JustPaste.it

আল্লাহর সাথে সততা – শহীদ ইমাম আবদুল্লাহ আজ্জাম (রহঃ)

“…বর্তমান যুগে ইসলামের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে যে যারা ইসলামের জন্য কাজ করছে, তাদের মধ্যে সৎ ও নিষ্ঠাবান (দ্বীনের প্রতি/আল্লাহর প্রতি) লোকের অভাব। তারপরেও গোপনে কাজ করে যাওয়া কিছু আল্লাহভীরু ও খাঁটি বান্দারা রয়েছেন যারা এ পৃথিবীতে যেন এসেছেনই জাতি সমূহকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য, অথৈ সাগরে পড়া জাহাজকে উদ্ধারের জন্য”

 
বস্তুত,১ সকল প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুলল আ’লামীনের জন্য। আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর কাছে আশ্রয় চাই এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের আত্মার অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই, আমাদের ভুল ত্রুটি থেকে আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে পথ দেখান, তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না, আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া মাবুদ হবার যোগ্যতা কারও নেই এবং মুহাম্মদ (صلىااللهعلیھوسلم) তাঁর বান্দা এবং রাসূল।
“হে বিশ্বাসীগণ, আল্লাহকে ভয় কর সেভাবে, যেভাবে তাঁকে ভয় করা উচিত এবং পরিপূর্ণ মুসলিম না হয়ে মৃত্যু বরণ করো না”২
“হে মানব সম্প্রদায় ! তোমার অভিভাবক প্রভুকে ভয় কর, যিনি তোমাকে এক ব্যক্তিসত্ত্বা থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তা থেকে তিনি তাঁর সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁদের দুজন থেকে [বৃক্ষের বীজের ন্যায়] অসংখ্য নর- নারী ইতস্ততঃ ছড়িয়ে দিয়েছেন। আল্লাহকে ভয় কর যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে [অধিকার] দাবী কর। এবং যে গর্ভ [তোমাকে ধারণ করে] তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হও। কারণ আল্লাহ সর্বদা তোমাদের পর্যবেক্ষণ করছেন”।৩
“হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন।যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে,সে অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে”।
হে বিশ্বাসীগণ, আপনারা যারা আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবী হিসেবে পেয়ে পরিতুষ্ট, জেনে রাখুন, আল্লাহ পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন:
“হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক”।৫

 


সত্যবাদিতার সম্পর্কে আত তাওবার এই আয়াতটি যা বলছে, তা হলো, আমাদের সকল বাহ্যিক কাজকর্ম যেন আমাদের মনের ভেতরে যা আছে তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়, অর্থাৎ কারও অন্তর যেন তার বাহ্যিক আচার আচরণের অনুরূপ থাকে, বা বলা যেতে পারে কারও চরিত্রের গোপন দিকের সাথে দৃশ্যমান দিকের যেন পার্থক্য না থাকে। ব্যাপারটি এমন যে, আমাদেরকে যদি কোন সত্যবাদী ব্যক্তির হৃদয় খুলে দেখার তৌফিক আল্লাহ দান করেন, তাহলে আমরা সেখানে তার বাহ্যিক চালচলন- কথাবার্তা- চিন্তাধারার সাথে তার মনের গোপন ও লুলায়িত অবস্থার কোন অমিল পাব না।৬
এমনটাই হবে সত্যবাদীদের অবস্থা।
আবার, তাদের কারও কারও গোপন ও লুলায়িত অবস্থা তাদের বাহ্যিক অবস্থা থেকেও আরও উত্তম। আর সালাফরা বলতেন : হে আল্লাহ, আমাদের গোপন অবস্থা, বাহ্যিক অবস্থা থেকে উত্তম করে দিন। আর আমাদের বাহ্যিক অবস্থা ভালো করে দিন।
আর পরাক্রমশালী ও মহান আল্লাহতা’আলার পক্ষ থেকে এক পুরষ্কার হচ্ছে যে, এই অন্তরগুলো সম্পর্ক গড়ছে আল্লাহর সাথে, যিনি এমনকি অদৃশ্যের খবরও জানেন।তাই তাদের গোপনীয় বিষয়গুলো খুব বেশিদিন গোপন থাকে না।একজন ব্যক্তিকে বাহির থেকে একরকম মনে হয়, কিন্তু তারা এর চাইতে একদম ভিন্ন কোন রূপ অন্তরে ধারণ করে বসে আছে।তবে যাই হোক, একজন ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বাস্তবতা একদম শেষ পর্যন্ত হুবহু একই না হয়ে থাকতে পারে না।তাই যদি কারও মনটা ভাল এবং সৎ থাকে, তবে আল্লাহ একসময় তার বাহ্যিক অবস্থাও তাই করে দেন।

 
তেমনিভাবে যদি কারও ভেতরের অবস্থা ভাল না হয়ে থাকে তবে আল্লাহতালা সেটিকেই তার বাহ্যিক অবস্থায় পরিণত করে দেবেন।কেউই কখনই কোন কিছু লুকিয়ে রাখতে পারে নি, আল্লাহ একসময় এটিকে প্রকাশ করবেনই, হতে পারে তা সে ভুলবশতঃ কিছু একটা বলে ফেলবে কিংবা তার চেহারার অভিব্যক্তি দেখে সেটা বোঝা যাবে।একটা মানুষের পক্ষে খুব বেশি সময় ধরে আত্মপ্রতারণা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব। আল্লাহ মানুষকে ঠিক এভাবেই সৃষ্টি করেছেন।এটাই আল্লাহতা’আলা কর্তৃক নির্ধারিত প্রাকৃতিক রীতি যে,একজন মানুষের অভন্ত্যরীণ ও বাহ্যিক অবস্থা একসময় না একসময়, হুবহু একই রকম হয়ে যায়।যদি এমন হয় যে কোন ব্যক্তি মিথ্যাচার, বেঈমানী, লোক- দেখানো ইত্যাদির আশ্রয় নিয়ে তার ভেতরের সত্যিকার অভিপ্রায় গোপন করে রেখেছে, এ অবস্থা খুব বেশি সময়ের জন্য স্থায়ী হবে না, কেননা আল্লাহতা’আলা এটাকে প্রাকৃতিক রীতি বানিয়ে দিয়েছেন যে মানুষ অবিরাম মিথ্যাচারের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকতে পারে না, অসীম সময়ের জন্য মেকি রূপ ধারন করে থাকতে পারে না।
প্রত্যেকটা হৃদয়ের জন্মগত বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে যে সে আল্লাহ প্রদত্ত ফিতরাতে ফিরে যেতে চায়।
“আমরা আল্লাহর রং গ্রহণ করেছি। আল্লাহর রং এর চাইতে উত্তম রং আর কার হতে পারে? আমরা তাঁরই এবাদত করি”।৭
“তুমি একনিষ্ঠ ভাবে নিজেকে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না”।৮
এবং এখান থেকে আমরা দেখতে পাই যে, সত্য ফিতরাত (স্বভাব) যা আল্লাহর আদেশে সৃষ্ট, তা মিথ্যা ও ধুর্ততাকে বজায় রাখতে পারে না এবং দীর্ঘ সময় ধরে মিথ্যার সাথে বসবাস করতে পারে না।এই কারণে দেখা যায়, যখন কোন আলিমের সত্যভাষণে বা পবিত্র কুর’আনের কোন আয়াত শ্রবণে কারো মন কম্পিত হয়, তখন এই ফিতরাত কেপেঁ ওঠে এবং আপনাই তার নিজ থেকে মনের অপবিত্রতাকে পরিষ্কার করে ফেলে, যা পরিপার্শ্ব থেকে তার মধ্যে প্রবেশ করেছিল এবং যা ধুর্ততা, মিথ্যা এবং প্রবঞ্চনা দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল এবং তার পর তা সত্যের সাথে উচ্চারিত হয়।
এবং এমন কতই না হয়েছে, অনেক ব্যক্তি আপনার সাথে অন্যায় করেছে, আপনার সাথে মিথ্যা বলেছে আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে এবং শেষ পর্যন্ত আপনার সত্যবাদিতা ও অসীম ধৈর্যের কারণে তাদের ফিতরাত তাদের চেতনাকে জাগিয়ে তুলবে এবং তাদের মধ্যে অনুতাপ, অপরাধবোধ ও অনুশোচনার অনুভূতি জাগ্রত করবে, যা হয়তো অশ্রু হয়ে ঝরে পড়বে আপনার হাতে অথবা আপনার কাছে সে তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে।এভাবেই, যে হৃদয় মিথ্যা ও প্রবঞ্চনার মাঝে দীর্ঘসময় নিপতিত থাকতে পারে না, সে একসময় উন্মুক্ত হবে। এ কারণেই আপনার কাজের কোনই মূল্য নেই যদি সেখানে সত্যতা না থাকে এবং আল্লাহ এমন কাজ গ্রহণ করেন না যা সত্যকে বা ইখলাসকে কেন্দ্র না করে হয়।
“…যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন- কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ?”৯
আল ফুদাইল বিন লিয়াদ১০, ‘‘যারা সংশোধনকারী ও তাদের কর্মে একাগ্র”১১, এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘‘একাগ্রতা ( ইখলাস) হল তা, যা রিয়া থেকে মুক্ত এবং সংশোধন ( শুদ্ধতা) হল তা, যা সত্যের অনুসরণ করে, আল্লাহর রাসূল (صلىااللهعلیھوسلم) এর সুন্নাহকে পরিপুর্ণ অনুসরণ করে এবং যা আল্লাহর বানী থেকে উৎসরিত। এবং সত্য ছাড়া আমাদের জন্য কোন কিছুই সহজ নয় এবং একে ছাড়া আমরা কোন পথে দৃঢ়ভাবে চলতে পারব না এবং আমরা বিভক্ত হয়ে পড়ব ”।

 
অনেক লোক মনোমুগ্ধকর বক্তৃতা দেয়, তাদের খুব অল্প কথায় ভাব প্রকাশের সম্যক জ্ঞান আছে এবং আপনারা হয়তো তাদের বলার ভঙ্গিতে মুগ্ধ হয়ে যান যদিও তাদের মুখের কথার সাথে অন্তরে যা আছে তার মিল নেই। তবুও লোকজন এইরকম লোকদের চারপাশে ভিড় জমায়। আমি বিশ্বাস করি এটা দীর্ঘসময় চলতে পারে না, যেহেতু কারণ মিথ্যার আবরণ একসময় খুলে যায় এবং মিথ্যা টিকে থাকতে পারে না।
“…অতএব, ফেনা তো শুকিয়ে খতম হয়ে যায় এবং যা মানুষের উপকারে আসে, তা জমিতে অবশিষ্ট থাকে। আল্লাহ এমনিভাবে দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা করেন”।১২
যা কিছু সত্য এবং সত্য থেকে এসেছে, তা ছাড়া পৃথিবীতে কোন কিছুই টিকে থাকতে পারে না।আর যা কিছু নোংরা, মিথ্যা এবং মন্দ কিছু, সেগুলোর কোনো সত্যিকারের শেকড় নেই যা গভীরভাবে মূল পর্যন্ত পৌঁছে।
“তুমি কি লক্ষ্য কর না, আল্লাহ তা’আলা কেমন উপমা বর্ণনা করেছেনঃ পবিত্রবাক্য হলো পবিত্র বৃক্ষের মত। তার শিকড় মজবুত এবং শাখা আকাশে উত্থিত।সে পালনকর্তার নির্দেশে অহরহ ফল দান করে। আল্লাহ মানুষের জন্যে দৃষ্টান্ত বর্ণণা করেন- যাতে তারা চিন্তা- ভাবনা করে।এবং নোংরা বাক্যের উদাহরণ হলো নোংরা বৃক্ষ। একে মাটির উপর থেকে উপড়ে নেয়া হয়েছে। এর কোন স্থিতি নেই”।১৩
সুতরাং মানুষের স্বভাবজাত প্রকৃতির সাথে একই সমান্তরালে চলার কোন ক্ষমতা ‘মন্দের’নেই, এমনকি মানুষের হৃদয়ে জেঁকে বসার সামর্থ্যটুকু পর্যন্ত এর নেই।মানুষের ফিতরাতে মন্দ বদ্ধমূল আসন গ্রহণ করতে পারে না। এটি যেন একটি ভিনদেশী শক্তি যা সাময়িকভাবে অবস্থান করে, অতঃপর দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যায়, যেমনিভাবে ত্বকে একটা ফোঁড়া বা গুটি দেখা দেয়ার পর তা খুব তাড়াতাড়িই চলে যায়।
কিন্তু যা সত্য, তা খুব দৃঢ় ও গভীরভাবে অন্তরে বদ্ধমূল থাকে- আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে সাক্ষাৎ পর্যন্ত। কারণ আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তায়ালা সত্য, এবং শুধুমাত্র সত্যের সহায়তাকারী, এবং সত্য ব্যতীত আর কিছুকেই বিজয়ী করেন না।এবং তাঁর দ্বীনই সেই সত্য :
“এটা এ কারণেও যে, আল্লাহই সত্য; আর তাঁর পরিবর্তে তারা যাকে ডাকে, তা অসত্য এবং আল্লাহই সবার উচ্চে, মহান”।১৪
“অতএব, ফেনা তো শুকিয়ে খতম হয়ে যায় এবং যা মানুষের উপকারে আসে, তা জমিতে অবশিষ্ট থাকে। আল্লাহ এমনিভাবে দৃষ্টান্ত সমূহ বর্ণনা করেন”।১৫

 
আগে যেমন বলছিলাম যে, মানুষ তাদের চারিদিকে জড়ো হবে এবং আমি নিশ্চিত ছিলাম যে ফেনা অবশিষ্ট থাকবে না। আমি দৃঢ় ছিলাম যে নোংরামি বেশিক্ষণ টিকবেনা, এবং আমি চারপাশের সবাইকে আশ্বস্ত করেছিলাম যে এগুলো ছিল কেবল ছোট বিস্ফোরণ যা শীঘ্রভাবে বিলীন হয়ে যাবে, এবং মহান এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ–বলেনঃ
“বলে দিনঃ অপবিত্র ও পবিত্র সমান নয়, যদিও অপবিত্রের প্রাচুর্য তোমাকে বিস্মিত করে। অতএব, হে বুদ্ধিমানগণ, আল্লাহকে ভয় কর-যাতে তোমরা মুক্তি পাও”।১৬
এবং সম্মান এর মালিক আল্লাহতা’আলা একে একে স্তুপ করেন খারাপ জিনিসগুলো, একটার উপর আরেকটা। তিনি সেগুলো ছুড়ে মারেন একের পর একের উপর, এবং রেখে দেন জাহান্নামে, এবং যারা খারাপের সহযোগী হয় তারাই শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ।
আর দিন যেতে থাকে, এবং আমি আমার অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তা নিশ্চিত হই, যা আশংকা করেছিলামঃ ফেনা কখনও টিকে থাকে না বা অবশিষ্ট থাকে না, এবং ক্ষীণ ও তুচ্ছ ব্যাপারগুলো অবশেষে ম্লান হয়ে যায়, এবং আকস্মিক বেগে ডান থেকে বাম পর্যন্ত অদৃশ্য হয়ে যায়।
এজন্য সালাফগন –( আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হন) – সত্যের ব্যাপারে তারা খুবই কঠোর ছিলেন, যদিও তা ছিল অপ্রীতিকর।১৭ তাঁরা অতন্ত্য সজাগ ছিলেন সত্যবাদী হওয়ার ব্যাপারে, যদিও তা বজায় রাখা ছিল খুবই গুরুভার ও কঠিন । তাঁরা তাদের বাহ্যিক ও আভন্ত্যরীন চরিত্রের একই মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে খুব খুঁতখুঁতে ছিলেন, যদিও এটি অত্যন্ত দুরূহ কাজ গুলোর একটি ছিল । তাদের মধ্যে একজন ছিলেন এমন, যিনি এটা নিশ্চিত করতেন যেন তিনি এমন কিছু কাজ করতে পারেন যা শুধু তার এবং আল্লাহর মাঝেই থাকবে এবং তা বাদে আর কেউ জানবে না। তাই, যদি কখনো লোকজন তার এই ইবাদাতের কথা টের পেয়ে যেত, তখন তিনি শীঘ্রই ঐ এলাকা ত্যাগ করতেন যেন তিনি আবারো সকলের থেকে গোপন থাকতে পারেন।

 
ইমাম আহমাদ১৮- আল্লাহ তার উপর রহমত নাযিল করেন,যখন তিনি রাস্তা দিয়ে হাঁটতেন, তিনি শ্রমিকদের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যেতেন, যেন কেউ তাঁর দিকে আলাদা করে সম্মানের সাথে অঙ্গুলিনির্দেশ করতে না পারে, যেন মানুষজন মনে করে তিনিও আরেকজন শ্রমিক, আর তাই তারা তার দিকে সম্মানভরে তাকে চিহ্নিত না করে।১৯ সালাফদের মধ্যে একজন ছিলেন, যখন তিনি যুদ্ধে অংশ নিতেন, নিজেকে ছদ্ধবেশের আড়ালে রাখতেন, আর যদি শেষ পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণ গনিমতের মাল লাভ করতো, তাহলে তিনি নিজের পরিচয় গোপন করে গণিমতের মাল ত্যাগ করতেন, যেন মানুষ বুঝতে না পারে কে তা লাভ করেছে।২০

 
যেদিন মাসলামাহ বিন ‘আবদ আল- মালিক২১ দীর্ঘস্থায়ী দূর্গ অবরোধের সময়টাতে, একজন নাম- না- জানা ব্যক্তি ছিল, আপনারা কি সেই ব্যক্তির গল্পগর্ত খননের কাহিনীটা জানেন ? সেই রাতে একজন মুজাহিদ ধীর গতিতে হামাগুড়ি দিয়ে বের হল, দূর্গের দেয়ালটা পরিমাপ করল, রক্ষীদেরকে আক্রমণ করে তাদের সবাইকে মেরে ফেলল, আর দূর্গের দেয়ালে একটা গর্ত তৈরি করল যেটার মধ্য দিয়ে ইসলামিক সেনারা প্রবেশ করে দূর্গ দখল করে ফেলল। তো, মাসলামাহ কয়েকবার ডাক দিলেন,
“তোমাদের মধ্যে কে গর্ত খুঁড়েছিল?” কেউ এগিয়ে আসল না। এক রাত্রিতে, আপাদমস্তক মোড়া ঘোড়সওয়ারি এক সৈন্য মাসলামাহর তাঁবুতে ঢুকে বলল, “আপনি কি জানতে চান কে গর্তটা খুঁড়েছিল?”
মাসলামাহ উত্তর দিলঃ “হ্যাঁ।”
সৈন্যটি বলল, “আমি আপনাকে এক শর্তে বলব তা হলো আপনি কারো কাছে তার নাম বলতে পারবেন না, আর আপনি তাকে তার কাজের জন্য কোন পুরস্কার বা প্রতিদান দিতে পারবেন না।”
সৈন্যটি বলল, “আমিই সে যে গর্ত খনন করেছে,” এই বলে সে নিজের নাম প্রকাশ না করেই সেখান থেকে দ্রুত চলে গেল।
সেদিনের পর থেকে যতবারই মাসলামাহ দু’আ করার জন্য কিবলার দিকে মুখ করেছেন, তিনি বলতেনঃ “হে আল্লাহ, পুনরুত্থান দিবসে আমাকে তার সাথে জড়ো করো যে গর্ত খনন করেছিল।”২২

 
এই রকম আন্তরিক মানুষগুলো আর তাদের সুউচ্চ চেতনাগুলো ইসলামিক সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছে। আগেরদিনে যখন শাসকশ্রেণী তাদের আকাঙ্খার দাসে পরিণত হয়ে পড়ে, একমাত্র যে জিনিষটি তখন ইসলামিক সমাজকে সংরক্ষণ করেছে,যে জিনিষটি পৃথিবীকে থর থর করে কেঁপে ওঠা থেকে নিরাপদ রেখেছে, জনমানবকে বিচ্ছিন্ন আর বিভক্ত হয়ে পড়া থেকে বাঁচিয়েছে তা হচ্ছে উম্মাহর জীবনে ঘটে আসা এই চমৎকার ঘটনাগুলোই, কখনও কম, কখনও বা অনেক, যেগুলোর প্রতি আজও মুসলিমদের হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত।ইসলামিক সমাজ বলতে আমরা যে যা বুঝি তা বিনির্মাণ করতে তার অত্যাবশ্যকীয় স্তম্ভে আন্তরিকতা, সততা, সত্যনিষ্ঠতা, ইখলাস- এই বৈশিষ্ট্যগুলো থাকতে হবে। কেননা সিমেন্টের পিলার সংখ্যায় মাত্র চারটি হতে পারে, তবে সেগুলোই একটি বিশাল একশ তলার উঁচু বিল্ডিলংকে কে ধরে রাখতে সক্ষম।
আর যখনই সমাজে আন্তরিক এবং সত্যনিষ্ট মানুষগুলোর অভাব দেখা দিয়েছে, আর তাদের সেই সব সুউচ্চ উদাহরণের অভাব দেখা গেছে যাদের সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তারা পরহেযগার, তাদের মন পবিত্র এবং তারা থাকে লোকচক্ষুর অন্তরালে২৩, যখন তাদের উদাহারণগুলো ধীরে ধীরে বিলীন হতে শুরু করে, তখন আপনি দেখতে পাবেন সমাজ নিজেকে কুড়ে কুড়ে খেতে শুরু করে, ধ্বংস হয়ে যায়, নিজেকে ছিঁড়ে ছিন্ন- বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে থাকে।

 
বর্তমান যুগে তাই ইসলামের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে যে, যারা ইসলামের জন্য কাজ করছে, তাদের মধ্যে সৎ ও দীনের প্রতি নিষ্ঠাবান লোকের অভাব। তারপরেও লোকচক্ষুর অন্তরালে কাজ করে যাওয়া কিছু আল্লাহভীরু ও খাঁটি বান্দারা রয়েছেন যারা এ পৃথিবীতে যেন এসেছেনই জাতি সমূহকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য, অথৈ সাগরে পড়া
জাহাজকে উদ্ধারের জন্য। যখন একজন সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তির হাতে জাহাজের হাল যেয়ে পড়ে, তা ইসলামের বেলাভূমিতে নিরাপদে চলতে থাকে, আস্থা এবং ক্ষমতার সাথে। সেই সত্যনিষ্ঠ মুজাহিদ যার নাম জানা যায়নি, যিনি এইসব ব্যক্তিদের কথা বর্ণণা করছেন এভাবে,“…সেইসব ব্যক্তিবর্গ, যখন তারা উপস্থিত থকে কেউ তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করে না, আর যখন অনুপস্থিত থাকে, কেউ তাদের কথা ভুলে যায় না…”২৪ তাদের মুখের রেখাগুলো যেন রণাঙ্গনের ধুলিতে অস্পষ্ট হয়ে যেতে থাকে,অস্ত্রের ঝনঝনানি, প্লেন আর ট্যাঙ্কের ছুটে আসা মিসাইলের শব্দে পরিপূর্ণ হয়ে থাকে তাদের কান, তাই তারা কোন নিরর্থক সস্তা কথা শুনতে পায় না।গীবত, পরনিন্দা, গুপ্তচরগিরি, কুৎসা, গুজব এসব শোনার মত সময় তাদের থাকে না। কারণ তাদের ব্যস্ততা কোন ছোটখাট বিষয়ে নয়, তাদের চিন্তানিবিদ্ধ থাকে অনেক বড় বড় বিষয়ে, ব্যাঙ্গের ঘ্যাঙ্গর ঘ্যাঙ্গর কিংবা কাকের কা- কা ডাক শোনার মত সময় তাদের নেই !

 
আর রাসূলুল্লাহ (صلىااللهعلیھوسلم) আবদুল্লাহ বিন ‘আমর বিন আল- ‘আস২৫ কে বলেন, যা হাসান হাদীসে‘সুনান’২৬ হাদীস সংকলকদের একজনের কাছ থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (صلىااللهعلیھوسلم) একদিন আমাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন আমরা আমাদের পুরোনো ভেঙ্গে পড়া খুপরি ঘরটা মেরামত করছিলাম। তাই তিনি (صلىااللهعلیھوسلم) বললেনঃ “আমার মনে হয় এটা থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পড়ে আছে”, তোমরা তোমাদের কাঠের কুঁড়েঘর বাঁধানোতে ব্যস্ত হয়ে আছ? নিশ্চয়ই সেই বিষয় – আখিরাতের বিষয় – এর চাইতে আরো বেশি জরুরি!
আর এখান থেকেই, আমরা দেখি পুরো সমাজটাই আখিরাতকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ছিল। সর্বমুহূর্তে আল্লাহর উপস্থিতির চেতনাটা তাদের দৃষ্টিকে সবকিছু থেকে আলাদা রাখত। তারা এই দুনিয়াকে দেখেছিলেন অন্যরকম এক দৃষ্টিকোণ থেকে! আর তাদের কাছে এই দুনিয়াটা কতোই না ছোট্ট আর তুচ্ছ যারা অবস্থান করছে আকাশের সর্বোচ্চ স্থানে! আপনি কখনো প্লেইনে চড়েছেন? প্লেইন যখন মাটিতে থাকে তখন এর আশেপাশের জায়গাটাকে বিশাল মনে হয়, অথচ যেই না আপনি এয়ারপোর্টের মাটি ছাড়বেন, লম্বা লম্বা বাড়িগুলো সব অদৃশ্য হয়ে যাবে, মাটিটাও একসময় অস্পষ্ট হয়ে যাবে, এখন আপনি আকাশের পথে যাত্রা করছেন, আর পৌঁছে গেছেন আকাশের সর্বোচ্চ সীমানায়, সবকিছুকে ফেলে আপনি চলে এসেছেন। আপনার সাথে এমন কিছু নেই যা আপনাকে নিচের মাটির সাথে বেঁধে রাখবে বা আবদ্ধ করে রাখবে। সালাফগণ ছিলেন এমন একটা অবস্থানে, আর এমন অবস্থানেই রয়েছেন সত্যবাদীগণ, আর এখানেই অবস্থান করছেন ন্যায়পরায়ণগণ, দুনিয়ার প্রতি তাদের কোন টান ছিল না।
আর আল্লাহ, – মহাশক্তিধর এবং মহিমান্বিত – তার প্রজ্ঞা, রহমত, আর দয়ায়, প্রত্যেকের সাথে তার অন্তঃকরণের গভীরতা যতটা সেই অনুযায়ী- ই আচরণ করেন। তাদের মনের মধ্যে কী আছে তার উপর ভিত্তি করে এবং তাদের নিয়্যতের উপর ভিত্তি করে আচরণ করেন। আর সকল প্রশংসা আমার রবের! আপনি ফসল হিসেবে তাই পাবেন যা আপনি বপন করেছেন! সুন্নাহ আমাদেরকে এটাই শিক্ষা দেয়, আর কুরআনও আমাদেরকে আগে থেকে এটাই শিক্ষা দিয়ে আসছেঃ
“সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো”২৭
“আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না যারা আল্লাহকে ভুলে যায়, ফলে তিনি তাদের ভুলিয়ে দিয়ে থাকেন তাদের নিজেদের সম্বন্ধে…”২৮
এবং কাফেরেরা চক্রান্ত করেছে আর আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ হচ্ছেন সর্বোত্তম কুশলী”২৯
“অতএব, দেখ তাদের চক্রান্তের পরিনাম, আমি অবশ্যই তাদেরকে এবং তাদের সম্প্রদায়কে নাস্তানাবুদ করে দিয়েছি। এইতো তাদের বাড়িঘর- তাদের অবিশ্বাসের কারণে জনশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে। নিশ্চয় এতে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন”৩০
একজন লোক ইবন ‘আব্বাসকে৩১ বললেনঃ “আমরা তাওরাতে পেয়েছি যদি একজন তার ভাইকে ফেলার জন্য গর্ত খুঁড়ে, আল্লাহ এর পরিবর্তে তাকেই গর্তে পতিত করেন।” তখন, ইবন ‘আব্বাস জবাবে বলেনঃ “কুরআনেও বলা হয়েছেঃ
“. . . কুচক্র চক্রান্তকারীদেরকেই ঘিরে ধরে…”৩২ ৩৩

প্রথমে অনিষ্টের প্রভাব অনিষ্টকারীর উপর যেয়েই পড়েঃ
“…আমি তাদের প্রতি কোন জুলুম করিনি, কিন্তু তারাই নিজেদের উপর জুলুম করত”৩৪
অন্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে তা ষড়যন্ত্রকারীর উপর যেয়ে পড়েঃ
“অতএব, দেখ তাদের চক্রান্তের পরিনাম, আমি অবশ্যই তাদেরকে এবং তাদের সম্প্রদায়কে নাস্তানাবুদ করে দিয়েছি”৩৫
যখন আপনি অন্যের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবেন, আল্লাহ আপনার বিরুদ্ধে পরিকল্পনা করবেনঃ
“তারা ভীষণ চক্রান্ত করে, আর আমিও কৌশল করি”৩৬
সুতরাং কখনো ভাববেন না, যা আপনি আপনার মনের ভেতরে লুকিয়ে রেখেছেন –তা যদিও বা আপনি মানুষের কাছ থেকে কিছু সময়ের জন্য গোপন রাখতে পারেন,–যিনি সকল অদৃশ্যমান সম্পর্কে অবহিত, যিনি নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন অন্তরসমূহ আর তাদের চাবিসমূহ, তার কাছে কোনকিছুই গোপন রাখতে পারবেন না। না – আমার ভাই ও বোনেরা – কখনোই নিজের মাঝে এমন কিছু রাখবেন না যা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করবে না, আর কখনোই এমন নিয়্যত করেন না যা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। কখনোই না, কখনোই না!

 
“নিশ্চয়ই, সমস্ত কাজ নিয়্যতের উপর নির্ভর করে, এবং প্রত্যেক মানুষ তার নিয়্যত অনুসারেই বিনিময় পাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসূলের (صلىااللهعلیھوسلم) জন্য হিজরত করেছে, তার হিজরত হবে আল্লাহ ও তার রাসূলের (صلىااللهعلیھوسلم) জন্য। আর যে দুনিয়ার কোন পার্থিব বিষয়ের জন্য হিজরত করলো, অথবা কোন নারীকে বিবাহের উদ্দেশ্যে, তার হিজরত সেই হিসেবেই বিবেচিত হবে যে কারণে সে হিজরত করলো”।৩৭
আমার সবসময় মনে পড়ে একজন ভাই এর উত্তর আমাকে সাংঘাতিক নাঁড়া দিয়েছিল যখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলামঃ “তুমি কি এই দেশের কাউকে বিয়ে করবে না?” সে উত্তরে বলেছিলঃ “আমি কোনদিনও বিয়ে করব না, যেন আমি আমার হিজরত দুনিয়ার কোন বস্তুর সাথে মিলিয়ে না ফেলি।”

 
হে ভাইবোনেরা…
সমাজ পরিবর্তনে সবচেয়ে মাহাত্ম্যপূর্ণ মানুষ তিন প্রকারঃ স্কলার (আলেমগণ), দানশীল উদারব্যক্তি, এবং মুজাহিদ। এই তিন ধরণের মানুষ- ই হচ্ছে সমাজের নিউক্লিয়াস (কেন্দ্র)। সমাজ এদেরকে ঘিরেই গড়ে ওঠে, আর তারাই সমাজের মূল ভিত্তি, কেননা তারাই একে উন্নীত রেখেছে এবং দৃঢ় শক্তি আর প্রভাবের সাথে সহায় দিয়ে চলছে। একারণে, যদি এই তিন ধরণের মানুষ সত্যবাদী এবং অকৃত্রিম হয়–অর্থাৎ উলেমা, দানশীল ব্যক্তি এবং মুজাহিদীন – তখন পুরো সমাজটাই হবে খাঁটি এবং ঐক্যবদ্ধ। অন্যদিকে, যদি তাদের নিয়্যতে খাঁদ থাকে, তখন পুরো সমাজটাই আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়। এর কারণ হলো মানুষের হৃদয় হচ্ছে ফলের মত, ফুলের মতঃ যদি এই ফুলগুলো সতেজ থাকে, তাহলে তারা একটা মিষ্টি নির্মল গন্ধ ছড়াবে, আর যদি হৃদয়টা যদি কলুষিত হয়ে যায় –পঁচে যাওয়া ফলের মত – তাহলে তা থেকে শুধু পঁচা গন্ধই বের হবে যা নাকের কাছে এসে ভিড় করে আর বিতৃষ্ণার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে।

 
তাই যখন মানুষের অন্তর কলুষিত হয়ে যায়, এর কলুষ থেকে নিঃসৃত গন্ধ বের হয় যা পুরো সমাজের জন্যই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, আর এই অধঃপতিত অবস্থা প্রকাশিত হয় কুৎসা, পরনিন্দা, গীবত, গুজব রটানো, মানুষকে নিয়ে সবচেয়ে বাজে ধারণা পোষণ করা- এসবের মাধ্যমে। আর এসবই সমাজটাকে বিদ্বেষপূর্ণ আর বিশৃংখল করে দিচ্ছে, ব্যাপারটা এমন যে সবাই সবার নাক চেপে ধরে রেখেছে যেন তাকে তার প্রতিবেশী বা আত্মীয়ের কাছ থেকে আসা পচা দুর্গন্ধ সহ্য করতে না হয় !

 
রাসূল ( সাঃ) বিশেষভাবে সতর্ক করে দিয়েছেন তিন শ্রেণীর লোকদেরকে, এটা বর্ণিত আছে সহীহ’আইনে, যে, “তিন ব্যক্তি সবার আগে জাহান্নামে প্রবেশ করবে”, এই তিন শ্রেণী হচ্ছে, “উলেমা, দানশীল ব্যক্তি এবং মুজাহিদ”। এরাই হবে জাহান্নামের সর্বপ্রথম জ্বালানী। মুজাহিদ ! ইয়া আল্লাহ! একজন মুজাহিদ, যিনি তার রক্ত বিসর্জন দেন, আর এর পরেও সে কি করে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হতে পারে ? দানশীল ব্যক্তি, যিনি তার পকেটে একটা ফুটো পয়সার মায়া না করে মানুষকে তার অর্থ বিলিয়ে দিচ্ছে, অন্যের ঋণ পরিশোধ করে দিচ্ছে, প্রতিনিয়ত অন্যের প্রয়োজন পূরণ করছে, তার চারপাশের মানুষগুলোর দিকে তাদের কঠিন সময়গুলোতে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে, হ্যা, তাকেই আগুন গ্রাস করবে ! তাকেই জাহান্নামের আগুনের জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করবে এবং জাহান্নামের আগুনকে প্রজ্জ্বলিত রাখবে, হ্যা এই কথাই বলা হয়েছে সহীহ’আইনে।
সর্বপ্রথম যে তিন ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করানো হবে তারা হলঃ উলেমা, মুজাহিদীন এবং একজন উদার দানশীল ব্যক্তি। আলিম ব্যক্তিকে আল্লাহ ডেকে জিজ্ঞেস করবেন, ”তুমি দুনিয়াতে কি করেছ?”, সে বলবে, “আমি আপনার নিমিত্তে ইলম অর্জন করেছি এবং আপনার সন্তুষ্টির জন্য সেটা ছড়িয়ে দিয়েছি”। তখন তাকে বলা হবে, “তুমি মিথ্যা বলছ, তুমি ইলম অর্জন করেছ এজন্য যেন লোকে তোমার ব্যাপারে বলে বেড়ায় তুমি একজন আলিম, তুমি যা চেয়েছ তাই হয়েছে, তুমি যা পাওয়ার তা দুনিয়াতেই পেয়েছ”। এরপর তাকে জাহান্নামের আগুনে ছুড়েঁ ফেলা হবে। এরপর দানশীল ব্যক্তিকে সামনে নিয়ে আসা হবে এবং আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করবেন, “তুমি দুনিয়াতে কি করেছ?”, সে বলবে, “আমি হালাল উপায়ে অর্থ উপার্জন করেছি এবং আপনার খাতিরে সে অর্থ ব্যয় করেছি”। তাকে বলা হবে, “তুমি মিথ্যা বলেছ, তুমি দান খয়রাত করেছ এজন্য যে যেন লোকে বলে মহৎ উদার ব্যক্তি রূপে আখ্যা দেয়, তুমি যা চেয়েছ তাই হয়েছে, তুমি যা পাওয়ার তা দুনিয়াতেই পেয়েছ”। এরপর তাকে জাহান্নামে ছুড়ে ফেলতে আদেশ করা হবে। তৃতীয় ব্যক্তিকে এরপর প্রশ্ন করা হবে, “তুমি কি করেছ?” সে জবাবে বলবে, “আমি আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করেছি যতক্ষণ না আমি মারা যাই”। তাকে বলা হবে, “তুমি মিথ্যে বলেছ, তুমি জিহাদ করেছ এইজন্য যে লোকে তোমাকে সাহসী বলে আখ্যা দেয়, তুমি যা চেয়েছ তাই হয়েছে, তুমি যা পাওয়ার তা দুনিয়াতেই পেয়েছ”, এরপর তাকে জাহান্নামে ছুড়ে ফেলতে আদেশ দেয়া হবে।
মু’আবিয়া (রাঃ) যখন এই হাদীসটি আবু হুরায়রা থেকে শুনলেন, তার দাড়িঁ অশ্রুসিক্ত হবার আগ পর্যন্ত তিনি কেদেঁ গেলেন, এবং তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। জ্ঞান ফিরে পাবার পর তিনি বললেন,
“আল্লাহর রাসূল (সাঃ) সত্য বলেছেন, কারণ আল্লাহ বলছেন, যে ব্যক্তি পার্থিব জীবন ও তার চাকচিক্যই কামনা করে, হয় আমি তাদের দুনিয়াতেই তাদের আমলের প্রতিফল ভোগ করিয়ে দেব এবং তাতে তাদের প্রতি কিছুমাত্র কমতি করা হয় না। এরাই হল সেসব লোক আখেরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া কিছু নেই। তারা এখানে যা কিছু করেছিল সবই বরবাদ করেছে; আর যা কিছু উপার্জন করেছিল, সবই বিনষ্ট হল। [সূরা হূদঃ১৫,১৬]৩৮-৩৯
আমি যখন মু’আবিয়ার এই গল্পটা জানতে পারি, তখন থেকে এমন কখনও হয় নি যে এই আয়াতটি আমি পড়েছি আর আমার অন্তরটা কেপেঁ ওঠেনি। আমি যতবার কুর’আন পড়তাম, এই আয়াতটিই যেন আমার জন্য ছিল সবচেয়ে ভীতিকর আয়াত। মানুষের এমন হতে পারে যে তারা ক্ষণিকের জন্য আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কে বিস্মৃত হয়েছে, বা আল্লাহর হক্বের প্রতি পাত্তা দেয় নি, বা আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের চেষ্টা করে নি, কিংবা আল্লাহকে সেভাবে মহিমান্বিত করেনি যেমনটা আল্লাহর প্রাপ্য, এর ফলাফল স্বরুপ সে নিজের অজান্তে লোকদের সাথে এমন আচরণ করতে শুরু করবে যেন সমস্ত ক্ষমতা এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তাদের হাতে। সর্বশক্তিমানের ক্ষমতা সম্পর্কে যখন মানুষ বিস্মৃত হতে শুরু করে তখনই সে অন্যদের উপর কর্তৃত্ব স্থাপনের চেষ্টা করে, তাদের দমন করতে চায়, তাদের সবকিছু বলপূর্বক কেড়ে নিতে চায় এবং চায় সত্যবাদী এবং ন্যায়নিষ্ঠ মানুষদেরকে পৃথিবীর বুক থেকে সরিয়ে দিতে। কিন্তু, সত্য, সত্য ছাড়া অন্য কিছুকেই মেনে নেয় না, এবং খাঁটি, খাঁটি ছাড়া কিছুই গ্রহণ করে নাঃ “বস্তুত আল্লাহ হচ্ছেন সত্য এবং তিনি সত্য ছাড়া কোন কিছু গ্রহণ করেন না”৪০ , তিনি সকল মিথ্যাকে নিভিয়ে দেবেন, শুধু তার নূরকে প্রজ্জ্বলিত রাখবেন, যদিও সেটা কাফির- মুশরিক- জালিম এবং ফাসিক্বরা অপছন্দ করে।

 
ইসলামি ইতিহাস থেকে সাম্প্রতিক এবং প্রাচীন দুটি উদাহরণ দিচ্ছি।
প্রথম দৃষ্টান্তটি হচ্ছে শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যার৪১ ( রহিমাহুল্লাহ) । চার মাযহাবের আলেমদের মতের বিরুদ্ধে তিনি ফতোয়া দেন যে একসাথে তিনবার তালাক দিলে সেটি একটি তালাক বলেই গণ্য হবে তিনটি নয়। তাঁর ছাত্র ইমাম ইবন আল কাইয়্যিম ( রহিমাহুল্লাহ) ও একই ফতোয়া দেন। এজন্য তাঁদেরকে একটি উটের পিঠে বসিয়ে সারা শহর ঘোরানো হয়। আর নির্বোধ লোকেরা তাদের নিয়ে উপহাস করে, বাচ্চারা তাদের পিছে পিছে যেতে থাকে আর হাততালি দিয়ে হাসি- ঠাট্টা করে তাঁদেরকে নানাভাবে অপমান করে। তারপর ইমাম ইবন তাইমিয়্যাকে ( রহিমাহুল্লাহ) কারারুদ্ধ করা হয়। তিনি তাঁর ‘আল ফাতওয়া’ গ্রন্থে বলেন, ” কারাগারে যাওয়ার আগে আমি কিছু পরিবারকে সাহায্য করতাম। কারারুদ্ধ হওয়ার পর এই অস্বচ্ছল পরিবারগুলোর এই সাহায্য বন্ধ হয়ে যায়। একারণে আমি খুবই কষ্টে ছিলাম। কিন্তু পরে আমার কাছে সেই পরিবারগুলো থেকে খবর আসে, ” আপনি এখনো সশরীরে এসে আমাদেরকে আগের মতই সাহায্য দিয়ে যান।” অর্থাৎ আমাদের জ্বিন ভাইয়েরা এগিয়ে এসে আমাদের কাজের দায়িত্ব নেয়। যদি পৃথিবীতে ভাল কাজ না করার জন্য একজন ও না থাকে তবুও মু’মিন জ্বিন এবং ফেরেশতারা মু’মিনদের সাথে থাকবেই।
আর ইমাম ইবন তাইমিয়্যার ( রহিমাহুল্লাহ) সেই বিখ্যাত উক্তিটি না বললেই নয়- ” আমার শত্রুরা আমার কি করতে পারে? আমার জান্নাত হচ্ছে আমার হৃদয়ে এবং তা আমাকে ছেড়ে যায় না। কারাগার জীবন হচ্ছে আল্লাহর সাথে আমার একান্ত সাক্ষাৎ , আমার মৃত্যু হচ্ছে শাহাদাহ আর নির্বাসন হচ্ছে আমার পর্যটন।
যারা আমাকে বন্দি করেছে তাদেরকে যদি এই কারাগারের সমতুল্য স্বর্ণ দেয়া হয় তবুও তা তাদের এত উপকারে আসবেনা যতটা এই কারাগারের মাধ্যমে আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন।” অতঃপর ইমাম ইবন তাইমিয়্যা ( রহিমাহুল্লাহ) মৃত্যুবরণ করেন, তাঁর কিছু লেখা কারাগার থেকে উদ্ধার করা হয় কারণ একটা সময় পর তাকে আর কাগজ কলম দেওয়া হতো না। তাই তিনি কারাগারের দেয়াল আর মেঝে থেকে নুড়ি- পাথর নিয়ে দেয়ালে লিখতেন। পরে এই লেখা গুলো লিপিবদ্ধ করা হয় কিন্তু তাঁর বই গুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়। যালেম শাসকরা মনে করেছিল তারা এই আলেমের জ্ঞানের আলোকে নিভিয়ে ফেলতে পেরেছিল এবং তাঁর শিক্ষাকে মানুষের কাছে পৌঁছানো আটকাতে পেরেছিল।

 
এরপর অনেক সময় অতিবাহিত হল। প্রায় সাড়ে ছয় শতাব্দী। আল্লাহ আরব উপদ্বীপে তেল আবিষ্কার করালেন। যারা এই তেল আবিষ্কার করে তাদের আলেমরা আলেম হয়ে উঠেন ইমাম ইবন তাইমিয়্যার ( রহিমাহুল্লাহ) বই পড়ে। আর তেল থেকে প্রাপ্ত বিপুল অর্থ দিয়ে ইমাম ইবন তাইমিয়্যার ( রহিমাহুল্লাহ) লেখা প্রতিটা শব্দ ছাপিয়ে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে দেয়া হয়। তাই আজ হয়তো এমন কোন লাইব্রেরী খুঁজেই পাওয়া যাবে না যেখানে ওনার এক বা একাধিক বই নেই। আর আজকের বিশ্বে ইমাম ইবন তাইমিয়্যার ( রহিমাহুল্লাহ) চেয়ে সর্বজনবিদিত আলেম আর কেই বা আছেন? ছয় শতাব্দী পর! এটাই হচ্ছে ইখলাস আর সত্যবাদিতার সেই অতুলনীয় মিশেল যার কারণে আল্লাহ্‌ জান্নাতের সুসংবাদ হিসাবে দুনিয়াতে ওনার স্মরণকে স্মরণীয় এবং প্রশংসিত করে তুলেছেন।
আর দ্বিতীয় দৃষ্টান্তটি হচ্ছে সায়্যিদ কুতুব৪২( রহিমাহুল্লাহ) এর।
তিনি আমাদেরই সময়ের একজন মানুষ এবং তাকে এই দুনিয়ার সবকিছুর প্রলোভনই দেখানো হয়েছিল। কারারুদ্ধ অবস্থায় তাকে মন্ত্রী, সোশ্যালিস্ট ইউনিয়নের সচিব, প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং প্রেস এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুপারভাইজার প্রভৃতি লোভনীয় পদ গ্রহণের প্রস্তাব দেয়া হয়। বিভিন্ন রোগাক্রান্ত হওয়ায় কারাগারে তাঁর অধিকাংশ সময়ই কাটে কারা- হাসপাতালে। আর যখনি ইসলামপন্থী কোন কর্মকর্তা তাঁর সাথে দেখা করতে চাইতেন তখন দেখা করার জন্য ওনাকে( সায়্যিদ কুতুব) সুই ঘন্টা গরম পানিতে গোসল করতে হত। সায়্যিদ কুতুবকে ( রহিমাহুল্লাহ) ফাঁসি দেয়া হয়। তাঁর ফাঁসির আগে তিনি তাঁর বিখ্যাত উক্তিটি পুনরাবৃত্তি করেন- নিশ্চয়ই যে তর্জনী সলাতে আল্লাহ্‌র একত্ববাদের সাক্ষ্য দেয় তা দিয়ে যালেম শাসককে স্বীকৃতি দিয়ে একটি অক্ষর লিখাও তার জন্য অবমাননাকর”৪৩
অতঃপর সায়্যিদ কুতুব ( রহিমাহুল্লাহ) তাঁর রবের সাথে মিলিত হতে এগিয়ে যান আর সেই মুহূর্তটা ছিল তামাশা এবং করুণ অশ্রুর এক মিশেল। কারণ তাদের তামাশা ষোলআনা পূর্ণ করতে সেই জালেম সরকার তাদের একজন আলেমকে তাঁর সাথে দেখা করতে ফাঁসির মঞ্চে পাঠান এই বলেন, “দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়ার একটি অংশ হিসাবে আপনি বলুন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ্‌ ছাড়া ইবাদাতের যোগ্য কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র রাসূল”। “তখন সায়্যিদ কুতুব ( রহিমাহুল্লাহ) তার দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুমিও শেষ পর্যন্ত নাটকের ষোলকলা পূর্ণ করতে এলে? তুমিও? তুমি এই কালেমা দিয়ে জীবিকা উপার্জন কর আর আমি এর জন্য ফাঁসিতে ঝুলতে যাচ্ছি!”।
তারপর সায়্যিদ কুতুব( রহিমাহুল্লাহ) কে কারাগারের গভীর প্রকোষ্ঠে ফাঁসি দেয়া হয়, কেউ জানেনা কোথায় তাকে কবর দেয়া হয়েছে। ওনার এক বন্ধু প্রায়শই আমার কাছে অভিযোগের সুরে বলতেন, “যদি জানতাম তাঁকে কোথায় কবর দেয়া হয়েছে তাহলে অবশ্যই দেখতে যেতাম”। আমি তাকে বলি, ” মানবজাতির রব জানেন তাঁর কবর কোথায় আছে। তুমি যেনে কি করবে?”৪৪
সায়্যিদ কুতুব( রহিমাহুল্লাহ) তাঁর রবের কাছে চলে গেলেন। তাঁর জীবদ্দশায় “ফি যিলালিল কুরআন” শুধুমাত্র একবার ছাপা হয় আর যে বছর তাঁকে হত্যা করা হয় সে বছর ছাপা হয় সাতবার। সাতবার! মজার বিষয় হচ্ছে বৈরুতের খ্রিস্টান ছাপাখানা গুলো যখনই দেউলিয়া হবার উপক্রম হত তখন তারা একে অপরকে পরামর্শ দিত, “ফি যিলাল ছাপাও, তোমার ব্যবসা আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে”।৪৫
আসলেই ইখলাস এবং সত্যবাদিতা দুনিয়া আখিরাত উভয় জায়গাতেই রহস্যময় উপায়ে সাফল্য এনে দেয়। তাই আল্লাহর প্রতি ইখলাস এবং সত্যবাদিতার ব্যাপারে সতর্ক হও! ষড়যন্ত্র এবং ধূর্ততা করার ক্ষেত্রে সতর্ক হও! নিজেকে নিয়ে আত্মগরিমা অনুভব করে এই কথা বলে বোসো না-
“আমি এই ধন আমার নিজস্ব জ্ঞানদ্বারা প্রাপ্ত হয়েছি”।৪৬

 
শয়তানের সেই ওয়াসওয়াসার ব্যাপারে সতর্ক হও যখন সে তোমার শিরায় শিরায় আত্মতুষ্টি, খ্যাতির মোহ আর মুসলিমদের ক্ষতি করার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়। তুমি ভাবছ তুমি এই লোকটির সামনে লোক দেখানো কাজ করছো। আসলে তা তুমি আল্লাহর সামনে করছো। যেই লোকটিকে তুমি ধোঁকা দিচ্ছ তাঁকে আল্লাহ স্বয়ং রক্ষা করছেন, “যে আমার আওলিয়ার শত্রু হয় আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলাম”।৪৭
তুমি কি সারা বিশ্বজাহানের প্রভুর সাথে খোলা ময়দানে যুদ্ধের সময় লোক দেখানো যুদ্ধ করতে পারবে? তুমি তো যাকে ধোঁকা দিচ্ছ তারও বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারবেনা।
” যদি তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে সে সমস্তই আল্লাহর আয়ত্তে রয়েছে”।৪৮
” যৎসামান্য কষ্ট দেয়া ছাড়া তারা তোমাদের কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি তারা তোমাদের সাথে লড়াই করে, তাহলে তারা পশ্চাদপসরণ করবে। অতঃপর তাদের সাহায্য করা হবে না”।৪৯

 
ভাইয়েরা. . .
যদি তুমি একজন দা’ য়ী হও, তবে আল্লাহর সাথে সত্যবাদী হও. . .
যদি তুমি একজন লেখক হও, তবে আল্লাহর সাথে সত্যবাদী হও. . .
যদি তুমি একজন দারোয়ান হও, তবে আল্লাহর সাথে সত্যবাদী হও. . .
যদি তুমি একজন মুজাহিদ হও, তবে আল্লাহর সাথে সত্যবাদী হও. . .
যদি তুমি একজন কর্মচারী হও, তবে আল্লাহর সাথে সত্যবাদী হও. . .
” নিশ্চয়ই আল্লাহ কারো প্রাপ্য হক বিন্দু-বিসর্গও রাখেন না; আর যদি তা সৎকর্ম হয়, তবে তাকে দ্বিগুণ করে দেন এবং নিজের পক্ষ থেকে বিপুল সওয়াব দান করেন”।৫০


পাদটীকা
১। ‘আত- তারবিয়্যাহ ওয়াল জিহাদিয়্যাহ ওয়ালবিনা’ (১/৩০- ৪০) নামক লেখকের লেকচার সমগ্র থেকে এই বইটি অনুবাদ করা হয়েছে।পাদটীকা সমূহ সব অʞবাদকের সংযোজিত।
২। আলে ইমরান : ১০২
৩। নিসা : ০১
৪। আল আহযাব : ৭০- ৭১
৫। আত- তাওবা: ১১৯
৬। উমর বিন আব্দুল আজিজ বলেন : কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুত্তাকী হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার চরিত্র থেকে সেই সব কথা ও কাজকে বিতাড়িত করছে যা প্রকাশ হয়ে পড়লে সে দুনিয়া অথবা আখিরাতে অপদস্থ হবে। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, একজন ইবাদাতকারী কখন তাকওয়ার সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছে? তিনি উত্তর দিলেন, যদি সে তার হৃদয়ের সকল চিন্তা ও আকাঙ্খা একটি প্লেটে নিয়ে সমস্ত বাজার ঘুরে, কিন্তু এতে যা আছে তা নিয়ে লজ্জা বোধ না করে (তখন)। [মিন আখলাক- আস সালাফ : ৫৬পৃঃ]
৭। বাকারাহ : ১৩৮
৮। আর রুম : ৩০
৯। মূলক : ২
১০। তিনি হচ্ছেন আবু আলি ফুদাইল বিন ইয়্যাদ বিন মাসউদ বিন বিশর আত তামিমি আল খুরাসানি। তিনি উজবেকিস্তানের সমরকন্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি তার যৌবন কালে ডাকাত ছিলেন, অতঃপর কোন এক বাড়িতে ডাকাতির পূর্ব মুহুর্তে কুর’আনের কিছু আয়াত শুনে তিনি তওবা করে এ পথ ছেড়ে দেন। তিনি একজন বিখ্যাত ও বিশ্বাসযোগ্য রাবী (যিনি হাদীস বর্ণনা করেন)। তিনি ১৮৭হি. তে মারা যান।
১১। তাফসীর আল বাঘাওয়ী (৪/৩৬৯)এবং তিনি আরও বলেন : যদি কোন কাজ সততার সাথে কিন্তু ভুল ভাবে করা হয়, তা গ্রহণ করা হবে না। যদি এটি শুদ্ধ হয় কিন্তু সততার অভাব দেখা যায়, গ্রহণ করা হবে না। অতএব, এটি ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণ করা হবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত এটি সততা ও শুদ্ধতার মিশেলে করা হয়। [জামি আল- উলুম ওয়াল- হাকিম : ১/৭২]
১২। রাদ: ১৭
১৩। ইব্রাহীম : ২৪- ২৬
১৪।আল হাজ্জ : ৬২
১৫।রাদ: ১৭
১৬।মায়েদাঃ ১০০
১৭। যেমন আবু যার আল গিফারি এর এই হাদিসটি -, যেখানে তিনি বলেছেন, “আমার ঘনিষ্ট বন্ধু আমাকে ৭ টি বিষয়ে আদেশ দিয়েছেনঃ দরিদ্রদের ভালবাসতে ও তাদের সাথে ঘনিষ্ট হতে; যারা আমার থেকে নিচে আছে তাদের দিকে দৃষ্টি দিতে এবং আমার থেকে উপরের লোকদের দিকে না তাকাতে; সম্পর্ক বন্ধন বজায় রাখতে যদিও তারা তা ভংগ করে; কারও কাছে কিছু না চাইতে; সর্বদা সত্য বলতে যদিও তা অপ্রিয় হয়; আল্লাহর পরিবর্তে কোন নিন্দাকারীর নিন্দাকে ভয় না করতে; এবং ‘আল্লাহর ব্যতিত অন্য কোন শক্তি অথবা ক্ষমতা নাই’বেশী বেশী বলতে, এমনভাবে যেন এটা সিংহাসনের নিচের সম্পদ থেকে আসে।”
এই হাদিসটিকে আহমেদ শাকির ‘উমদাত তাফসীরে (১/৭০০), আলবানী সহীহ আত- তারগীব ওয়া তারহীব ( ২২৩৩,২৩২০, ২৫২৫ এবং ২৮৬৮) এবং মিশকাত আল মাসাবী হতে এবং মুক্ববিল আল ওয়াদ’ঈআস- সহীহ আল মুসনাদে সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন।
১৮। তিনি হলেন আবু ‘আবদুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মদ বিন হাম্বাল আশ- শায়বানি। তাঁর জন্ম ১৬৪ হিজরিতে এবং তিনি ছিলেন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আহ এর অধিনায়কদের একজন। কুরআনের সৃষ্টি নিয়ে তাঁর মতামতের জন্য তাকে অত্যাচার করা হয় এবং কারারুদ্ধ করা হয়। তিনি বড় হয়েছেন জ্ঞানের প্রতি আসক্তি নিয়ে, এবং জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে প্রচুর সফর করেছেন। তিনি ‘মুসনাদ’র সংকলক, যেখানে রয়েছে ৩০০০০ এর ও বেশি আহাদীস। তিনি ২৪১ হিজরিতে বাগদাদে মৃতুǪবরণ করেন।
১৯।“সিয়ারআ’লামআন- নুবালা’”; ৯/৪৬৫
২০।‘আবদুহ বিন সুলায়মান বর্ণনা করেনঃ “আমরা ইবন আল মুবারাকের সাথে রোমানদের ভূমিতে অভিযানে বের হই এবং শত্রু পক্ষ আমাদের দিকে এগিয়ে আসে। যখন দুই দলের সৈন্যরা মিলিত হলো, শত্রুদলের এক লোক বের হয়ে দ্বন্দযুদ্ধের আহবান করলো। তখন, মুসলিমদের মধ্য থেকে একজন বের হয়ে আসল আর তাকে মেরে ফেলল। এরপর শত্রুপক্ষের আরেক লোক বের হয়ে আবারো দ্বন্দযুদ্ধের জন্য আহবান করলো। তখন মুসলিমদের মধ্যে থেকে একজন বের হয়ে আসল, যার মুখ পরনের জামা দিয়ে ঢাকা ছিল, তারা এক ঘন্টা ধরে যুদ্ধ করল, অবশেষে তাকে আঘাত করে মেরে ফেলল। মানুষজন দেখতে আসল কে এই ব্যক্তি আর আমি যেয়ে তার মুখের কাপড় টান দিয়ে খুলে ফেললাম এবং দেখতে পেলাম তিনি ছিলেন ‘আবদুল্লাহ বিন আল- মুবারাক।” [‘তারিখবাগদাদ’; ১/১৬৭]
২১।তিনি ছিলেন মাসলামাহ বিন ‘আবদ আল- মালিক বিন মারওয়ান বিন আল- হাকাম, উমায়্যিদ খলিফার পুত্র। রোমানদের বিরুদ্ধে তাঁর বহু অবস্থানের বহু স্মরণীয় ঘটনা রয়েছে। তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি ১০০ হিজরিতে কন্সটানটিনোপল দখল করেন, এবং তিনি ইরাক ও আরমেনিয়া শাসন করেন। ১০৯ হিজরিতে তিনি তুরস্ক ও সিরিয়া দখল করেন। তিনি ১২১ হিজরিতে মারা যান। দেখুন ‘সিয়ার আন- নুবালা’’ (৬/৬৮- ৬৯)
২২। ইবন কুতায়বাহ থেকে বর্ণিত ‘উয়ুনআল-আকবার’গ্রন্থে (পৃঃ১১৭)
২৩। তিনি এখানে একটা হাদীসের কথা উল্লেখ করছেন যা ইবন মাজাহ দ্বারা বর্ণিত হয়েছে (৩৯৮৯) এই শব্দগুলো দ্বারাঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ ভালবাসেন বিশুদ্ধ, ধর্মভীরু এবং গোপন ব্যক্তিদেরকে, যখন তারা উপস্থিত থাকে, কেউ লক্ষ্য করে না, আর যখন অনুপস্থিত থাকে, কেউ তাদের মনে করে না।” হাদীসটির বর্ণনাসুত্রে ‘আবদুল্লাহ বিন লাহি’আহ এর উপস্থিতির কারণে হাদীসটি দুর্বল। (দেখুন ‘আস- সিলসিলাহআদ- দা’ইফাহ;২৯৭৫)। যদিও ‘সহীহ মুসলিম ’হাদীসে এমন একটা হাদীস আছে (২৯৬৫): “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দাকে ভালোবাসেন যে ধর্মভীরু, স্বাবলম্বী, এবং গোপন থাকে।”
২৪।আগের টীকাটি দেখুন
২৫।তিনি হলেন ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আমর বিন আল- কুরাইশ। মক্কার লোকজনের মাঝে তিনিই এমন একজন সাহাবা ছিলেন যিনি ইবাদাতের জন্য নিবিড়ভাবে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। ইসলাম আবির্ভাবের পূর্বেই তিনি কিভাবে লিখতে হয় তা জানতেন এবং তিনি তাঁর পিতার আগে ইসলাম গ্রহণ করেন। রাসূল (صلىااللهعلیھوسلم)তাকে তাঁর থেকে শুনে সবকিছু লিখে রাখার অনুমতি দিয়েছিলেন। তাঁর দায়িত্বে ৭০০ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। জীবনের শেষ দিকে তিনি অন্ধ হয়ে যান।
২৬।আবু দাঊদ থেকে বর্ণিত (৫২৩৫ ও ৫২৩৬) এবং ইবন মাজাহ (৪১৬০), আলবানি এটাকে সহীহ বলে আখ্যা দেন।
২৭।(আল বাক্বারাঃ ১৫২)
২৮।(আল হাশরঃ ১৯)
২৯।(আল ইমরানঃ ৫৪)
৩০।(আন- নামল; ৫১- ৫২)
৩১।তিনি হলেন ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আব্বাস বিন ‘আবদআল- মুত্তালিব, আল্লাহর রাসূলের (صلىااللهعلیھوسلم) চাচাত ভাই। তিনি ইসলামের একজন অন্যতম স্কলার ছিলেন এবং তিনি কুরআনের বিশদ ব্যখ্যা করেন। মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন, তিনি তাদের অন্তরভুক্ত ছিলেন যারা প্রচুর পরিমাণে হাদীস বর্ণনা করেছিলেন। তাঁর দায়িত্বে ১৬০০ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। জীবনের শেষ দিকে তাঁর চোখ অন্ধ হয়ে যায়। তিনি তা’ইফে বাস করতেন এবং মৃত্যুবরণ করেন ৬৮ হিজরিতে।
৩২।(ফাতির; ৪৩)
৩৩।‘তাফসীরআল- কাশাফ’; ২/৮৪
৩৪।(আন- নাহল; ১১৮)
৩৫।(আন- নামল; ৫১)
৩৬।(আত- ত্বরিক; ১৫- ১৬)
৩৭।বর্ণিত হয়েছে যাদের দ্বারাঃ আল বুখারী (১, ৫৪, ৩৫৩৯, ৩৮৯৮, ৫০৭০, ৬৬৮৯ এবং ৬৯৫৩), মুসলিম (১৯০৭), আহমাদ (১/২৫ এবং ৪৩), আবু দাঊদ (২২০১), আত- তিরমিযী (১৬৪৭), আন- নাসাঈ (১/৫৮- ৬০ এবং ৬/১৫৮), মালিক (৯৮৩), ইবন হিব্বান (৩৮৮ ও ৩৮৯), ইবন জারুদ (৬৪), আত- তাহাওয়ি (৩/৯৬), আদ- দারাক্বুতনী (১০/৫০), আল- বায়হাক্বী (১/৪১), আবু নু’আইম (৮/৪২), আল খাতিব আল- বাগদাদী (৪/২৪৪ ও ৯/৩৪৬) এবং আল বাঘাওয়ি (১ ও ২০৬)
৩৮। সূরা হুদঃ ১৫- ১৬
৩৯। মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)এর ঘটনাটি যে হাদিসের ভাষ্যে বর্ণিত আছে তা আত- তিরমিযি এবং ইবন হিব্বান বর্ণনা করেছেন এবং ৩৪ নং পাদটীকায় তা উল্লেখ করা হয়েছে।
৪০। মুসলিম(১০১৫), আত- তিরমিযি(২৯৮৯), আহমাদ(২/৩২৮), আদ- দারিমি(২/৩০০)
৪১।তিনি হচ্ছেন বিখ্যাত ইমাম এবং আলেম তাক্বি আদ- দীন আবুল- আব্বাস আহমাদ বিন আব্দুলল হালিম বিন আব্দিস সালাম বিন তাইমিয়্যাহ আল- হাররানি আল- হাম্বালি। তিনি ৬৬১ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন এবং দামাস্কাসে বসবাস করেন। তিনি যুদ্ধবিদ্যা এবং ধর্মীয় শাস্ত্র উভয়টিতেই পারদর্শিতা লাভ করেন এবং আলেম হিসাবে প্রসিদ্ধ হন। তিনি কুরআনিক গবেষণার বিভিন্ন শাখায় এবং ফিক্বহ শাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তাঁর কিছু ফতোয়ার কারণে তাকে নির্যাতন এবং কারাবন্দি করা হয় এবং তিনি কারাগারেই ৭২৮ হিজরিতে মৃত্যুবরণ করেন।
৪২। তিনি হলেন ইসলামের দা’য়ী এবং বিংশ শতাব্দীর মুজাহিদ সায়্যিদ কুতুব বিন ইব্রাহিম। তিনি মিশরের আসিয়ুত এ জন্মগ্রহণ করেন। কলেজ পাস করার পর তাঁকে আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। তিনি ইসলাম পরিপন্থী প্রতিটি কাজের কঠোর সমালোচক হিসাবে ফিরে আসেন। তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে নির্যাতিত এবং বন্দি হন। তাঁকে ১৩৮৭ হিজরিতে কারাগারেই ফাঁসি দেয়া হয়।
৪৩।দেখুন ‘সায়্যিদ কুতুবঃ মিন আল- মিলাদ ইলা আল- ইসতিশশা’দ(পৃষ্ঠা ৬১-৬২,৪৬২,৪৭৪,৪৮১)
৪৪। জীবনের কঠিনতম সময়েও – যখন তাঁকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল – এই বীর খাঁটি আত্মসম্মান আর শৌর্য দেখিয়ে তাঁর ঘাতকদেরকে বলেন,”তোমাদের প্রতিটি জাহেলিয়াত ঘৃণ্য। এমনকি তোমাদের ফাঁসির দড়িও ঘৃণ্য” [সুন্না’আত আল হায়াহ; পৃষ্ঠা ৬০]
৪৫।ফি যিলালের ব্যাপারে আব্দুল্লাহ আযযাম(রহিমাহুল্লাহ) বলেন।”যে কুরআনকে তেমনি পরিস্কার ভাবে বুঝতে চায় যেভাবে এটি নাযিল হয়েছিল, যে
এই যুদ্ধটি- যা সে লড়ছে- সেভাবে লড়তে চায় যেভাবে প্রথমবার লড়া হয়েছিল- তাকে অবশ্যই ‘ফি যিলালিল কুরআন’ পড়তে হবে। সায়্যিদ কুতুবের তাফসির ‘ফি যিলালিল কুরআন’ না পড়লে সে বিভিন্ন কারণে এই যুদ্ধের গভীরতা বুঝতে পারবেনা। তার মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে যিনি এই বইটি লিখেছেন তিনি ঘটনাগুলো ব্যাখ্যা করছিলেন এই সংঘাতের মধ্যে থাকাকালীন সময়েই। তিনি এই শব্দগুলো লিখেছেন চোখের সামনে ফাঁসির দড়ির গিঁট বাঁধা দেখতে দেখতে। তাই তিনি এই বইটি লিখেছিলেন সকল ভয় থেকে মুক্ত হয়ে, দুনিয়াবি সকল বোঝা চাকরি, স্ত্রী, সন্তান, আত্মীয়তা থেকে মুক্ত হয়ে,কোন দায়বন্ধনই তখন তাকে দুনিয়ার দিকে টেনে ধরে রাখছিলনা। তিনি লিখছিলেন দুনিয়াকে বিদায় বলতে বলতে আর যারাই আল- বাক্বারা, আলে ইমরান, আন-নিসা, আল-মায়িদাহ, আল আ’রাফ এর তাফসির পড়েছেন তারা সেই মুহূর্তেই বুঝতে পারেন যে এই লেখাটি যিনি লিখেছেন তিনি এই দুনিয়ার বন্ধনে আবদ্ধ কেউ নন। বরং তিনি এই শব্দগুলোর মাধ্যমে দুনিয়াকে বিদায় জানাচ্ছিলেন শেষ বারের মত হাত নেড়ে…”[আত- তারবিয়্যাহ আল- জিহাদিয়্যা ওয়াল বিনা’; ৩/৬৭]
৪৬। আল কাসাস ৭৮
৪৭। আল- বুখারি(৬৫০২), আবু নুয়া’ইম(১/৪), আল- বায়হাক্বি(৩/৩৪৬ এবং ১০/২১৯), আল- বাগাওয়ী(১২৪৮)
৪৮। আলে ইমরানঃ১২০
৪৯। আলে ইমরানঃ১১১
৫০।আন- নিসাঃ৪০