপারে সুপস্ট ধারনা থাকা অপরিহার্য। আমাদের বেশকিছুটা আত্মঅনুসন্ধানের প্রয়োজন। আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত শুধু এই সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রেই না, বরং যেকোন ইস্যুতে ইসলাম আমাদের যেই সমাধান ও নির্দেশ দেয় সেটা মেনে নেওয়া এবং পালন করার জন্য আমরা প্রস্তুত কি না। অর্থাৎ আমরা কি "শুনলাম এবং মানলাম" – বলার জন্য নিজেরা প্রস্তুত কি না। এটা হল প্রথম ধাপ।

আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর (সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে) ভিন্নমত পোষণ করার ক্ষমতা নেই । আর যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়। [সূরা আহযাব, ৩৬]

তারপর আমাদের দেখতে হবে ইসলামী অ্যাপ্রোচটা আসলে কি। দেশের সংবিধান কি বলে, গণতন্ত্র কি বলে, সমাজতন্ত্র কি বলে, এই সমাজবিজ্ঞানী কি বলে, ঐ রাস্ট্রবিজ্ঞানী কি লেখে, জাতিসঙ্ঘ,বিশ্বব্যাঙ্ক আর আইএমএফ কি সাজেশান দিচ্ছে – এগুলোর বিন্দুমাত্র মূল্য ইসলামীক অ্যাপ্রোচের ক্ষেত্রে নেই। বরং ইসলামীক অ্যাপ্রোচ হল, প্রথমে কুর’আন এবং হাদীসের মধ্যে এই সমস্যার ব্যাপারে কিছু আছে কি না তার খোজ করা। যদি থাকে তাহলে সেই অনুযায়ী কাজ করার যথাসাধ্য চেস্টা করা। যদি এই দুটো সোর্সে না পাওয়া যায় তাহলে বিষয়ে সাহাবা [রাঃ]গণ এর মধ্যে কোন ভিন্নমত ছাড়া যে ইজমা হয়েছে সেটা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। মুসলিম উম্মাহ-র সমস্যাগুলোর সুস্পষ্ট সমাধানের জন্য এই দুটো ধাপ – অর্থাৎ
১)ইসলাম থেকে যা সুপস্ট ভাবে জানা যায় সেটা বিনাবাক্যব্যয়ে মানা এবং
২)কোন সমস্যার অ্যানালাইসিস এবং সমাধান খোজার সময় ইসলামীক মেথডোলজির প্রয়োগ - অপরিহার্য।
আপাতদৃষ্টিতে সহজ মনে হলেও এ দুটো ধাপ অনুসরণ করা বেশ কঠিন অথবা বলা যায় আজকের যুগে মুসলিম সমাজে এটা কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে।

যেমন আমাদের সমাজের মধ্যে কিছু মানুষকে বেশ জোরেশোরে দাবি করতে দেখা যায় ইসলামের বেশ কিছু বিধিবিধান টাইম-স্ট্যাম্প সহ অবতীর্ণ হয়েছিল এবং সেগুলো শুধু বিশেষ একটা সময়ের জন্য প্রযোজ্য ছিল। বিশেষ করে শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা, পালন এবং জিহাদের ক্ষেত্রে এ ধরণের মন্তব্য বেশী দেখা যায়। এই ধরণের মানুষরা বলে চান, যে জিহাদ এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠা [ইসলাম প্রতিষ্ঠা এবং ইসলাম দিয়ে বিচার করা] সম্পর্কিত যে আয়াতগুলো আল্লাহ আযযা ওয়াজাল কুর’আন শরীফে নাযিল করেছেন এবং হুকুম দিয়েছেন সেগুলো শুধুমাত্র রাসুলুল্লাহ
ﷺ এর সময়কাল এবং ইসলামের প্রারম্ভিক সময়ের জন্য প্রযোজ্য ছিল- নাউযুবিল্লাহ। তারা আরো দাবি করেন যে এই জিহাদ [যেন জিহাদ নেগেটিভ একটা কিছু !] হল মুসলিম উম্মাহ-র সমস্যার জন্য দায়ী। এবং আমাদের জন্য সমাধান হল, পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া, তাদের কালচার ফলো করা, “গোঁড়ামি” [তারা কখনো ব্যাখ্যা করেন না গোঁড়ামি বলতে তারা এক্সাক্টলি কি বোঝাচ্ছেন] ত্যাগ করা, ইত্যাদি। মোট কথা তাদের বক্তব্য হল জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নতির মাধ্যমে মুসলিমদের কাফিরদের পরাজিত করতে হবে। আর এর স্বপক্ষে তারা যুক্তি হিসেবে দাড় করাতে চান মধ্যযুগের বিখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানীদের, স্পেনে মুসলিমদের প্রযুক্তিগত এবং সাংস্কৃতিক উন্নতি ইত্যাদিকে। সাধারনত যারা আধুনিক সেক্যুলার শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পশ্চিমের তৈরি লেন্স দিয়ে ইসলামকে দেখতে এবং বিচার করতে চান তাঁদের মধ্যে এই প্রবণতা ব্যাপকভাবে দেখা যায়। এই মানুষগুলো এই দুটো ধাপকেই অস্বীকার করছেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ যা বলছেন সেটা তারা অগ্রাহ্য করছেন এবং তারা যে সমস্যার সমাধান একমাত্র ইসলামের মাধ্যমে সম্ভব তার সমাধান ইসলামের মধ্যে না খুজে পশ্চিমাদের সৃষ্ট আবর্জনার মধ্যে খুজে মরছেন।

প্রথমত আমাদের যে ব্যপারটা বুঝতে হবে সেটা হল কুর’আনের কোন একটা ফরয হুকুমকে কোন একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রযোজ্য বলা মারাত্মক পর্যায়ের গুনাহ। এবং এটা ওয়াহী-কে অগ্রাহ্য করার শামিল যেটা বেইসিকালী কুফর। মানসুখ হয়ে যাওয়া হুকুম ছাড়া আর সব কিছু কিয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে এটাই মুসলিমদের বিশ্বাস যা আল্লাহ-র রাসূল ﷺ- আমাদেরকে শিখিয়েছেন। তাই আমাদের জন্য পালন করা কস্টকর বা আমাদের লাইফস্টাইলের সাথে মিলছে না দেখে কনভিনিয়েন্সের স্বার্থে বা পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির অনুসরনের কারনে প্রভাবিত হয়ে এরকম একটা কথা বলার আগে আমাদের কমপক্ষে একশ’বার চিন্তা করা উচিত যে এই কথা বলার মাধ্যমে আমি কি কুফর করছি কি না।

দ্বিতীয়ত, কোন কবির কোয়ান্টাম এন্ট্যাংগেলমেন্ট [Quantum Entanglement] সম্পর্কিত ব্যাখ্যা বা একজন হাতুড়ে ডাক্তারের ক্যান্সারের চিকিৎসা যেমন গ্রহনযোগ্য না একইরকমভাবে একজন ব্যক্তি যে কুর’আন, সীরাহ, হাদীস এবং ফিকহ নিয়ে পড়াশোনা করে নি তাঁর ইসলামের এই পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ হুকুম সম্পর্কে কোন ব্যক্তিগত, মনগড়া মন্তব্য গ্রহনযোগ্য তো না-ই, বরং এরকম বক্তব্য করাই তাঁর অজ্ঞতার পরিচায়ক। ব্যক্তিগত জীবনে সেক্যুলার শিক্ষায় যতোই শিক্ষিত হন না কেন , আপনি একজন ভিসি, সচিব, বা কোটিপতি ব্যবসায়ী হলেও তাতে কিছু যায় আসে না। বিজ্ঞানের প্রতিটা শাখায় যতোটুকু স্ট্রাকচারড ফ্রেইমওয়ার্ক আছে তাঁর চাইতে অনেকগুন বেশী স্ট্রাকচারড ফ্রেইমওয়ার্ক আছে ইসলামের আহকাম, ফিকহ এবং উসুলের শিক্ষায়। ইসলামের যেই ফারয হুকুম যা নিয়ে ১৪০০ শতাব্দী ধরে মুফাসসীর, মুহাদ্দিস, ফাকীহ এবং ইমামগনের, এবং তাঁর চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ সাহাবা [রাঃ] গণের ইজমা আছে – অ্যাবসোলিউট ঐক্যমত আছে,ক্লাস নাইন-টেনের “ইসলাম শিক্ষা” বই, কয়েকটা সেক্যুলার ডিগ্রী আর দু-একটা বই- বা আর্টিকেল লব্ধ জ্ঞান আপনাকে যোগ্যতা দেয় না সেই বিষয় নিয়ে নির্বোধের মতো মন্তব্য করার। ব্যাপারটা হাতুড়ে ডাক্তারের সর্বরোগের ঔষধ আবিষ্কারের দাবির চাইতেও হাস্যকর। সেক্যুলার দুনিয়ার ক্রেডেনশিয়াল দিয়ে আপনি ইসলাম দিয়ে জ্ঞান দেখাতে আসলে আপনি শুধু মূর্খ না, আপনি নির্বোধ, উদ্ধত এবং অহংকারী মূর্খ। সুতরাং স্পেশালাইযড নলেজ ছাড়া দুম করে যেমন আপনি যেমন অ্যাপ্লাইড ফিযিক্স বা কেমিস্ট্রি বা ম্যাথম্যাটিকস নিয়ে একটা মন্তব্য করে ফেলবেন না ঠিক একইভাবে কুর’আনের আয়াতের ব্যাখা এবং হাদিসের ব্যাখা করতেও যাবেন না।

তৃতীয়ত, আপনি যদি একটু মনোযোগ দিয়ে ইসলামী ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে দেখবেন মুসলিমদের দ্বারা জ্ঞানবিজ্ঞানের যে উন্নতি এবং উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে তার পুরোটুকুই হয়েছে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবার পর। এবং এই প্রতিষ্ঠা হয়েছে জিহাদের মাধ্যমে। আপনি যখন সামরিকভাবে একটা সভ্যতাকে শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত করবেন একমাত্র তারপরই আপনি জ্ঞানবিজ্ঞানের উন্নতির দিকে নজর দিতে পারবেন। আপনি যদি ইউরোপীয় সভ্যতার দিকে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন তাদের জ্ঞানবিজ্ঞানগত এবং সাংস্কৃতিক উন্নতি সাধিত হয়েছে শিল্পবিপ্লবের [Industrial Revolution] পর। আর শিল্পবিপ্লবের পেছনে চালিকাশক্তি ছিল ছিল ইউরোপীয়দের তৎকালীন কলোনীগুলো [বিশেষ করে ভারতবর্ষ] থেকে লুটপাট ও অমানবিক শোষণের মাধ্যমে পাওয়া সম্পদ। এমনকি পৃথিবীর ইতিহাসে আপনি এমন কোন উদাহরন পাবেন না যেখানে সামরিক শক্তি অর্জন এব্বং প্রতিরক্ষা অর্জনের আগে কোন সভ্যতা জ্ঞানবিজ্ঞান এবং সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে উন্নতি লাভ করেছে। Causality এর দিক দিয়ে চিন্তা করলে এই উন্নতি হল অস্ত্রের মাধ্যমে শক্তি অর্জনের পরবর্তী ফলাফল। এবং এই উন্নতি সামরিক শক্তি ও প্রতিরক্ষার উপর নির্ভরশীল। সুতরাং আপনি যখন বলছেন মুসলিম উম্মাহ-র সমস্যার সমাধান হল জ্ঞানবিজ্ঞানে উন্নতি তখন আপনি গাড়িকে ঘোড়ার আগে বাধতে বলছেন। যা সম্পূর্ণভাবে অযৌক্তিক।

এই ধরণের মন্তব্য এবং দৃষ্টিভঙ্গি বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে উম্মাহ-র মূল সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করা এবং তাঁর সমাধান করার ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় বাধার একটি। এবং সমস্যার একটা কারণও বটে। ইসলামী শারীয়াহ আল্লাহ আযযা ওয়াজালের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান এবং আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও বৈশ্বিক সব সমস্যার সমাধান ইসলামে দেয়া আছে। হোক সেটা মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া, বর্ষবরণে বস্ত্রহরণের মতো ভয়ানক পরিস্থিতির সমাধান করা অথবা গ্লোবাল ওয়ারমিং সঠীকভাবে মোকাবেলা করা – আপনি বিশ্বাস করুন আর নাই করুন।

“...আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়্যামাত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।“
[সূরা মায়’ইদা, আয়াত ৩]

কিন্তু এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল এই সত্যটা অনুধাবন করা যে এইসব সমস্যার সমাধান ইসলামের আছে এটার অর্থ এই সমাধানগুলো শুধুমাত্র ইসলামকেই অবিকৃত, অপরিবর্তিত এবং সম্পূর্ণভাবে পালন করার মাধ্যমেই আসবে, আংশিক বা বিকৃতভাবে ইসলাম অনুসরন করার মাধ্যমে আসবে না। ইসলাম ছেড়ে অন্য দর্শনে উত্তর খজার মাধ্যমে আসবে না। নিজে শুধু মুখে কালেমা উচ্চারন করলে কিন্তু কাজের মাধ্যমে তা প্রমান না করলে এই সমাধানগুলো আসবে না।  বর্তমান সময়ে মুসলিম উম্মাহ-র সমস্যার কারন, প্রকৃতি এবং সমাধান সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্য পরিস্কার। আমাদের, মুসলিম উম্মাহ আজ যেসব সমস্যার মুখোমুখি এগুলোর কারন অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক দুর্বলতা, অথবা জ্ঞানবিজ্ঞানে পিছিয়ে থাকা অথবা দুর্বল প্রশাসন অথবা শাসন ব্যবস্থা না। বরং এগুলো সবই হল মূল সমস্যার বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। আমাদের সমস্যাগুলোর মূল কারন হল প্রকৃত ইসলাম প্রতিষ্ঠা এবং পালন থেকে দূরে সরে আসা। যার কারনে আমাদের উপর এই দুর্দশা আপতিত হয়েছে। আল্লাহর রাসূল ﷺ সুস্পষ্ট ভাবে এই ব্যাপারে আমাদের সতর্ক করেছেন এবং এই সমস্যার সমাধানও উল্লেখে করে দিয়েছেন। এবং এটা আমাদের দুর্দশারই একটা অংশ যে আমরা এই সুস্পষ্ট সতর্কবাণী এবং সমাধান আমাদের মাঝে থাকা সত্ত্বেও অন্য জায়গায় আমাদের সমস্যার সমাধানের উপায় খুজছি।


রাসূল ﷺ বলেনঃ
“যখন তোমরা ব্যাবসা-বাণিজ্যে ডুবে যাবে, গরুর লেজের পিছনে পড়ে থাকবে, কৃষিকার্য নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে আর আল্লাহর পথে জিহাদ পরিত্যাগ করবে,আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের উপর দুর্দশা আপতিত করবেন এবং ততক্ষণ পর্যন্ত তা তুলে নেয়া হবে না যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রকৃত দ্বীনে (অর্থাৎ ইসলামে) ফিরে আসবে।” [সুনান আবু দাঊদ, অধ্যায়- ২৩, হাদীস নং ৩৪৫৫; সহীহ আল-জামী‘, হাদীস নং- ৬৮৮; আহমদ,হাদীস নং ৪৮২৫]

এ হাদীসের ভাষ্যকারগণ বলেন এখানে, ‘দ্বীনে ফিরে যাওয়া’ অর্থ হল জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ-র [আল্লাহ-র পথে জিহাদ] দিকে প্রত্যাবর্তন করা, কেননা রাসূল ﷺ জিহাদ ছেড়ে দেয়াকে দ্বীন পরিত্যাগের কারণ বলেছেন, তাহলে জিহাদ ও দ্বীন পরস্পর সমার্থক, এবং এটা উম্মাতের কোন ব্যক্তির দাবি না বরং আল্লাহ-র রাসুল, আল্লাহ-র হাবীব মুহাম্মাদ ﷺ- - এর ব্যাখ্যা। আল্লাহ-র রাসূল ﷺ এখানে জিহাদকে আকড়ে ধরে রাখাকে দ্বীন আঁকড়ে ধরে রাখার সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত করেছেন। সুতরাং এই কথার পরে কোন মুসলিমের এই বিষয়ে আর কিছু বলার থাকতে পারে না। হাদীস থেকে এটা স্পস্ট যে মুসলিমদের বর্তমান দুর্দশার কারন কি এবং সমাধান কি, এবং এই হাদিসটী রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মু’জিযা এবং নাবুয়্যাতের অসংখ্য প্রমানের মধ্যে আরো একটি প্রমান। উনি যা বলেছেন অক্ষরে অক্ষরে তা আমাদের সময়ে এসে সত্য প্রমানিত হচ্ছে। সকল প্রশংসা আল্লাহ আযযা ওয়াজালের যিনি তাঁর রাসূল ﷺ কে প্রেরনের মাধ্যমে আমাদের অন্ধকার থেকে আলোর পথে চালিত করেছেন।

এই হাদীসে রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাদের সমস্যা ও তাঁর সমাধানের পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। মজার ব্যাপার হল, হাদীসে যে সব সমস্যার কথা বলা হয়েছে, পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত মুসলিমরা আজকে সেটাকেই সমাধানের উপায় বলে দাবি করছেন। তারা দাবী করছেন যে, যদি আমরা অন্যান্য জাতির ন্যায় কৃষি, শিল্প, বাণিজ্যসহ সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক সমৃদ্ধি অর্জন করে ওদের সমকক্ষতা লাভ করতে পারি কেবল তখন উম্মতের বিজয় অর্জন হবে। সুতরাং আমরা যদি কৃষিতে সফল হই, শিল্প,ব্যবসা বাণিজ্য ও প্রযুক্তিসহ সকল ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করি এবং তাই উম্মতের সামনে সমাধানের খোলা পথ। কিন্তু রাসুলুল্লাহ ﷺ ঠিক এগুলোকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কতিপয় মুসলিম বলে থাকে যে, উম্মতকে সন্ত্রাসের পথ পরিহার করে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, প্রযুক্তিসহ সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের দিকে মনোযোগী হওয়া উচিত। কেবল এভাবেই পৃথিবীর অন্য সকল দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে সমান তালে চলা সম্ভব। রাসূল ﷺ বলেন সেরকম করা ভুল আর আমরা ভুল করলে আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের অপমান করবেন।

আজকে কি আমরা এই অবস্থাই দেখছি না? একদিকে উম্মাহ ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিকাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে আর আল্লাহ-র পথে জিহাদকে ছেড়ে দিয়েছে আর অন্যদিকে ইসলামের শত্রুরা মুসলিমের নির্বিচারে হত্যা করছে, মুসলিমদের নারীদের লাঞ্ছিত করছে আর আলাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ কে নিয়ে ভয়ঙ্কর কটূক্তি করছে? আর আমরা সমাধান খুজছি পশ্চিমাদের শেখানো গণতন্ত্র, নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ আর জ্ঞানবিজ্ঞানে উন্নতি করার মধ্যে? অথচ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ﷺ বক্তব্য স্পস্ট। যতোক্ষন আমরা আল্লাহ-র পথে জিহাদ থেকে দূরে থাকবো ততোক্ষন আমরা প্রকৃত দ্বীন ইসলাম থেকে দূরে থাকবো, আর যতোক্ষন আমরা দ্বীন ইসলাম থেকে দূরে থাকবো ততোক্ষন আমাদের আমরা এই দুর্দশা এবং অপমান থেকে মুক্তি পাবো না। আল্লাহ আযযাওয়াজাল আমাদেরকে সংস্কার, ব্যক্তিগত অহংবোধ, আরামপ্রিয়তা, স্ব-আরোপিত এবং পশ্চিমা সংস্কৃতি ও শিক্ষার মাধ্যমে আরোপিত অজ্ঞানতার ঊর্ধ্বে উঠে সত্যকে চেনার তাউফিক দান করুন। আমীন।    



“তোমাদের উপর কিতাল [জিহাদ] ফরয করা হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না।“ [সূরা আল বাকারা, ২১৬ ]

“অবশ্যই আল্লাহ জান্নাতের বিনিময়ে তাদের [বিশ্বাসীদের] জান ও মালকে কিনে নিয়েছেন। এরা আল্লাহর পথে জিহাদ করে অতঃপর হত্যা করে ও নিহতও হয়”। -সুরা তাওবাঃ ১১১

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “এই দ্বীন সর্বদা টিকে থাকবে এবং দ্বীনকে কায়েম রাখার জন্য মুসলিমদের একটি দল কিয়ামাত পর্যন্ত সশস্ত্র জিহাদ চালিয়ে যাবে”[সাহিহ মুসলিম, কিতাবুল ইমারাহ ২০/৪৭১৭]

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন-  জিহাদ কিয়ামাত পর্যন্ত চলবে এবং কিয়ামাত পর্যন্ত মুসলিমদের মধ্যে একটি দল আল্লাহর পথে জিহাদে রত থাকবে
(মুসলিম, আহমাদ, ইবন হিব্বান)

উকবা ইবনে আমের (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছিঃ
আমার উম্মতের একদল লোক সর্বদা আল্লাহর হুকুমের উপর অবিচল থাকার জন্য শত্রুর বিরুদ্ধে কিতাল (লড়াই) করতে থাকবে। যারা তাদের বিরোধিতা করবে তারা তাদের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। এই অবস্থায় তাদের কাছে কিয়ামাতের মুহূর্ত এসে যাবে এবং তারা হক প্রতিষ্ঠায় শত্রুর মুকাবিলা করতে থাকবে।”
[সাহিহ মুসলিম, কিতাবুল ইমারাহ ২০/৪৭২১]