JustPaste.it

কেন ইসলামের বিজয় অবশ্যম্ভাবী – বাংলাদেশ অধ্যায়

দিগ্বিজয়ী অ্যালেক্স্যান্ডারের বিশাল সাম্রাজ্য কেন তাঁর মৃত্যুর পর মাত্র একটি শতাব্দীও টিকে থাকতে পারলো না? কেন মধ্য আর উত্তর এশিয়ার বিস্তীর্ণ স্তেপ ভূমি থেকে পঙ্গপালের মতো ধেয়ে আসা একদা অপ্রতিরোধ্য মঙ্গোল বাহিনী হালাকু খানের মৃত্যুর একশো বছরের মধ্যেই নিজ পূর্বপুরুষদের হাজার বছরের প্রকৃতি পূজার ধর্ম ত্যাগ করে দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করলো? কেন বিজয়ী বিজিতের ধর্মে দীক্ষিত হল? পারস্য সম্রাট হরমুজান যাদেরকে মরুভূমিতে ছুটোছুটি করা লক্ষ্যহীন কুকুরের পাল বলে তাচ্ছিল্য করেছিলো, কোন শক্তিবলে সেই আরবরাই হাজার বছরের পার্সিয়ান সাম্রাজ্যকে মাত্র কয়েক বছরে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ধ্বংস করেছিলো? কেন নিযুত সদস্য বিশিষ্ট নাৎসি ওয়্যারম্যাখট (প্রতিরক্ষা বাহিনী) এর কোন ছিটেফোটা আজ মাত্র সাত দশক পর খুজে পাওয়া যায় না? কেন ককেশাসের দুর্গম তুষারাচ্ছন্ন পাহাড়ের বুকে বসবাস করা লোকবল,আর্থিক আর সামরিক দিক দিয়ে দুর্বল, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু গোত্রের বিরুদ্ধে যারিস্ট, তারপর সোশ্যালিস্ট এবং শেষপর্যন্ত পুতিনের আজকের অভিজাতান্ত্রিক পুজিবাদী (Oligarchical Capitalism) রাশিয়া শতাব্দীর পর শতাব্দী যুদ্ধ চালানোর পরও বিজয়ী হতে পারে না? আর কেনই বা প্রথমে সোভিয়েত রাশিয়া আর তারপর ন্যাটো নেতৃত্বাধীন প্রায় ৬০ টি দেশের সামরিক জোট বারবার অসম যুদ্ধে আফগানিস্তানে পরাজিত হয়? কিভাবে পৃথিবীর সবচাইতে দরিদ্র দেশগুলোর একটি বিশ বছরের ব্যবধানে বিশ্বের দুটো পরাশক্তিকে পরাজিত করে?

এই সবগুলো প্রশ্নের উত্তরে ঘুরেফিরে বারবার যে কথাটা উচ্চারিত হবে সেটা হল – আদর্শিক শক্তি। আদর্শের শক্তিতে বলীয়ান হয়েই সামরিক,অর্থনৈতিক, প্রযুক্তি এবং জনবলের দিক দিয়ে যোজন যোজন পিছিয়ে থাকার পরও বারবার ক্ষুদ্র প্রতিপক্ষ পরাশক্তিকে পরাজিত করে। আর আদর্শিক দৈন্যতার কারনেই বিপুল অর্থ-বিত্ত-শক্তি এবং সাময়িক সাফল্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও একদা প্রবল পরাক্রান্ত মেসিডোনিয়ান, পার্সিয়ান, রোমান, মঙ্গোল, কমিউনিস্ট এবং নাৎসি সাম্রাজ্য আজ বিলুপ্ত। এবং নিঃসন্দেহে পুজি ও ভোগবাদী আম্রিকি সাম্রাজ্যের জন্যও অপেক্ষা করছে এই একই পরিনিতি। শক্তি প্রয়োগে সাম্রাজ্য বিস্তার করে সাময়িক সাফল্য অর্জন পাওয়া গেলেও দুর্বল আদর্শ কখনোই স্থায়ী হয় না। তাই পার্থিব বিভিন্ন দিক যেমন; সামরিক, অর্থনৈতিক,রাষ্ট্রীয় শক্তিমত্তা কিম্বা জনবল ও জনসমর্থন দিয়ে আদর্শের শক্তিমত্তা কিম্বা ইতিহাসের গতিপথ পরিমাপ করা যায় না। বিশুদ্ধ ও পূর্ণাঙ্গ আদর্শিক গাঁথুনি ছাড়া ইতিহাসের ১০০ মিটার রেইস হয়তোবা জেতা সম্ভব, কিন্তু ম্যারাথনে গিয়ে; দীর্ঘমেয়াদে – শেষ পর্যন্ত বিজয় হয় শক্তিশালী আদর্শেরই। এবং এই সত্য বাংলাদেশ নামক এই আকারে ক্ষুদ্র কিন্তু বিস্তীর্ণভাবে অদ্ভুতুড়ে বদ্বীপের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।  

একথা সত্য রাষ্ট্রীয়, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, মিডিয়া এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জাতীয়তাবাদ, ভোগবাদ, বস্তুবাদ, সেক্যুলারিসম, সোশ্যালিসম আর নাস্তিকতা মেলানো একটা জগাখিচুড়ী চিন্তাধারা বাংলাদেশে জেকে বসে আছে। বিশেষ করে রাস্ট্র ও সমাজের উপরের পর্যায়ে। কিন্তু এই বিশ্বাসের ভিত্তি অত্যন্ত নাজুক। শেকড় অগভীর। আপাতদৃষ্টিতে আকাশচুম্বী এই দালানকোঠা প্রকৃতপক্ষে তাসের ঘরের চাইতেও ঠুনকো। কোন আদর্শের জোরে না বরং এটা টিকে আছে রাষ্ট্রীয় পেশীশক্তি, মিডিয়া প্রোপাগ্যান্ডা এবং কলোনিয়াল মালিকদের সমর্থন এবং ডলার-ইউরো-রুপির জোরে। বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে দেউলিয়া এই এস্টাবলিশমেন্টের কোন সাধ্য নেই ইসলামের আদর্শিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার। এজন্যই পশ্চিমা মালিকদের সাথে সুর মিলিয়ে সুস্থ আলোচনা বা বিতর্কের পরিবর্তে, দেশীয় এস্টাবলিশমেন্টও প্রকৃত ইসলামের চর্চাকে “জঙ্গীবাদ” বলে ধামা চাপা দিতে চায়। আদর্শিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে ইসলামের মুখোমুখি হবার শক্তি এবং সৎ সাহস না থাকার কারনেই গায়ের জোরে কিম্বা গালির জোরে তারা ইসলামের আলোকে নিভিয়ে দিতে চায়।

কিন্তু সত্যিকারভাবে, সততা এবং নিষ্ঠার সাথে, কোন রকম পক্ষপাত, বিদ্বেষ কিম্বা পূর্বসংস্কারের চশমা ছাড়া, সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষভাবে কোন মানুষ – মুসলিম কিম্বা কাফির - যদি বর্তমান বাংলাদেশের আদর্শিক ল্যান্ডস্কেপের একটা তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেন তাহলে এ সত্য তাঁর কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে যে ইসলামের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। এই বিজয় কখন আসবে সেটার পূর্বাভাস হয়তো করা সম্ভব না – কারন বিজয় আল্লাহ আযযা ওয়াজাল এর ইচ্ছা ও নুসরা-এর উপর নির্ভরশীল – কিন্তু আল্লাহ-র ইচ্ছায় বিজয় যে আসবেই নিশ্চিতভাবেই তা বলা সম্ভব।       

***


ইতিহাস সাক্ষী দিচ্ছে কোন আদর্শের অনুসারীরা কতো অর্থ-সম্পদ অর্জন করলো, কতো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নতি করলো, কতো সামরিক সক্ষমতা অর্জন করলো, কতো বড়, কতো উচু টাওয়ার, রকেট কিম্বা পিরামিড বানালো, কতো বেশী বই-সঙ্গীত-সিনেমা প্রকাশ করলো – এর কোনটাই ওই আদর্শের শক্তিমত্তা সম্পর্কে ধারনা দেয় না। তাহলে একটা আদর্শের শক্তিমত্তা কিভাবে পরিমাপ করা সম্ভব?

কোন আদর্শের শক্তি সম্পর্কে ধারনা পেতে হলে আপনাকে তাকাতে হবে সেই আদর্শের অনুসারীদের উপর সেই আদর্শের প্রভাব কতোটা তার দিকে। এবং এখানে প্রভাব বলতে, ব্যক্তির চিন্তাচেতনা থেকে শুরু করে, ব্যক্তির পরিচয়, আচরণ, কাজ, উদ্দেশ্য, দৃঢ়তা – জীবন সবক্ষেত্রের উপর প্রভাবের কথাই বোঝানো হচ্ছে। এখানে খেয়াল করার মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, এই প্রভাব পরিমাপ করার সময় মানুষ মুখে কি বলছে তার চাইতে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে মানুষ আসলে কি করছে তার উপর। উদাহরণ স্বরূপ, একজন হয়তো মুখে ব্যাপক সমাজতান্ত্রিক – সারাক্ষন শ্রেনীসঙ্ঘাত আর শ্রেনীশত্রু নির্মূলের কথা, কিন্তু তার নিজের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে বিয়ে করছে “শ্রেণী শত্রুর” তৈরি প্রথা আর জাকজমক নিয়েই – এক্ষেত্রে তার মুখের কথা গ্রহনযোগ্য না। অথবা ধরা যাক একজন ব্যাপক জাতীয়তাবাদী। হাজার বছরের বাঙ্গালী সভ্যতার পূজারী, কিন্তু ফেব্রু- মার্চ-ডিসেম্বরের কয়েকটা দিন ছাড়া তার দিন কাটে হিন্দুস্তানী বলিউড অথবা ফিরিঙ্গী হলিউড কালচার নিয়ে, অথবা হাজার বছরের বাঙ্গালী সভ্যতা জিনিষটা কি, এই প্রশ্নের কোন সদুত্তর বা উত্তর তার আছে নেই – এক্ষেত্রেও তার মুখের বুলির জোর দিয়ে আমরা তার আদর্শের জোর হিসাব করবো না। আরেকজন মনে-প্রানে বিশ্বাস করে ইতিহাসের শুরু ১৯৭১ এ, কিন্তু ৭১ সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য এবং ৭১ এর সংগ্রাম ও যুদ্ধে এদেশের সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের প্রকৃত কারন ও ধরন সম্পর্কে সত্য স্বীকার করতে সে নারাজ। কেউ হয়তো নিজেকে মুক্তচিন্তার ধারক ও বাহক মনে করছে কিন্তু তার “মুক্ত” চিন্তা ওরিয়েন্টালিস্টদের ফ্রেইমওয়ার্কের ভেতরেই ঘুরপাক খাচ্ছে, সাদা চামড়ার শেখানো প্যারাডাইমের বাইরে তার “মুক্তমন” যেতে পারছে না। এছাড়া এমনো হতে পারে যে কেউ দাবি করছে সে ফ্রী-স্পিরিট, মুক্ত-স্বাধীন স্পিরিচুয়াল এক সত্ত্বা যে ধর্ম-প্রথা-সংস্কার ইত্যাদির ধরাবাঁধা রীতিনীতির মধ্যে নেই, কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে তার ফ্রী-স্পিরিট মদ-মাংশ-মাৎসর্য-এর মোহের ভেতরেই ধরা ও বাঁধা পড়ে আছে। এসব ক্ষেত্রেই মুখের বুলিগুলোকে আমরা শুধু অর্থহীন বুলি হিসেবেই দেখবো। এধরনের কথার সাথে চিন্তা-ধ্যান ধারনা ও কাজের অসামঞ্জস্যকে আমরা হিপোক্রেসি হিসেবেই দেখবো, এবং এসব কথার সেই ভিত্তিতে আদর্শের শক্তিমত্তা পরিমাপ করতে যাবো না, কারন এ ধরনের মানুষকে আদর্শিক মানুষ বলা যায় না।  
    
তাহলে ঠিক কি ভাবে আমরা অগ্রসর হবো? এক্ষেত্রে আমরা কিছু সূচক (Indicator) –এর দ্বারস্থ হতে পারি, যেগুলো একটা আদর্শের শক্তি, এবং অনুসারীদের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে ধারনা পেতে এবং, বিভিন্ন আদর্শের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে আমাদের সাহায্য করবে।


কোন আদর্শের শক্তিমত্তা পরিমাপের জন্য আমরা নিচের প্রশ্নগুলোর দিকে লক্ষ্য করতে পারি -

১। আদর্শের উদ্ভুদ্ধ করার ক্ষমতা কতোটুকু? [To what extent can it motivate its followers?]. এই আদর্শের জন্য কি অনুসারীরা রাস্তায় নেমে কাজ করতে, সময় ও শ্রম দীর্ঘদিন ধরে দিতে প্রস্তুত? আদর্শ কি এজন্য তাদের উদ্ভুদ্ধ করতে পারছে?

২। আদর্শ কি তার অনুসারীর জন্য পূর্ণাঙ্গ ব্যক্তি পরিচয় (Identity) তৈরি করতে পারছে? অনুসারী কি নিজেকে এই আদর্শের অনুসারী হিসেবে সমাজে আলাদা করে চিন্তা পারছে? ব্যক্তি জীবনের তিনটি ক্ষেত্রে – পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক – সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিতে পারছে? অনুসারীর সামনে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং তাতে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া পরিস্কার ভাবে তুলে ধরতে পারছে? [ is it capable of creating a unique, distinguishable and implementable identity in all aspects of an individuals life? ]

৩। এই আদর্শের জন্য অনুসারী স্বেচ্ছায় (পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে না) কতোটুকু আত্মত্যাগ করতে রাজী আছে? আদর্শের কারনে অনুসারী কি স্বেচ্ছায় আরামদায়ক, সুখী, প্রাচুর্যপূর্ণ জীবন ত্যাগ করে দারিদ্রতাপূর্ণ, রুক্ষ, কঠোর জীবনযাপনে অথবা সম্পূর্ণভাবে জীবন উৎসর্গ করতে রাজী হবে? এক্ষেত্রে অবশ্যই বাধ্য হয়ে কোন কিছু ত্যাগ করা এবং স্বেচ্ছায় কোন কিছু ত্যাগ করার মাঝে পার্থক্যের দিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

৪। এই আদর্শ কি পরিমাণ প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়ে টিকে থাকতে সক্ষম? অন্যভাবে বলা যায়, সহায়ক পরিস্থিতি ও পরিবেশের অনুপস্থিতি এবং চরম প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়ে অনির্দিষ্ট ও দীর্ঘসময় কি এই আদর্শ টিকে থাকতে পারবে?

৫। এই আদর্শ কি এর অনুসারী জনগোষ্ঠীর জন্য একটা স্বতন্ত্র বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি [Worldview] তৈরি করতে পারছে? চিন্তাগতভাবে ভাবে একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন, পৃথক, স্বয়ংসম্পূর্ণ ও শক্তিশালী দৃষ্টিভঙ্গি ও কাঠামো তৈরিতে কি এই আদর্শ সক্ষম? এটা কি একটা সমাজের জন্য সংস্কৃতি, ইতিহাস, নীতি ও রাজনৈতিকভাবে চালিকা শক্তি ও দিকনির্দেশক হতে সক্ষম?  

৬। বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে এটা কতোটা সুপ্রতিষ্ঠিত? এর বুদ্ধিবৃত্তিক গাঁথুনি কতোটা মজবুত? এটা কি নিছক প্রয়োজন, খেয়াল, ঝোক, মোহ কিম্বা প্রতিক্রিয়াশীলতার উপর নির্ভর করে তৈরি না কি শক্ত আদর্শিক ও যৌক্তিক ভিতের উপর তৈরি?

এবার এই প্রশ্নগুলোর আলোকে বলুন জাতীয়তাবাদ, নব্য সমাজতন্ত্র, বস্তুবাদ, ভোগবাদ, সেক্যুলারিসম, Utilitarianism, পুজিবাদ কিম্বা নাস্তিকতা – কোন আদর্শটা ইসলামের ধারে কাছেও আসতে সক্ষম? বরং নিজেকে প্রশ্ন করুন এই সব গুলো মিলেও আদৌ আদর্শিকভাবে ইসলামের শক্তিমত্তার মোকাবেলা করতে সক্ষম কি না?

৭১–ভিত্তিক বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ ২৫ শে মার্চের আগ পর্যন্ত উচ্চ-মধ্য-নিম্নবিত্ত কাউকেই জাতীয়তাবাদের জন্য নিজের সংসার কিম্বা পারিবারিক জীবন ছেড়ে যুদ্ধ করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে নি। ৭১ –এ যুদ্ধ হয়েছে ম্যাসাকারের পরে, আত্মরক্ষার্থে – নিজেকে এবং নিজের প্রিয়জনদের বাঁচানোর জন্য, কোন মিথিকাল উচ্চাঙ্গের আদর্শের জন্যে না। আর নব্য সমাজতন্ত্র, বস্তুবাদ, ভোগবাদ, সেক্যুলারিসম, Utilitarianism, পুজিবাদ কিম্বা নাস্তিকতা – কোনটাই ছ’টা প্রশ্নের একটারও সন্তোষজনক হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিতে পারে না। এগুলো বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই চরম ব্যক্তি ও অহংবাদী [Individualistic and Egoistical] দর্শন যেগুলো ব্যক্তি স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা ইত্যাদির কিছু অসম্পূর্ণ সংজ্ঞার উপর ভিত্তি করে বানানো কিছু বায়বীয় ধারনাকে ইনসাফ, নৈতিকতা, শান্তি সত্যিকার মানবতার চাইতে বেশী দাম দেয়। এসবের অনুসরণ মানুষ যতোটা না আদর্শিক কারনে করে তার চাইতে বেশী করে সুবিধাবাদীতার [Convenience] কারনে। নিজে যেই অবক্ষয়, লাম্পট্য অথবা জীবনধারায় অভ্যস্ত সেগুলোকে সমর্থন করা যায় বলে এবং কস্টসাধ্য সঠিক কাজ করার অনীহা থেকে মানুষ প্রয়োজনে প্রগতিশীল অথবা পুজিবাদী অথবা বস্তুবাদী অথবা ভোগবাদী অথবা উদারনৈতিক কিম্বা সমাজতান্ত্রিক হয়। প্রয়োজনের কারনে কখনো বা একটা একটা করে, কখনো বা কয়েকটা একই সাথে। আর কিছু ক্ষেত্রে, এধরনের পারিপার্শ্বিকতায় বেড়ে ওঠার কারনে ব্যক্তি এগুলোকেই শাশ্বত সত্য হিসেবে মেনে নেয়। এদের মধ্যে একমাত্র নব্য বামপন্থার [New Left] কিছু সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় ডিমেনশান আছে , এবং একারনে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে এটা অন্যগুলোর চাইতে কিছুটা শক্তিশালী, কিন্তু সেটাও শুধু তুলনামূলকভাবে। এর অনুসারীরা আদর্শের কারনে রাস্তায় নেমে আসে না, আর আসলেও আসে শুধু মশাল মিছিল, নাচানাচি, হাত ধরাধরি, মোমবাতি জ্বালানো, ফানুশ ওড়ানো আর বিরিয়ানী খাবার জন্য। এর অনুসারীরা আদর্শের জন্য বছরের পর জেল-জুলুম কিম্বা ফাসি-ক্রসফায়ার সহ্য করতে তৈরি না। শুধুমাত্র আদর্শের কারনে তারা আরাম-আয়েশের দুশ্চিন্তাহীন জীবন ছেড়ে যুদ্ধক্ষেত্রের কঠোরতা আর মৃত্যুর মুখোমুখি হতে রাজি না। এরা দর্শনে বামপন্থী হলেও খাওয়া-দাওয়া, চাকরি-বাসার ক্ষেত্রে পাক্কা ক্যাপিটালিস্ট।

এবার এসবের সাথে তুলনা করুন এমন একটা আদর্শের যার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মালিক সব ছেড়েছুড়ে পাহাড়ের গুহায় দিন কাটাতে রাজি হয়ে যায়। মন্ত্রীর ছেলে মাসজিদের ইমাম হয়ে যায়। আই সার্জন হাসি মুখে জেলে যেতে প্রস্তুত হয়ে যায়। মেধাবী ছেলেরা উজ্জ্বল ক্যারিয়ার ছুড়ে ফেলে হাসি মুখে শহীদ হবার জন্য উদগ্রিব হয়ে ওঠে। তুলনা করুন এমন একটা আদর্শের সাথে যা বাস্তুহীন থেকে বিলিয়েনেয়ার সবাইকে একইরকম ভাবে প্রভাবিত করে, উদ্বুদ্ধ করে। নিরক্ষর থেকে শুরু করে এমআইটি গ্র্যাজুয়েট পিএইচডী হোল্ডার পর্যন্ত সবাইকে একই কাতারে এনে দাড় করিয়ে দেয়। বিলাল আর মুস’আব-কে, আম্মার আর উসমান-কে, সালমান আর উমার-কে (রাঃ) একইভাবে আন্দোলিত করে। এমন একটা আদর্শ যার শক্তিতে বলীয়ান হয়ে মানুষ জেল-রিমান্ড, ওয়াটার-বোর্ডিং, কার্পেট বম্বিং, রেন্ডিশান প্রোগ্রাম সব কিছু সহ্য করার, সব ভয় উপেক্ষা করার শক্তি পায়। পুরো বিশ্বের মুখোমুখি দাড়িয়ে সমগ্র বিশ্ব ব্যবস্থাকে উপড়ে ফেলে একটা শারীয়াহ-কে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য একনিষ্ঠ ভাবে কাজ করে যায়। এবং মনে রাখুন এই আদর্শের মূল উৎস ১৪০০ বছরের বেশী সময় ধরে অপরিবর্তিত এবং এই দীর্ঘ সময় ধরে কেউ না একে চ্যালেঞ্জ করতে পেরেছে, না পেরেছে এর চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে।

এমন একটা শক্তি, এমন একটা আদর্শের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের কি করার আছে? কি করার আছে যখন আপনার প্রতিপক্ষ আপনার বন্দুকের নলের দিকে তাকিয়ে জান্নাত-কে দেখতে পায়? কি করার আছে এমন সব মানুষদের বিরুদ্ধে যারা মৃত্যুকে সাধারন মানুষ জীবনকে যতো ভালোবাসে তার চাইতে বেশী ভালোবাসে? তার চাইতেও বেশী কামনা করে? কিভাবে তাহলে অন্য কোন ফলাফল সম্ভব? কিভাবে সম্ভব ইসলাম-কে পরাজিত করা?

একারনেই ইসলামের বিজয় হবে কি না -এ প্রশ্ন করা অবান্তর। বরং প্রশ্ন করা উচিত কখন ইসলামের বিজয় হবে।

“তারা মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর আলো [দ্বীন ইসলাম-কে] নিভিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আল্লাহ তাঁর আলোকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে।“